Tuesday, May 26, 2020

করোনা কড়চা (এক)

করোনা লকডাউনের দিন গুলোয় মাঝে মাঝে লিখে রাখতাম.... আজ একজায়গায় জড়ো করলাম। কেউ কখনো দেখতে পায় বা চায় যদি। আর নিজেও যদি তাকাতে চাই...
রাজ্যে লকডাউন শুরু হয় মার্চ ২৪ এর বিকেল থেকে আর সারা ভারতে মার্চ পঁচিশ। বাড়ি থেকে কাজ চালু থাকে অবশ্য।

মার্চ ২৭ ২০২০।
করোনার ফলে কত কী জানা যাচ্ছে। না না স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন অবাস্তব  মতামত, কিছু মানুষের গান্ডুমি এসব না, ভেবে দেখেছি এসব আগেও ছিল। না হলে যেখানে সেখানে থুতু ফেলা, হর্ণ বাজিয়ে অতিষ্ঠ করে দেওয়া, যেখানে সেখানে নোংরা ফেলা,  নির্বিচারে গাছ কাটা এসব হত কী ভাবে? সুতরাং সেসব না, এই করোনার জন্যেই জানতে পারলাম একটা সিনেমা এসেছিল নাকি, যার নাম সুয়োরানী দুয়োরাণী।

কটকটে বেগুনি একটা ঝালর দেওয়া ফ্রক খুব টাইট একটা কমলা প্যান্টের মধ্যে গুঁজে ফিরদৌস তার শুভাশীষকে বলছে,  "বন্ধু, হাতিশালে হাতি মরছে, ঘোড়াশালে ঘোড়া, এ নির্ঘাত কোনো রাক্ষসীর কাজ।" আহা দেখে শুনেই ভালো লাগে। তারপর দৃশ্য বদলায়,  রাতে কাজ কর্ম করে বুড়ো রাজা খালি গায়ে ঘুমোচ্ছে, পাশে তার সুয়ো রানী রীতা কয়রাল কটকটে একটা বেগুনী শাড়ি পরে ঘুমোতে ঘুমোতে চোখ মেলে। কড়াৎ করে একটা আওয়াজ, ব্যাস, বেগুনী শায়া বুক অব্দি বাঁধা দুখানা দাঁত বের করা একটা রাক্ষসী হয়ে গেল সে। সবাই কেন এত বেগুনী রঙের ফ্যান কে জানে! তারপর ঘোড়াশালায় গিয়ে চেটে চেটে আরাম করে হাতি ঘোড়ার রক্ত খেতে লাগলো। ওদিকে ঘুমন্ত রক্ষীদের (তাদের গায়েও ঝলঝলে অদ্ভুত এক ফ্রক,  হ্যাঁ কটকটে নীল রঙের, এদের রঙ নিয়ে একটা ইয়ে আছে) পিছন থেকে উঁকি মারা রাজপুত্র ফিরদৌস আর তার "বন্ধু" রহিম তো সব দেখছে। তারপর, রাক্ষসী চলে যেতেই, অদ্ভুত ভাবে রাজপুত্রের ঝলমলে ঝালর ফ্রক বদলে হলুদ হয়ে গেল!

তারপর তো বুড়ো রাজা লাবনীর থেকে (দুয়োরাণী),  সুয়োরানী (রীতা কয়রাল) এ বেশী মজে তার কথা বিশ্বাস করল না। যদিও কারন বুঝলাম না, কারন, দুজনেই সমান খারাপ, আমি রাজা হলে এরকম ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নিতাম না মাইরি, আমার ধারনা, সন্তু মুখোপাধ্যায় (রাজা মশাই) কে এক্সট্রা টাকা পয়সা দিয়ে রাজী করিয়েছে। যাইহোক, দুয়োরানী ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে পড়ে, রহিমকে রাস্তায় পায়। দিনশেষে এক মন্দিরে এসে পৌঁছয়। রাজপুত্র বলছে মা এর জন্যে জল আনবে, ও বাবা দুয়োরাণি হলে কি হবে তার দাবীর শেষ নেই! বলছে জল আনলে সে আগে চান করে মন্দিরে জল ঢেলে তারপর নাকি জল খাবে! তারপর অবাক ব্যাপার, বেরোনোর সময় এক সেট প্রদীপ, তেল, দেশলাই এনেছিল মনে হয়,  প্রদীপ জ্বেলে পুজো দিতেই ব্যাস কড়াৎ করে বাজ পড়ল আর একটা সাধু চলে এলো। সে বলে দিলো নাগপাহাড়ে মনি নিয়ে মনিমালার কাছে যেতে, সে বলে দেবে কেমন করে রাক্ষসী মারবে।

তারপর তো ঝাঁ করে নাগপাহাড়ে চলে গেল এখন তার পরনে ফ্রিল দেওয়া নীল ফ্রক ও খুবই টাইট হলুদ প্যান্ট। বেচারার শ্যুটিং চলাকালীন ইয়ের খুবই চাপ গেছে। যাকগে, তারপর তো নাগরাজা আর নাগরাণীর জ্যোৎস্না রাতে খুবই প্রেম পায় কিন্তু সে সময় ফিরদৌস বিখ্যাত নাগীন এর বাঁশী বাজাতেই তারা হেলেদুলে নাচতে লাগলো আর নাগরাজা মরে গেল। ব্যাস আর কি, নীল ঝালরযুক্ত ফিরদৌস মনি নিয়ে চলল। এরপরেই একটা নদী পড়ল, আর রহিম দেখতে পেলো একটা মেয়ে খুব নাচ গান করে চান করছে। ব্যাস রহিমের হলুদ লুঙি তো তাঁবু হবার জোগাড়....

কিন্তু মেয়েটা এত খারাপ দেখতে আমার আর বাকিটা দেখার ধৈর্য্য চলে গেল। এই বাজেটে আর দেখা যায় না।

মার্চ ২৮, ২০২০

দুপুরে চান করতে যাওয়ার আগে বারান্দায় গেছি। একটা খুউউব বুড়ি মানুষ একটা লাঠি নিয়ে খুউব আস্তে আস্তে কোথায় যেন যাচ্ছে। হাতে একটা ব্যাগ। কোথায় যাচ্ছেন উনি? বাড়িতে কি কেউ নেই?এত বেলায় কিছু তো পাওয়ারও নেই তাহলে?  খুব মায়া লাগলো, ইচ্ছে করছিল নএকবার নীচে যাই, লকডাউন ভেঙে এই দুপুর রোদে একা একা এক বৃদ্ধা হেঁটে যাবেন, আশপাশ দিয়ে চলে যাওয়া এক দুটো বাইক বা রিক্সা কেউ জিজ্ঞেসও করবে না, " ঠাকুমা এই ভর দুপুরে কোথায় যাচ্ছ? কী চাই তোমার, আমায় বলো, আমি এনে দিচ্ছি"। এ জিনিস কষ্ট দেয়, তাহলে আর এই মহামারী আমাদের কী শিক্ষা দিলো! গায়ে জামা গলাতে গিয়ে দেখি বৃদ্ধা রাস্তা পার হয়ে অ্যাপলো ডায়গনস্টিকস এ ঢুকলেন। আহারে বেচারি, হয়ত বাড়িতে একাই থাকেন, টেস্ট করাতে যেতেই হবে হয়ত। আমার গ্রামের বাড়িতে এখনো আমার জ্যেঠুরা থাকেন। এক জ্যেঠুর ছেলে মেয়েরা সবাই বাইরে বাইরে থাকেন, আমার আরেক জ্যেঠুর ছেলেই তাদের খেয়ালও রাখে। সেই দাদার কথা একবার লিখেছিলাম হয়তো, কিছু তেমন করে ওঠেনি, হাজারটা চয়েস নেই তার জীবনে, তবে এই লকডাউন হয়ত ঘাড় দগরে শিখিয়ে দেবে আমাদের পরিজনের কাছে থাকার চয়েসটা হয়ত অনেক কটা চয়েসের থেকে ঢের বেশী জরুরী।

এপ্রিল ১,  ২০২০

 ধনী গরিবের প্রেম বলে একটা সিনেমার কিছু দৃশ্য দেখা গেলো, বাংলাদেশের সিনেমা। সে অপূর্ব এক সিনেমা। নামের মধ্যেই চমক৷ যা সিনেমা তাই টাইটেল, সোজা বিষয়। "টাইটানিক, জাহাজ ডুবে গেলো", "সোনার কেল্লা, পূর্বজন্ম আর দুষ্টু লোকের কাহিনী" এরকম হওয়া উচিত ছিল বটে।
এই সেরা সিনেমা আমি যেখান থেকে শুরু করলাম তাতে এক ধনী মহিলার কাপড়ে আগুন লেগেছে, এবং এক গরীব লোক সিঁড়ি থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে  জড়িয়ে ধরলো সেই ধনীকে,পরে যার নাম জানা গেলো বৃষ্টি। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন!! মানে কেন! শাড়িটা চেপে ধরা বেশী কাজের হত না? যাই হোক আগুন নেভে এবং অন্য আগুন জ্বলে ওঠে। ওদিকে সেই গরীব যার নাম আকাশ সে অত্যন্ত ক্যবলা একট চুলের ছাঁট দিয়েছে বলেই হয়ত বৃষ্টির আপু তাকে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড় করিয়ে চলে যায়। আর সে হাবার মত সেখানে ভিজতেই থাকে। যে কোনো সিজনে এই বৃষ্টি আসার ব্যপারটা নিয়ে গবেষোণার প্রয়োজন আছে কিন্তু।

তারপর কিছুক্ষন দেখার সুযোগ ঘটেনি। মহারাজ সশক্তি পিতামাতা সহযোগে চাইনিজ চেকার খেলছিলেন চাইনিজ ভাইরাসের সিজনে। তারপর মনের দুঃখে খেয়াল করলেন এর মধ্যে ধনী গরীবের প্রেমে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। গরীব আকাশ ওই বাটি ছাঁটকেই একটু কায়দা মেরে তুমুল বৃষ্টিতে খুব গরম নাচানাচি করছে বৃষ্টির আপুর সাথে।বলেছিলাম না এই যখন তখন বৃষ্টি নিয়ে গবেষনার প্রয়োজন। এবার মুশকিল হল গরীব আকাশের মুখে বোকাটে ভাবটা বদলায়নি, ফলে তাকে আরোই গাধার মত লাগছে। ওইদিকে বৃষ্টি কী করে জানি অন্ধ হয়ে গেছে আর,  কাউকে না ছুঁয়েই বলতে পারছে এ তো আকাশ না,  আকাশ কই আকাশ কই ও খুবই খারাপ একটা গান গাইছে।

বাইরে ঝোড়ো হাওয়া এলো দেখে ধনী গরীবের এই প্রেম স্থগিত রেখে বারান্দায় গিয়ে দেখি, পিলপিল করে লোক বেরিয়ে গেছে।

ভাইরাসের ভাই হয়েছে।

2 comments:

  1. সুয়োরানী দুয়োরানী তো দেখতে হচ্ছে। তোমার কড়চা আরও জমা আছে নিশ্চয়? পড়তে ভালো লাগল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হ্যাঁ হ্যাঁ কুন্তলাদি। আরো আছে। দেবো সব 😇

      Delete