Saturday, June 20, 2020

করোনা কড়চা(পাঁচ)

মে ১০, ২০২০

কদিন ধরে একটা টিকটিকি সারা ঘরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানে আপিসের কাজ করছি বসে, সড়াৎ করে পাশ দিয়ে খাটের তলা থেকে বুকশেলফের নীচে চলে গেল।দুপুরবেলা পাড়া বেড়াতে সাধ হয়েছে! দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার মাথা কাছ থেকে উঁকি মারছে, তাড়া দিলে ঢুকে যাচ্ছে। কোত্থেকে কী খাচ্ছে কে জানে,  সারা দেওয়াল হেগে ভরাচ্ছে! সন্ধ্যেবেলা প্রেমের তাড়নায় সিলিং বেয়ে প্রেয়সীর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে টিউবলাইটের পেছনে। ধমক টমক পাত্তা দিচ্ছে৷ না বলে মাথা খাটিয়ে মনে হল, এরা ঠান্ডা রক্তের প্রাণী,  শীত তেমন ভালো লাগবেনা। সুতরাং অস্ত্র বানানো হল, গোলা, ইয়ে বরফের। দিয়ে ঠাঁই ঠাঁই করে ছুঁড়েছি। একটা পড়ল ওর থেকে দু ইঞ্চি দূরে,অল্পের জন্যে মিস। নতুন উদ্যমে ফের ওয়েপন সংগ্রহে গেছি, হাত টাত অবশ প্রায়, বরফ বের করে গোলা বানাতে, তাও যায় যদি যাক প্রান শত্রুর নাম... ইয়ে টিকটিকি৷ ব্যাটা তোর বদামি বের করছি। 

এ ঘরে এসে দেখি মালটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বরফটার দিকে। তারপর যা করলো, দেখে জীবনে ঘেন্না ধরে গেলো মাইরি....

টুপটুপ করে ঝরে পরা জলটা একবার জিব বের করে চেটে দেখলো, দিব্যি ঠান্ডা জল,গরমের দিনে।  তারপর.... তারপর আরাম করে পুরো বরফজলটা চেটে চেটে খেলো মাইরি!!

মে ১৫, ২০২০

এখন মোটামুটি সবই খুলেছে অল্প আধটু করে৷ আজ দিন পনেরো পর বাজারে গেছিলাম। করোনায় আমাদের পরিবারে সব চেয়ে চাপ হয়েছে বাবাই এর। একটা লোক যার সারাদিনের রসদ বাজারে গিয়ে হতো তার দু মাসের উপর বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ হয়ে গেছে। সেদিন বারান্দা থেকে ব্যাগ ঝুলিয়ে আনাজপাতি কেনার সময় কাকে যেন বলছিলো, "ও চিনতে পারছো না যে"।  আমরা হাসাহাসি করি, যেন এ বাবাই এর গ্রামের মতো, দু মাস বাজারে না গেলেও কারোর মনে রাখার দায় থোড়াই আছে এই জনঅরণ্যে! সকাল থেকে বিকেল হাঁকাহাঁকি করে ঝিঙে পটল কেনে, আজ আমি দ্বিগুন দাম দিয়ে টমেটো কিনে এনেছিলাম সেটা দুপুরে আবিষ্কার করে উত্তেজিত হয়ে ছুটে এসেছিল। আমরা হাসছিলাম কিন্তু বাবাই এর জন্যে খারাপ বাজার করা আর পরীক্ষায় ফেল করা একইরকম খারাপ। বাবাইএর সমস্যাটা আমি বুঝবই না আসলে, ওই হাসাহাসি করাটাই পারি খালি!

 দরকার ব্যপারটা খুবই গোলমেলে সত্যিই। এই যে সেলুন বন্ধ কতদিন, আগামী দিনেও যাবো কি যাবোনার দোলাচলে, সেলুনে সেলুনে যে অ্যাসিস্ট্যান্ট গুলো কাজ করত তাদের কিভাবে চলছে কে জানে! সেলুন আমার জন্যেও দরকারি ছিল সত্যিই, হাবিজাবি গল্প শুনতাম মাথা পেতে দিয়ে। অফিসের কাজ বাড়ি থেকে হয়ে যায় কিন্তু সোমনাথ বা বিশুর সাথে টুকরো টাকরা হাসি,কথা এসবও আমার জরুরী ছিল৷ একটা বুড়ো আমওয়ালা হিমসাগর বিক্রী করছিলো, লকডাউনে আম খাওয়া হয়ত জরুরী না কিন্তু ওর কাছে আম বিক্রী করাটা বেশ জরুরী। আনন্দ আজকেও জোর করছিলো একগাদা মাছ নেবার জন্যে, নিইনি, ব্যাটা আগের দিন পাঁচশো মৌরলা মাছ দিয়ে দিয়েছিল আমি ভালো বুঝিনা বলে। লাল্টুও দিয়ে দিয়েছে একগাদা মাছ, বাড়ি গেলে সবাই ফের বকাবকি করবে। কতদিন পর বেরিয়ে সবার সাথে কথা বলতেও খানিক আরাম লাগে। কবে এই করোনা যাবে কে জানে, হয়ত একে নিয়েই চলতে হবে, আর মানুষের যা স্মৃতি সব ভুলেও যাবে একদিন, তাই লিখে রাখছি,  একদিন ভীড় নিয়ে অতিষ্ঠ হওয়া আমি কেমন অপেক্ষা করেছিলাম ভয়হীন ভীড় ফিরে আসার।মে ১০, ২০২০

কদিন ধরে একটা টিকটিকি সারা ঘরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানে আপিসের কাজ করছি বসে, সড়াৎ করে পাশ দিয়ে খাটের তলা থেকে বুকশেলফের নীচে চলে গেল।দুপুরবেলা পাড়া বেড়াতে সাধ হয়েছে! দেওয়ালে টাঙানো ছবিটার মাথা কাছ থেকে উঁকি মারছে, তাড়া দিলে ঢুকে যাচ্ছে। কোত্থেকে কী খাচ্ছে কে জানে,  সারা দেওয়াল হেগে ভরাচ্ছে! সন্ধ্যেবেলা প্রেমের তাড়নায় সিলিং বেয়ে প্রেয়সীর সাথে মিলিত হতে যাচ্ছে টিউবলাইটের পেছনে। ধমক টমক পাত্তা দিচ্ছে৷ না বলে মাথা খাটিয়ে মনে হল, এরা ঠান্ডা রক্তের প্রাণী,  শীত তেমন ভালো লাগবেনা। সুতরাং অস্ত্র বানানো হল, গোলা, ইয়ে বরফের। দিয়ে ঠাঁই ঠাঁই করে ছুঁড়েছি। একটা পড়ল ওর থেকে দু ইঞ্চি দূরে,অল্পের জন্যে মিস। নতুন উদ্যমে ফের ওয়েপন সংগ্রহে গেছি, হাত টাত অবশ প্রায়, বরফ বের করে গোলা বানাতে, তাও যায় যদি যাক প্রান শত্রুর নাম... ইয়ে টিকটিকি৷ ব্যাটা তোর বদামি বের করছি। 

এ ঘরে এসে দেখি মালটা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বরফটার দিকে। তারপর যা করলো, দেখে জীবনে ঘেন্না ধরে গেলো মাইরি....

টুপটুপ করে ঝরে পরা জলটা একবার জিব বের করে চেটে দেখলো, দিব্যি ঠান্ডা জল,গরমের দিনে।  তারপর.... তারপর আরাম করে পুরো বরফজলটা চেটে চেটে খেলো মাইরি!!

মে ১৫, ২০২০

এখন মোটামুটি সবই খুলেছে অল্প আধটু করে৷ আজ দিন পনেরো পর বাজারে গেছিলাম। করোনায় আমাদের পরিবারে সব চেয়ে চাপ হয়েছে বাবাই এর। একটা লোক যার সারাদিনের রসদ বাজারে গিয়ে হতো তার দু মাসের উপর বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ হয়ে গেছে। সেদিন বারান্দা থেকে ব্যাগ ঝুলিয়ে আনাজপাতি কেনার সময় কাকে যেন বলছিলো, "ও চিনতে পারছো না যে"।  আমরা হাসাহাসি করি, যেন এ বাবাই এর গ্রামের মতো, দু মাস বাজারে না গেলেও কারোর মনে রাখার দায় থোড়াই আছে এই জনঅরণ্যে! সকাল থেকে বিকেল হাঁকাহাঁকি করে ঝিঙে পটল কেনে, আজ আমি দ্বিগুন দাম দিয়ে টমেটো কিনে এনেছিলাম সেটা দুপুরে আবিষ্কার করে উত্তেজিত হয়ে ছুটে এসেছিল। আমরা হাসছিলাম কিন্তু বাবাই এর জন্যে খারাপ বাজার করা আর পরীক্ষায় ফেল করা একইরকম খারাপ। বাবাইএর সমস্যাটা আমি বুঝবই না আসলে, ওই হাসাহাসি করাটাই পারি খালি!

 দরকার ব্যপারটা খুবই গোলমেলে সত্যিই। এই যে সেলুন বন্ধ কতদিন, আগামী দিনেও যাবো কি যাবোনার দোলাচলে, সেলুনে সেলুনে যে অ্যাসিস্ট্যান্ট গুলো কাজ করত তাদের কিভাবে চলছে কে জানে! সেলুন আমার জন্যেও দরকারি ছিল সত্যিই, হাবিজাবি গল্প শুনতাম মাথা পেতে দিয়ে। অফিসের কাজ বাড়ি থেকে হয়ে যায় কিন্তু সোমনাথ বা বিশুর সাথে টুকরো টাকরা হাসি,কথা এসবও আমার জরুরী ছিল৷ একটা বুড়ো আমওয়ালা হিমসাগর বিক্রী করছিলো, লকডাউনে আম খাওয়া হয়ত জরুরী না কিন্তু ওর কাছে আম বিক্রী করাটা বেশ জরুরী। আনন্দ আজকেও জোর করছিলো একগাদা মাছ নেবার জন্যে, নিইনি, ব্যাটা আগের দিন পাঁচশো মৌরলা মাছ দিয়ে দিয়েছিল আমি ভালো বুঝিনা বলে। লাল্টুও দিয়ে দিয়েছে একগাদা মাছ, বাড়ি গেলে সবাই ফের বকাবকি করবে। কতদিন পর বেরিয়ে সবার সাথে কথা বলতেও খানিক আরাম লাগে। কবে এই করোনা যাবে কে জানে, হয়ত একে নিয়েই চলতে হবে, আর মানুষের যা স্মৃতি সব ভুলেও যাবে একদিন, তাই লিখে রাখছি,  একদিন ভীড় নিয়ে অতিষ্ঠ হওয়া আমি কেমন অপেক্ষা করেছিলাম ভয়হীন ভীড় ফিরে আসার।

2 comments: