Thursday, December 31, 2020

করোনাকালে সেলুনে

 ফট করে ঘড়ির কাঁটা সরে আবার আগেই লিখে ফেলি। শুরু করেছিলাম বছরটা যখন কে জানতো এমন আক্ষরিক অর্থেই নড়িয়ে দেওয়া বছর হবে! সুতরাং পরের বছরে হয়তো দেখা গেলো আমি কমন্ডলুর জল কিবোর্ডে ঢেলে হিমালয় চলে গেছি আর এ বছরের লাস্ট আওয়াজ খাওয়াটা কাউকে জানানো বাকি হয়ে গেল। আমাদের জীবনের গতিপ্রকৃতি এতোই বদলে গেছে,  করোনা এখন আর ইন থিং না, মানে সাত মাস আগেও যার ভয়ে দোকান বাজার বন্ধ রেখে করোনা ডায়েরি লিখতো সবাই তাকে ডরালে উলটে লোকে আওয়াজ দিচ্ছে!  

বুড়ো বাপ মা বাড়িতে থাকায় আমি একটু বেশীই সাবধানী, তাছাড়া আমার অফিস বাড়ি থেকেই, সেই সুবিধেটুকু নিয়ে যতটা পারি করোনাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেই চলি৷ মুশকিল হল চুল নিয়ে। গোঁফ দাড়ি আমার তিন আনা, তা নিয়ে বিলাসের কোনো অপশনই নেই। মাথার চুলও কিছু বিজ্ঞাপন দেবার মতো না উলটে টাক ঢাকাই দায় তাও সেলুনে যাওয়া আমার একমাত্র বিলাস বলা যায়। তা কোভিড লকডাউনের কারনে বাড়িতে কাঁচি ট্রিমার দিয়ে যতদিন চলল চলল তারপর আর পারা গেলো না। আমাদের পাড়া মনে হয় পৃথিবীর দুঃসাহসীতম পাড়া। তারা বহুদিন আগে থেকেই মাস্কহীন জীবন যাপন করে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে মুরগী কাটে, টাকা নেয় এই সময়েও। মাস্ক পরলেও, সরিয়ে দিয়ে রাস্তায় থুতু ফেলে নেয় সাবলীল ভাবে। সুতরাং পাড়ার সেলুনে যাওয়াটা সে সময় ভাবা যায়নি। অগত্যা, পার্লার নামক ভয়াবহ জায়গায় মাথা মুড়োতে গেলুম৷ ওরে বাবা সেকি সব ব্যবস্থা। আমার বিলাসের জায়গা সেলুন বলেছি, সে জায়গা আরামের। রতনদার সেলুনে গোবিন্দার কিংবা দেবের কিংবা জিতের সিনেমা চলে আর রতনদা আরাম করে কাঁচি চালায়। স্রেফ ছোট করে দাও বলেই আমার দায় শেষ। আরাম করে চোখ বুজে বসে থাকো, কাজ শেষে ঘাড় মাথা মালিশ করে দেবে। লোক থাকলে বসে বসে কাগজ পড়ো, দেশ গাঁয়ের খবর শোনো, সুমনের কিংবা অর্ণবের সার্কাসের থেকে সে ঢের ভালো। আর নতুন সেলুনটায় ছেলেটা অনন্ত বকে যায়, যতজন আসে সবার সাথে, না হলে ফোনে, না হলে নিজের মনেই৷ ওখানেও একই ব্যপার কাজ মিটলে ঘাড় মাথা মালিশ ফ্রি, বেশীক্ষন করাতে চাইলে ত্রিশ টাকা দিলেই আরো মিনিট পনেরো দেবে। 


পার্লার ব্যপারটা ওরে বাবারে টাইপ। তারা আমায় স্প্রে করে দিলো শুরুতেই, কেমন একটা দেবতা দেবতা ভাব আসছিলো যখন ধোঁয়ার মধ্যে থেকে বেরিয়েছিলাম। সে যাক ভালোই এদের ব্যবস্থা তাহলে। ওবাবা বলে কিনা আগে শ্যাম্পু করতে হবে! শ্যাম্পু তো চুল কেটে তারপর করি! তার আগে তো স্প্রে করে চুল ভিজিয়ে কাজ হয়। তাও মেনে নেওয়া গেলো, এক মহিলা ব্যপারটা করছিলেন আর তাকে তো আর না করতে পারিনা নাকি! তারপর তো একটা আবোদা ছেলে ভোঁভোঁ করে কানের গোড়ায় ট্রিমার ধরে,  ক্লিপ দিয়ে চুল এদিক থেকে সেদিক করে,  ইঞ্চি মেপে ভারী কসরত করলো। মোটেও আরাম নেই, চোদ্দবার, "সার ঠিক আছে, সার কিরকম স্টাইল করেন, সার অমুক সার তমুক" করে জ্বালিয়ে মারলে। অমন কেতাদুরস্ত জায়গায় তো আর বলতে পারিনা,  ভাই চুল কাটলেই ভালো লাগে আর কোনো স্টাইল নেই, কেটে দে যা পারিস। শেষমেশ নিষ্কৃতি পেয়ে দেখি এক গোছা চুল সাইড থেকে কেমন যেন উঁকি মারছে। বাড়ি এসে তাকে কাঁচি দিয়ে কেটে নিতে হল! এত সব কান্ডের শেষে আর মাথা মালিশের কথা বলতে ভরসাই হল না,  হয়তো ঝাঁটপাট দিয়ে পয়সা শোধ দিতে হবে!


তো বচ্ছরকার শেষ মাসে কোভিড যখন একটু কমছে বলে সবাই বলছে, মানে সরকারের মতে, টেস্ট করাচ্ছে কিনা আদৌ তা কে জানে! সে যাক সেই ভরসাতেই গুটি গুটি গেছি।  যেই না জিজ্ঞেস করেছি স্যানিটাইজার ব্যবহার করছো? ওবাবা কি হাসি। বলে, "আমরা তো মাস্কও ব্যবহার করিনা। অত ভয় পেলে হয় নাকি! তুমি বললে আমি স্যানিটাইজার ঘষে,  মাস্ক পরে, নতুন কাপড় দিয়ে কেটে দেবো,  কিন্তু বলছি শোনো ভয় নেই। " সে আশ্বাসবানীতে ভরসা হল না বিশেষ। আমার জন্য ওই নতুন কাপড়, স্যানিটাইজার ঘষাই রইল কিঞ্চিৎ মূল্য বেশী দিয়ে। তা কাটতে কাটতে জানালো, মাস্ক টাস্ক ওই বাসে উঠলে পড়ে, বাস থেকে নেমে যদি দেখে কেউ পরে নেই ওও পরে না,  ও তো আর গা* না। 


শালা এটাই বাকি ছিলো, আশা করি পরের বছর মাস্কহীন কাটাতে পারবো, গা* না হয়ে। 

No comments:

Post a Comment