Monday, July 20, 2020

ব্যাকাপ

মুশকিল হল যতক্ষন আছে ততক্ষন খুব প্রয়োজন,  না থাকলে নেই। এই যেমন ধরো, মোবাইলে গাদা গাদা জিনিস রাখা আছে, বন্ধুদের সাথে বেড়ায়ে যাবার, ছোটবেলায় মায়ের কোলে চড়ে থাকার, উদ্ভুট্টে মজার কোনো মিম, কিংবা প্রচুর পিডিএফ। কাল যেই দুম করে ব্যাকাপ নেবার আগেই মোবাইল খারাপ হয়ে গেল, মনের মধ্যে উচাটন,  মন খারাপ,  তারপর? তারপর অন্য কিছু।আবার নতুন কিছু। 
আমাদের জীবনের সব কিছুই তাইই আগেও তাই ছিল, এখন অপশন বেশী বলে আরোই হয়েছে। আমার আগের অফিসের কম্পিউটারে গাদা গাদা ট্যাব খোলা থাকতো, সে ক্রোমেই হোক কি নোটপ্যাডে। বন্ধ করতে যাবার আগে ভাবতাম দরকার হবে যখন আবার খুঁজতে হবে, থাক। তারপর একদিন দুম করে খারাপ হয়ে গেল। ওগুলোর কিছুরই প্রয়োজন হল না। কিংবা হয়েছে ওইগুলোর অভাব বুঝিনি। 
যেটুকু সঞ্চয় তা ওই মগজে, তাও দিয়ে করে খাওয়া। তবু কী অদম্য আমাদের জমিয়ে রাখারা চেষ্টা, ধরে রাখার চেষ্টা, বিবর্ণ চিঠি কিংবা ভয়েস নোট কিংবা ফটোগ্রাফ। যেন ওইটুকুতেই সব ছেঁড়া সম্পর্ক, হারিয়ে ফেলা সময়, ভুলে যাওয়া দিন ধরে রাখা যাবে। আমার ঠাকুমার বড় মেয়ে, মানে আমার বড় পিসি, তিনি তাঁর সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। আমার ঠাকুমা সে শোক সইতে পারেননি, মাথার গোলমাল হয়ে যায়। তিনি পাশের গ্রামে তাঁর ভুলে যাওয়া বাপের বাড়ি পালিয়ে যেতেন কাউকে কিছু না বলে, চুপিচুপি। কী জানি, হয়ত নিজের মেয়ের চলে যাওয়া ভুলতে ডুব দিতেন নিজের ছোটবেলায়, যখন তিনি ছিলেন ছোট্ট খুকিটি, সেই অনুষঙ্গ দিয়ে প্রলেপ বোলাতে চাইতেন। আমি জানিনা, আমি তাঁকে কোনোদিন দেখিনি।মানুষের তো ব্যাকাপ নেওয়া যায়না, তবু কিছু কিছু জিনিস উত্তরাধিকারীর হাতে তুলে দিয়ে যায়, টাকাপয়সা, জমি জায়গা, পান্ডুলিপি, গান, বোধ, সংস্কার ইত্যাদি।  তা সকলের সেসব দেওয়ার থাকে না, সে অর্থে কিছুই বলার বোঝানোর থাকে না, যেমন মাথা গোলমাল হয়ে যাওয়া আমার ঠাকুমার কিছুই আর বলার ছিল না, দুম করেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল মেশিন,ব্যাকাপ নেবার আগেই। আটকায়নি কিছুই আটকায় না কিছুই। খালি কিছু জিনিস শব্দে শব্দে মগজে মগজে ট্রান্সফার হয়ে যায়...

সেসবের জন্য ব্যাকাপ লাগেনা, ব্যাকাপের অভাবও বোধ হয় না।

8 comments:

  1. ভালবাসা। আমিও জানিস কত শত ছবি আমাদের বন্ধুদের অবাধে একজনকে দিয়ে রাখতাম। ব্যাকাপ। ভাবতাম ওর কাছে তো আছে। তোদের সঙ্গে আমার কত ছবি শুধু একজনের একটা ডিলিট এ হারিয়ে গেল। কিন্তু বাগ বাজার ঘাট , কলেজ স্ট্রিট, বাইক চেপে তোর কাক দ্বীপ যাওয়ার গপ্প, জিতের বাসা বদল, পুজোর সেই সপ্তমী, ব্যাকাপ আছে মনের একদম ভিতরে। কী ভাল লিখলি

    ReplyDelete
    Replies
    1. একদম। সব থেকে যায় ঠিক।

      Delete
  2. ক্ষণ , পাণ্ডুলিপি, কোনও এইগুলো এট্টু ঠিক কর না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. 😥 হুঁ পরের বার খেয়াল রাখবো।

      Delete
  3. বাহ। সুন্দর লেখা

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ সুদীপ। তুমি প্রায় সব কটা লেখা পড়ো, উৎসাহ দাও। থ্যাংক ইউ সো মাচ।

      Delete
  4. আমার কত ছবি যে খুঁজে পাই না। আন্দামান, লাভা, রাজগীর। সব ত পুরনো ল্যপটপে আছে। যা আমার সঙ্গে নেই। সেটা কি চলে ? জানি না। সেই স্মৃতি কি ধীরে ধীরে আবছায়া হয়ে যাচ্ছে ? ভাল লিখেছিস।

    ReplyDelete
    Replies
    1. না স্মৃতিতে ওই সময়ের আনন্দটা থাকে। ডে টু ডে অ্যাক্টিভিটি হয়ত আবছা হয়ে যায় কিন্তু টোটাল্টা মানে একটা অবয়বটা ঠিকই থাকে।

      Delete