Sunday, May 3, 2020

বালিতে কদিন(শেষ)

বালি ঝেড়ে এগোতে লাগলাম। পুচকে একটা দ্বীপ, হাতে গোনা কয়েকটা মোটে থাকার জায়গা, সূর্যাস্তের দিকে এগোতে এগোতে তেষ্টা পেলে একটা পানীয় নিয়ে বসে পড়ো কোনো গদি মোড়া তক্তপোষে। তাকিয়ায় ভর দিয়ে চুমুক দাও পানপাত্রে, সূর্য তখন কম্পিউটার শাট ডাউন করার চিন্তা ভাবনা করছে। ফের এগোও, আস্তে আস্তে জলে রঙগোলা শুরু হবে, সমুদ্রে জোয়ারের জল বাড়বে, এদিক ওদিক হুটোপুটি করবে কোনো স্থানীয় বালক আর বহিরাগত বালিকা।তুমিবপাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাবে, দেখবে সমুদ্রে প্রোথিত দোলনায় লাল রঙের জল এসে দুলে যাচ্ছে। অন্ধকার নেমে আসবে ক্রমে, তুমি দ্বীপের প্রান্তে এসে দাঁড়াবে, প্রাণ ভরে শ্বাস নেবে তারপর ধীরে সুস্থে ফিরতি পথ ধরবে।  বালিতে হাঁটতে হাঁটতে হাসির ঝটকায় অন্ধকার দূরে হটবে, আস্তানার কাছাকাছি এসে খেয়াল হবে আরে দাঁড়াও মোবাইলে টর্চটাই জ্বালাই না হয়!

ঘরে ঢুকে এক ঢোক জল খাচ্ছি এমন সময় দকটা ডাক শোনা গেলো, "গেইকো গেইকো" বলে। ঘরের মধ্যে একটা গেকো বসে থাকা ভালো লাগার কথা না। খুব মোলায়েম করে বললাম, ভাই গেকো তিনজন মানেই ভীড়, তুই যা বাবা। তাতে তিনি আরো গম্ভীর হয়ে "গেইকো গেইকো" বললেন। ভারী রাগ হয়ে গেলো, ইয়ার্কি পায়া, চারদিকে খুব স্প্রে করে দিয়েছি। স্প্রে চলাকালীন কোনো আর আওয়াজ নেই, তবে গন্ধে আমারই হাঁচি শুরু হয়ে গেল এই যা। অ্যালার্জি আছে কিনা, সে থাক, গেকো বদটা গেছে এই ভালো৷ উহ,  ভারী অসুবিধে হচ্ছে কিন্তু, দরজাটা খুলেই দিই। হাঁচতে হাঁচতে যেই দরজা খুলছি, অমনি, ফের বদটা "গেকো গেকো" বলে হেসে উঠল।  হতভাগা!
এ দ্বীপে আলোর ব্যবস্থা খুবই সামান্য, টিমটিম করে আলো জ্বলা, গেকো ডাকা ঘরের থেকে বাইরে বেরিয়ে অন্ধকার গায়ে জড়ানো ঢের আরামের। এদিন চোদ্দই ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে আবার মোমবাতি জ্বালিয়ে গেলো ডিনার টেবিলে। মোমবাতির আলোয়, এক আকাশ তারা মাথায় নিয়ে সমুদ্রের পাশে বসে রাতের খাওয়া শেষ করে গেকোর অভ্যর্থনা শুনতে ঘরে পা বাড়ালাম।



আবদুলের আসার কথা দশটায়, আমাদের বোট ছাড়ার কথা সাড়ে দশটা নাগাদ। আবদুল এলো যখন তখনো আমরা আরাম করে ব্রেকফাস্ট করছি। আমি চারবেলা খাবারের মধ্যে ব্রেকফাস্টটাই বেশী ভালোবাসি, অনেকে আবার ডিনারটা ভালোবাসে, তাড়াহুড়ো না করে খেতে পারে বলে। জেটিতে এসে বসে আছি তো আছিই, বোট আর আসেনা। এক ফরাসী দম্পতির সাথে আলাপ হল, এবারে নাকি তাদের অল্প সময় হাতে ছিল, তাই এক মাসের ছুটিতে থাইল্যান্ড আর ইন্দোনেশিয়া ঘুরতে এসেছেন। এর আগে ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা ইতুয়াদি ঘুরেছেন চার মাস এক এক জায়গায় ছিলেন। এক মাস শর্ট ট্যুর হ্যাঁ! আমি আট রাত নদিনের প্ল্যান করেছিলাম বলে কত লোক বলেছিল "আঅাট রাঅাঅাঅাত, নঅঅঅ দিইইইন"!  এভাবেই বাঁচা উচিত, আমাদের সব কিছু বড় বেশী একরকম বোরিং ছক,  একটা বয়স অব্দি সব্বাইকে ইস্কুল কলেজ করতেই হবে, একই রকম কটা চাকরি আছে করো, তারপর একইরকমভাবে কলুর বলদের মতো যৌবন খরচা করে বুড়ো হয়ে ভাবো তুমি কত দায়িত্বশীল ছিল। তুমি আসলে দায়িত্বশীল যতটা না তার থেকে বেশী, অন্যকিছু ভাবতে না পারা পাবলিক, আন্ডাবাচ্ছা প্রতিপালনের বাইরে। যাই হোক মন খারাপ করে আর কি হবে,  দুটো অপশন হয়, হয় বদলাও নয় মেনে নাও......





জেটিতে নামার আগে আগে একজন অদ্ভুত মানুষ অদ্ভুত একটা বন্দুক তাগ করে কী সব বলল, তাতে খালি করোনা নামটা বোঝা গেলো। পরে বোঝা গেলো, থার্মাল গান দিয়ে সবার টেম্পারেচার চেক করছে করোনা চেকিং এর পার্ট হিসেবে। করোনা তখনো হাসাহাসির বিষয়, তাই আমরাও হাসলাম এসব দেখে। জেটিতে পৌঁছে একটা ক্যাওস হল, একটা ছোট জায়গায় সব ব্যাগ নামাচ্ছে সেখান থেকে ওই গাব্দা ব্যাগ তুলে ভীড় কেটে বেরোনো মাত্রই দালালে থিক থিক করছে,,চারশো হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপি দিয়ে পৌঁছে দেবে। আমরা এসব কাটিয়ে এগোচ্ছি এমন সময় একজন আমাদের টিকিট দেখে বলল হ্যাঁ, " ঘন্টা চার পাঁচ লাগবে। তুমি ওদের সাথে চাইলে যেতে পারো", এক ট্যাক্সি ড্রাইভারের দিকে দেখিয়ে। আমরা প্রায় বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম এই লোকটাই আমাদের এজেন্টের ড্রাইভার। কী মনে হতে বললাম,  না তুমি আমার টিকিট দাও, আমি দেখছি। তারপর অফিসে গিয়ে খোঁজ নিতে বলে আধ ঘন্টা চল্লিশ মিনিট লাগবে তোমাদের হোটেল অব্দি, একটু দাঁড়াও গাড়ি ছাড়বে!

দালাল চক্রের হাত থেকে বেরিয়ে আরাম করে গাড়িতে বসা গেল। একটা বুড়ি ফলওয়ালি কাটা ফল বিক্রী করছিল, মায়া লাগছিল দেখে কিন্তু কাটা ফল খেলে আমায় নিয়ে অন্য কেউআয়া করবে। দুপুরেই পৌঁছে যাচ্ছি যেহেতু ভেবেছিলাম মাউন্ট বাটুর যাবো। তারপর কাটিয়ে দিয়েছি। স্রেফ ভিউ এর জন্যে এতটা জার্নির মানেই নেই, কারন আলাশে মেঘ আছে ভালোই, কিছুই দেখা যাবে না। বরং আমাদের হোটেলে একটা গরীবের ইনফিনিটি পুল আছে সেখানে যাওয়া যাক।গরীবের ইনফিনিটি হলেও  বেশ ভালোই, পুল থেকে সমুদ্র বা উপত্যকা দেখা যায়না হয়ত, কিন্তু দূরের নারকেল সুপারি গাছের পাঁচিলটাওদিব্যি লাগে। ছায়া ছায়া, মেঘ মেঘ একটা বিকেল।























সন্ধ্যে নামার খানিক আগে লোকাল বাজারের দিকে যাব বলে বেরোলাম, তাছাড়া উবুদের রাস্তায় হাঁটতেও ভালো লাগে। বড় রাস্তা পেরিয়ে এদিক ওদিক করতে করতে একটা গলিতে ঢুকেই দেখি সে এক ব্যাপার বটে। পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রচুর লোক, স্ট্রীট শপ। প্রচুর বার্গেইনিং, প্রচুর ডাকাডাকি, মান অভিমান, রাগ একদম চেনা সব যেন, খালি বিদেশী ভাষায়। মোহরের একটা সাপের ঝাঁপির মতো ব্যাগের শখ হয়েছিল, সাপের ঝাঁপি কেন পছন্দ তার উত্তর আমার জানা নেই। কত রকমের যে কান্ড হয় বিয়ে করলে জানা যায় বটে! ওর বাবা আর আমার বাবার জন্যে দুটো সারং কেনা হল খালি। সাপের ঝাঁপিটা মনোমতো পাওয়া গেল না। 





ততক্ষনে আলো জ্বলতে শুরু করেছে, এরাও ঝাঁপ গোটাতে শুরু করেছে। আমাদের আবার এ গলি  সে গলি ঘোরা শুরু। রেস্তোরাঁ গুলো জমজমাট হতে শুরু করেছে। হঠাৎ মনে হল, হাঁসের মাংস খাওয়া যাক, বালীর অন্যতম জনপ্রিয় খাবার। বেশ বেশ। বেবেক বেনগীল বলে একটা রেস্তোরাঁর নাম শুনেছিলাম।  রিভিউও চমৎকার,  সুতরাং চালাও ম্যাপ বেবেক বেনগীল।

অনেকটা হেঁটে ক্লান্ত হয়ে রেস্তোরাঁর কাছে এসে আবিষ্কার করলাম এটা আমাদের দুদিন আগের হোটেলের একদম কাছে! নিজেদের ছাগলামিকে ভেংচি কেটে ভিতরে যাওয়া গেলো। আলো আঁধারি রেস্তোরাঁটা বালিনিজ ধাঁচেই সুসজ্জিত। উঁচু মাচায় তাকিয়া ফরাসে ঠেস দিয়ে অর্ডার দিন।  বালিনিজ একটা মিউজিক ভাসবে এদিক সেদিক।  ঠিক কী নাম ছিল আমাদের হাঁসের আইটেমটার মনে নেই, তবে যা এসেছিল তা হল হাঁসের ঝলসানো মাংস, ভাত, ঝাল মিষ্টি নানানরকম সস/চাটনি,  ফল ।

হাঁসের মাংস আর ভাত

আইস্ক্রীম খেয়ে মুখ মুছে  যখন হাঁটা লাগালাম হোটেলের রাস্তায় বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। গুগল ম্যাপ দেখে হাঁটতে হাঁটতে মাংকি ফরেস্টের পাশের রাস্তায় পৌঁছলাম। অনেকটা বড় জঙ্গলাকীর্ণ বলে এই জায়গাটায় আলো নেই একদম। অন্ধকারে লোকও নেই কোনো। একটু গা ছমছম করেনি বলব না। হনহন করে মোবাইলের আলোয় পথ দেখে হেঁটে চলেছি। মাঝে মাঝে হুশহুশ করে একটা দুটো স্কুটি চলে যাচ্ছে। খানিকক্ষণ হাঁটার পর একটা আলো জ্বলা রাস্তায় এসে পৌঁছলাম। লোকজন এখানেও বেশী নেই, দোকানপাট এরা সন্ধ্যের মুখেই বন্ধ করে দেয়, খালি একটা ইন্ডিয়া মার্ট ছিল সেখান থেকেই জল কেনা হল। গুগল বলছে এখান থেকে চারশো মিটার,  আর দেখাচ্ছে উল্টো দিকের একটা গলি। গলিটায় একটা দুটো লোক চলাচল আছে, কিন্তু সব কিছু বন্ধ হওয়ায় অদ্ভুত নিস্তব্ধতা জায়গাটায়। রাস্তাটা চড়াই হচ্ছে ক্রমে, সৌভাগ্যের বিষয় গুগলে রাস্তা কম হচ্ছে ক্রমে। দুজনে নানান রকম কথা বলছি কিন্তু রাস্তাটা নির্জন হয়ে যে অস্বস্তি লাগছে সেটা বলছিনা।জুতোয় ফোস্কা, ভরপেট খাওয়া আর বিদেশী অচেনা নির্জন রাস্তায় দুজনের পাড়ি দেওয়া পরস্পরকে কিচ্ছু না বলে ভরসা দিয়ে, এই ছবিটাই হয়ত সারাজীবনের পাথেয় হয়ে যাবে।

আজ সকালে আরাম করে ব্রেকফাস্ট করে দেরী বেরোনো। টুকটাক উবুদ ঘোরা আজ। কাল হাঁটতে হাঁটতে গুগল ম্যাপ যেখানে পৌঁছে দিল সেটা অন্য একটা হোটেল! বোঝো! যাইহোক তারপর তো পৌঁছনো গেলো। হোটেলটা পাহাড়ের নানান ধাপে ছড়ানো, গাছপালায় ঢাকা, জোনাকির আওয়াজ মনে হয় সভ্যতা থেকে কত দূরে আছি! সকালের রোদে অবশ্য তেমন কিছু মনে হয়না। আজ শুরুতে যাব তির্তা এম্পুল। বালিনিজদের কাছে খুবই পবিত্র এই মন্দির।   এই মন্দিরটায় স্নান করা যায়। পুন্যের দরকার আমাদের কারোরই ছিলনা,কিন্তু ওই পাথরের সিংহের মুখ থেকে জল বেরোবে, আর সেই মুখে মাথা পাততে ভারী আগ্রহ হল! অন্যজনের হয়নি,আমিই তাই সবুজ লুঙি পরে সিংহের মুখে মাথা পাতলাম।


গুনুং কায়ুই নামের আরেকটা মন্দিরে হাজির হওয়া গেল। এটায় আবার এইই বড় বড় উঁচু উঁচু সিঁড়ি। এক বুড়ি নারকেল বিকোচ্ছে উঁচু একটা চাতালে। তাই খানিক খাওয়া গেল। মন্দির গুলোয় পুজো সকালেই হয়ে মনে হয়, বেশী পূজারি দেখিনি কখনই। চাল সিঁদুর লেপা পাথর।  গোয়া গাজাহ তেও তাই। এইসব মন্দিরগুলো কত কত হাজার বছরের পুরোনো, পাথর কেটে কোথাও যক্ষীর মুখ, কোথাও হাতির, কোথাও জটায়ুর। যারা বানিয়েছিল তারা সব মরে হেজে গেছে তাদের কাজগুলো হাজার বছর পরেও টিকে আছে।  কেমন ছিল সেসময়ের মানুষ গুলো? তাদের রোজকার জীবন, তাদের পরিবারের সাথে সময় কাটানো, অবসর বিনোদন কে জানে! ইতিহাসে তো সব কিছু লেখা থাকে না। এই গোয়া গাজাহ মন্দিরের স্থপতি হাতির মুখ বানাতে বানাতে একটা শুঁড় বানিয়ে কি নিজের ছেলে মেয়েকে দেয়নি? সেই গল্প কই?  টাইম ট্রাভেল না করতে পারলে জানার উপায় নেই।


কেবল পেটে বড় ভুখ৷ না খেলে নাই কোনো সুখ....সুতরাং অগাসকে বলা হল কোথাও এওটা থামাও তুমি, জানি এটা ওয়ান ওয়ে, আমরা ঘুরে চলে আসবো ঠিক। নাম্বার তো আছেই। আসলে আমরা চাইছিলাম আজ পায়ে হেঁটে নগর পরিক্রমার মতো করতে দিনের আলোয়। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে খুঁজে পাওয়া একটা ছোট্ট কিন্তু বালিনিজ এক রেস্তোরাঁ মিলে গেল।যেমনটা আমরা চাইছিলাম, বেশীরভাগ লোকাল লোক,অথবা অনেক দিন ধরে থাবা গেড়ে বসে থাকা বিদেশী। তেমন হাইফাই ভাব নেই কিন্তু খুবই চালু দোকান। ছবি দেখে দেখে অর্ডার দেওয়া হল। দাম কম, পরিমানেও কম কিন্তু স্বাদ চমৎকার।





এখানে একটা জায়গা আছে,  চাম্পুহান রিজ বলে। সেটায় বিকেলবেলা হাঁটতে যাব এটা ভেবে ছিলাম৷ রিজটা চমৎকার,  বড় বড় ঘাস, গাছপালার মাঝে একটা হাইকিং ট্রেইল। সেই ধফে ধরে হেঁটে যাও, তাড়া নেই কিছু, মাঝখানে দেখবে একটা ছোট্ট বাঁশের বাড়ি, পাশে দোলনা, ভুট্টাপোড়া বিক্রী হচ্ছে। ইচ্ছে হলে থামো, খাও, ফের এগোও। বাঁ দিক ডান দিক দুদিকেই ঘাস জমির পরেও পাহাড়টা ঢালু হয়ে খাদের সৃষ্টি করেছে। ওপাড়ে পাহাড়ের গায়ে কিছু কিছু বাড়ি। এ পথ কতটা যায় কে জানে। আমরা প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলাম, এমনিই যাব যতদূর ইচ্ছে হয়। কিছু দেখতেই হবে এমন না, স্রেফ ভালো লাগছে বলেই হাঁটা নিজেদের সাথে। হাঁটতে হাঁটতে বিকেলের আলো মরে আসা দেখা, তাজা বাতাসে হুড়োহুড়ি করে খানিক ছুটে নেওয়া এমন মানে নেই কিছু কাজ করা। ইচ্ছে হলে যাও ওই ঘাসের উপর একটু বোসো, সাপ খোপের ভয় করছে? বেশ তাহলে লাঠি দিয়ে একটু এলোমেলো করে দাও তারপর বোসো। 

চাম্পুহান রিজে কতক্ষন ছিলাম কে জানে, গোধূলির আলো মেখে ফিরতি পথে উবুদ প্যালেসটাও ঘুরে নিলাম। রাজারা থাকেনা, তাও ভীড় ভালোই আছে। আজই শেষ দিন এখানে, চেটেপুটে নিচ্ছি যতটা পারি চারধার। মোহরের সাপের ঝাঁপিটা শেষতক কেনা হয়েছে। আজ বালিনিজ ব্র‍্যান্ডের একটা আইস্ক্রীম খেলাম, তেমন উমদা কিছু না। এদের ডেজার্ট আমাদের ভালো লাগেনি তেমন, মেইন কোর্স বেটার।
বালিনিজ নাচের টিকিট বিক্রী করছে


বালিনিজ ঘর বাড়ি
সকাল বেলা ব্রেকফাস্টের পর বাঁধাছাঁদা শেষ, অগাস এসে গেছে। এক জোড়া মহিলা আমাদের লিফট চাইল, আমি তো আনন্দিত হব হব করেও হতে পারলাম না। আমরা একটু ডিটুর করবো, বাটিক ফ্যাক্টরিতে কেমন করে এদেশের লোকে কাজ করে তা দেখবো। ইন্দোনেশিয়া থেকেই বাটিক এর কাজ শিখে নাকি রবীন্দ্রনাথ ফিরেছিলেন। স্থানীয় লোকজন একমনে বাটিকের নানান রকম কাজ, সেলাই, ছোপানো, আঁকা সব করছে। কাজের লোকেদের ধরন সব জায়গায় একই রকম হয় তাই না? আমরা কিছুই কিনলাম না। 
বাটিক ফ্যাক্ট্রিতে
কাজে ব্যস্ত
বাকি রাস্তা অগাসের সাথে গল্প করতে করতে বালিকে আরো খানিক জানতে চাইছিলাম। অগাস ইকনোমিক্স নিয়ে অনার্স করে ড্রাইভারি করছে এবং সেটা নিয়ে একটুও আক্ষেপ নেই ওর। যেন এটাই স্বাভাবিক। আমার প্রশ্নের উত্তরে জানালো, হ্যাঁ এখানে প্রচুর কাজের সুযোগ, তাই ও জাকার্তা থেকে এখানে এসেছে, গাইড, ড্রাইভার, হোটেল ইত্যাদি নানান কাজ হয়। আমি ভাবছিলাম, এদের সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক মিল এত, অথচ আমাদের মধ্যে এমন ছোট কাজ বড় কাজের ভাগ  কেন? আমরা কেন সব কাজ একই রকম ভাবে গ্রহন করতে পারিনা? এই ছোট্ট পরিচ্ছন্ন দেশটা আমায় ভারী গোলমালে ফেলে দিয়েছে। এরা খুবই সুখী যতটুকু দেখেছি, শুনেছি। এই ছোট্ট দ্বীপটায় বড় ইন্ড্রাস্ট্রি কিছুই নেই। অথচ এদের মুদ্রার দাম একেবারেই নেই। পরে এক ইকনমিস্ট বন্ধুর থেকে জানলাম খেয়ে পড়ে সুখে থাকলেই হল না, তুমি উন্নতি আর কী করতে পারো বা করছ সেটা দিয়ে তোমার জিডিপি,  মুদ্রার দাম নির্ধারিত হবে। তোমার  বানিজ্য করার মত কিছু আছে কি? না হলে তোমার জিডিপি, মুদ্রার দাম এমন খারাপই হবে। অথচ এই জিডিপি এই মুদ্রা এসবই ভালো থাকার জন্যই, উন্নতি তো ভালো থাকার জন্যেই করে তাই না? ভারী গোলমেলে ধাঁধা।


বালিনিজ অসুরের এই মূর্তিটা চমৎকার না?

ধাঁধার উত্তর যাইহোক, বালি ভালো থাক, ওদের হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতি,  বিশ্বাস যাপন নিয়ে ওদের মতো করে ভালো থাক। আমরা একটু "গরীব"  দেশের থেকে শিখে নিই বরং প্রকৃতি, নিজস্বতা ধ্বংস না করে ভালো থাকতে।





2 comments:

  1. আমি বেশ কবার ট্রাই করেছি কমেণ্ট করার, হয়ত এবার হবে। এই লেখা করোনাভীতি চলাকালীন। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে যখন কিছু জানা ছিল না। এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি র কিছু সময় যাপন আর কিছু দারুণ ছবি। স্মৃতিটুকু থাক।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ অর্ণবদা। সত্যিই সে সময় করোনা নিয়ে ভয় তেমন ছিল না,এরকম সুদূরপ্রসারী আক্রমণসে হানবে তাও জানা ছিল না। স্বাভাবিক জীবন স্মৃতি হবে কে জানতো!

      Delete