Thursday, September 27, 2018

বাদলা দিনে মনে পড়ে ...

"বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গান, বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান"।
বৃষ্টি বাদলার দিন হলেই আমার তিন চারটে র‍্যান্ডম কবিতা গল্প মনে পড়ে যায়। একই বয়সের না, আলাদা সময়কার। কালো করে আকাশ, সিঁড়ির বন্ধ জানলা বেয়ে জল এসে দালান থৈ থৈ। আমার কাগজের নৌকা ডুবে গেছে সেইই কখন, লেবু গাছের গোড়ায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে৷ আমি নীচের ঘরে আবছা অন্ধকারে, 'কবে বিষ্টি পড়েছিলো, বান সে এলো কোথা', ভাবতাম, কল্পনায় যেন দেখতাম অন্ধকার আলো নিভু নিভু ঘরের দৃশ্য।

আরেকটা গল্প মনে পড়ে যায়, ক্ষীরের পুতুলে, সেই দুয়োরাণী বাঁদর ছেলেকে ঘুম পাড়ায়, বাইরে তখন খুব ঝড় জল।

আরেকটা গল্প ছিল ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় এর মনে হয়। কয়েকজন বন্ধু বিকেলে জড়ো হতো ক্লাবে, চা মুড়ি চপ খেতো, এরকম একদিন বৃষ্টি বাদলার দিনে যারা জড়ো হয় তারা সব মানুষ না!

তিনটে বিসদৃশ জিনিস মনে পড়ে কেন কে জানে! সাথে এলোমেলো করে বৃষ্টির দিনের ছবি, সে ছবিতে কেন্নোর দালানে উঠে আসা আছে, অফিস যাবার নাম করে বেরিয়ে ইচ্ছে করে ভিজে বাড়ি চলে আসা আছে, তুমুল বৃষ্টিতে ঝাপসা কাচে বাইক চালানো আছে, একটা বাচ্ছা ছেলের ভিজে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরে আসা আর তার মা এর গামছা দিয়ে মুছিয়ে দেবার পর প্রথমবার আদা দিয়ে সত্যিকারের চা খাওয়া আছে।

বৃষ্টি মানে ভূতের গল্প এই জন্যই কি? ভূত মানেই তো অতীত, ছেঁড়া খোঁড়া ঝলমলে হিংস্র নরম অতীত।

*******************************************************************************

একা একা সময় কাটাতে স্টুলিশ খেলছিলাম। হঠাৎ আলো কমে এলো, হুড়োহুড়ি করে একরাশ মেঘ ছুটে এলো কোথা থেকে। দিনদুপুরে রাতদুপুর হয়ে গেলো। জানলা খুলে হাঁ করে দেখছিলাম চারপাশ ফাঁকা হয়ে গেলো, ফলওয়ালা তার ঠ্যালাগাড়ি ফেলে পালিয়েছে, রাস্তায় একটাও লোক নেই আর। সাদা হয়ে বৃষ্টি পড়ছে আর একটাও লোক নেই....এমন অপচয় বড় কষ্ট দেয়।

আমার নীচে নামা বারন, অবশ্য বারন না হলে আমি এতোক্ষন একটা কাচের ঘেরার মধ্যে বসে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। জানলা দিয়ে ঝাপ্টা আসছে, আমার চুল, বিছানা বালিশ ভিজে যাচ্ছে, বাবাই বকবে এক্ষুনি। 
হঠাৎ করেই এক ঝলক ঠান্ডা হাওয়ায় গোলমাল হয়ে যায়, একটা একানে ছেলে টিউশন শেষে হাঁটা লাগিয়েছে, এখানে তার বন্ধু বান্ধব নেই তেমন। অবশ্য কোথায়ই বা ছিলো। বাসের ভাড়া বাঁচিয়ে সিগারেট কিনবে, নতুন শখ, খালের ধারে ভাঙা পাঁচিলে তার দেশলাই লুকোনো আছে, ব্যাগে রাখলে ধরা পড়ে যাবে।

হঠাৎ বৃষ্টি নেমে আসে। একা একা হাঁটা দেখেই সঙ্গী হয় বোধহয়। ছেলেটার ছাতা নেই, ব্যাগে পরীক্ষার খাতা, সে পরীক্ষায় সে সব চেয়ে কম পেয়েছে। মন খারাপে, একলায় মাখামাখি ব্যাগে বৃষ্টি ঢুকে দেখে। মেঘ নেমে এসে উড়িয়ে দেয় সব। তুমুল বৃষ্টিতে ভিজে ভীতু হাতে সিগারেট ধরায়, ভয়ের চোখে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কিনা!

রাতের বেলায়, সব থেমে যাবার পর টেবিল ল্যাম্পের আলোয় নদী আঁকে সে খাতায়। আঁকতে সে পারে না মোটেও একটাই আঁকা জানে, একটা নদী, নদীর ধারে ঝাঁকড়া গাছ, দূরে একটা বাড়ি, কয়েকটা পাখি আর সূর্য। আঁকতে আঁকতে কখন যেন নদী, গাছ সব তার মধ্যে ঢুকে যায়। পরীক্ষার কম নাম্বার, একলা কোচিং কিচ্ছু যেন আর ছুঁতে পারে না তাকে।

".....জানলাটা খোলা, দরজা হাট করা, সব ভিজে গেলো, আবার শরীর খারাপ না বাধালেই না?"

যাই।

No comments:

Post a Comment