Thursday, June 18, 2020

করোনা কড়চা (চার)

এপ্রিল ১৬,  ২০২০

 আমাদের টিমটা চমৎকার ছিল।অফিসের লাস্ট প্রজেক্টের। আড্ডা, তামাশা, দল বেঁধে খেতে যাওয়া,এ ওর ঘাড় ভাঙা, রাত জেগে কাজ দারুন ছন্দ। দুম করে করোনা এলো, লকডাউন শুরু হল।আমরা কম্পিউটার নিয়ে এসে বাড়ি থেকে কাজ শুরু করলাম,  করোনার কাউন্ট করলাম, ভয় পাওয়া শুরু করলাম, গৃহবন্দী জীবনের সুবিধে অসুবিধে ভাবলাম সব করলাম খালি রোজের জীবনের অংশ টীমটা ভেঙে গেলো। কাল এক জুনিয়র ফোন করেছিল, "দাদা তোমাদেরো কি রিলিজ করছে? তোমাদের টিমেই থাকার কোনো উপায় নেই? যদি কিছুদিন লিভ উইদাউট পে করেও থাকা যায়"।  সদ্য কলেজ থেকে বেরিয়েছে এরা, পাসিং ক্লাউড শব্দবন্ধ বোঝেনা ওরা, তাই এরকম আবেগের কথা বলে। আমার দশ বছর আগের প্রথম টিমটা মনে পড়ে যাচ্ছিলো, ওদের আর কারোর সাথে এই দশ বছরে আর একটাও প্রজেক্ট করা হয়নি, আমরা এক বয়সী পাঁচ ছ যারা শুরু করেছিলাম,তাদের একজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে, বাকিরা কেউ অফিস বদলেছে কেউ শহর কেউ বা বিল্ডিং৷ মন খারাপ করা একেবারেই উচিত না, কিন্তু আমার মন খারাপ হয়, আমি ওই ছানা গুলোর কষ্টটা টের পাই, যদিও জানি আমাদের নিজেদেরই কারোর কোনো ঠিক নেই....

সেদিন দেবাশিষদা বলছিলেন একদিন দেখা করব কিনা করোনা মিটলে, নাকি করোনার পর কাটিয়ে দেবো, সব্যর সাথে জঙ্গলের মধ্যে সেই হোটেলটায় যেখানে মাঝ রাতে জন্তু জানোয়ার এসে গাছে আওয়াজ করে যায়....কতজনের সাথে দেখা হবে বলে দেখা হয়নি, আমারই দোষে, আমিই করিনি,  এবার ভাবছি পেন্ডিং কিছু আর রাখবো না, অন্তত না রাখারই চেষ্টা করব, লাস্ট টিমটার একসাথে একটা না হওয়া পিকনিকের মতো যদি আর না হয় কখনো। জানি সব কিছু হয়ও না, যা ভাবি, তাও কিছু তো হাতে থাকেই....

এপ্রিল ১৮, ২০২০

বাংলা সিঅাইডি হিন্দিটার মতই অসাধারণ। 

অভিজিৎ- এই যে গলাকাটা লাশ এ যে দীপকের এটা বোঝা যাবে কি করে?

এসিপি প্রদ্যুমন - এটা দীপকের লাশ তা এখনো বোঝা যায়নি। ❤

এপ্রিল ২, ২০২০

কাল খানিক বেরোতে হয়েছিল। এক মাস স্টার্ট দিইনি গাড়িতে, বেচারি বিরহে শুকিয়ে যায় পাছে অদর্শনে, লং ডিস্ট্যান্সের ভরসা আমি করিনা, তাই খানিকক্ষন তাকে চার্জ আপ করা গেলো।  আহ সে  প্রেমিক প্রেমিকার গোপন কথা, ও কথা থাক,  বেরিয়েছিলাম দুপুরে,  যাতে বাজারের ভীড়টা তা সে যতটুকুই হোক, এড়ানো যায়। আমাদের বাড়ি থেকে গ্যারাজটা একটু দূরে, রাস্তায় আধভাঙা বাড়ি, একটাও জনপ্রানী নেই। সেই ছোটবেলায় রূপকথার গল্পে পড়ার মতো, দুম করে যে যেখানে যেভাবে ছিল পাথর হয়ে গেল,  সেইরকম। কতদিন পর দোকানে যাওয়া বাদে চেনা কোনো গলিতে ঢুকে ভারী আরাম লাগছিল, বুড়ির বাড়ির আমগাছটায় খুব আম এসেছে, হলুদ বাড়িটার বারান্দা থেকে গোলাপী ফুলের থোকা ঝুলছে। কবে সব ঠিক হবে আবার বেড়াতে যাব কে জানে! 

সন্ধ্যেবেলা ঝড় এলো আগে লম্বা লম্বা পায়ে, দুটো প্ল্যাকার্ড ওড়ালো, ডাস্টবিনটা ফেললো, জানলা দরজা ধাক্কা দিলো অস্থির বালকের মতো, ধমকে চমকে দিলো বিদ্যুৎ এএ ঝলক। তারপর  ফোঁটা ফোঁটায় এলো বৃষ্টি, সাড়া পাড়া অন্ধকার, একটা দুটো এমার্জেন্সি গাড়ির সামনে দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো তুরতুর করে নেচে নিচ্ছে, ওই ঘর থেকে মা হাঁক দিচ্ছে যাতে না ভিজি....

এরকম কোনো বৈশাখী ঝড়জলের রাতে কোলকাতার রাস্তায় চুপচুপে ভিজেছি, কিংবা তুমুল গাড়ি চালিয়েছি কালকে রাতেরটা বেশ অন্যরকম বুঝলে,কেমন অন্ধকার পাড়া, যেন বেশ কিছু বছরের পুরোনো সময়।আচ্ছা বৃষ্টি ঝড়ের  অতি বৃদ্ধ দাদু ঠাকুর্দার কোনো লিখিত ইতিহাস আছে কি? ওদের ভাষায়, যে ভাষা আমরা বুঝি না। মানুষের মত বোকা না নিশ্চয়ই ওরা, খালি রাজা বাদশাহ দের কথাই লিখবে। কেমন করে প্রথম ভাতের গন্ধের সাথে ঘি এর গন্ধ মিশেছিল, কেমন করে  গরু ছাগলের সাথে মানুষের ভাব হয়েছিল, আকাশে সাথে ভালোবাসার কথা, নদীর জলের সাথে নুড়ির বিরহের কথা... এদের ইতিহাসে ঠিক থাকবেই।  খালি হিটলার, চেঙ্গিজ খাঁ, লড়াই বিদ্রোহর কথা না খুঁজে কিছু এমনি ফুল ফোটার গল্প শোনা যাবে বেশ সেই ভাষা বুঝতে পারলেই....ব্যাস তখনই সৃষ্টি রহস্যও জেনে যাব গাছেদের থেকে।

কবে যে হবে এসব....

এপ্রিল ২৬,  ২০২০

ধরুন একটা পুচকে দ্বীপ, হাতে গোনা কটা থাকার জায়গা। উত্তর দিক থেকে পশ্চিমে হেঁটে যাচ্ছেন, যেতে যেতে একটা গাছ দেখে তার ছায়ায় বসলেন। একটু দূরে একটা নৌকা বাঁধা আছে, আর কেউ কোথাও নেই, একটাও ময়লা পড়ে নেই, ধপধপে বালিতে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়েও পড়লেন। তারপর ঘুম ভাঙলো, স্থানীয় ফলওয়ালির ডাকে। সে মাথার ঝাঁকা থেকে নাম না জানা অচেনা ফল এগিয়ে দেয়, ইশারায় ভেঙে খেতে বলে। হাসি বিনিময়ে ভালোমন্দ বোঝা হয়ে যায়। বাকি ভাষা বাহুল্য বোধ হয়। তারপর ফের খানিক এগিয়ে যান, যেতে যেতে সমুদ্রের তীরে ছোট্ট একটা দোকানের পেতে রাখা আসনে, জমিয়ে বসে পানীয় নেন কোনো পছন্দের, সামনে তখন সেদিনকার মতো শাট ডাউন করে সমুদ্রের সাথে ডেটে চলেছে সূর্য।

এসবই যেন একশো বছর আগে হয়েছিল....কবে যে আবার এরকম একটা সুর্যাস্তের ছবি ধরে হেঁটে যাব কে জানে! ততদিন পুরোনো ছবিই সঙ্গী হোক....

No comments:

Post a Comment