Wednesday, March 27, 2019

আলাপ

একটা ভূতের গল্প হয়ে যাক? আলাপ সিরিজই হয়ে যাচ্ছে দেখছি!
**********************************

-হ্যাল্লো ম্যাডাম?

-কে কে বলছেন!

- আমি ভূত।

-মানে! ইয়ার্কি মারছেন! অসভ্যতার একটা সীমা থাকে। রাত দুপুরে এসব অসভ্যতা করার জন্যই নেট নেন বুঝি!

- আস্তে ম্যাডাম আস্তে। অত মাথা গরম করলে খুলি ফেটে আমি হয়ে যাবেন তো!

-মানে ফের বাজে বকছেন! আপনাকে নলক করতে বাধ্য হচ্ছি।

-হাঃ হাঃ হাঃ (বেশ মহিষাসুর টাইপ করে পড়ুন,ইনফ্যাক্ট চাইলে আপনার কানের কাছে গিয়েও এরকম আওয়াজ দিতে পারি)। 

-হ্যাল্লো ম্যাডাম!

-একি! আপনাকে তো আমি ব্লক করলাম এক্ষুনি! আপনি এলেন কিভাবে!

-ব্লক হয়না তো! ভূত মানে অতীত ম্যাডাম, অতীত মানে যা ঘটে গেছেই, তাকে আপনি ব্লকাবেন কিভাবে!

-দেখুন এসব নোংরা অসভ্যতা আমার ভাল্লাগছেনা। কোনোভাবে হয়ত ব্লক হচ্ছেনা, এনিওয়ে আমি মেসেঞ্জার ওড়ালাম।

-হ্যাল্লো ম্যাডাম।

-একি!! হোয়াটসঅ্যাপে!  আপনি আমার নাম্বার জোগাড় করলেন কিভাবে!

- আহ শান্ত হয়ে শুনুননা একবার! ভালো করে দেখুন আমার নাম্বার আসছে? আসছেনা তো? কারন আমি সত্যিই ভূত।

-আপনি একজন হ্যাকার এবং কোনো ভাবে এটা হ্যাক করে করছেন। আমি টেকনোলজি বিশেষ বুঝিনা তাই ব্যপারটা ধরতে পারছিনা।

- শুনুন আপনিও আসলে ভূত থুড়ি পেত্নী,  তাহলে আমায় স্বীকার করতে এত অসুবিধে কি?

- মানে! বোকা কথা বলে পেঁয়াজি না মেরে ফুটুন তো।

- আচ্ছা দেখুন এতবার বলছি, আমি ভূত, আপনি সমানে হ্যাকিং,  খারাপ লোক ইত্যাদি নিয়ে পড়ে আছেন। আমি যদি ভূত নাওও হতাম খারাপ লোক তো নাও হতে পারতাম নাকি? একবার কথা অব্দি বললেননা ঠিক করে৷ এত অবিশ্বাস নিয়ে মানুষ বেঁচে থাকে নাকি, মরেই গেছেন তো ম্যাডাম আপনি!

- দেখুন ওসব ড্যাশের কথা বলে লাভ নেই, চিঁড়ে ভিজবে না। হ্যাঁ অবিশ্বাস করছি, কারন আপনাকে বিশ্বাস করার মত কিচ্ছু ঘটেনি।

-অবিশ্বাস করার মতই বা কি ঘটেছে?

-নাম হীন, ছবি হীন, বন্ধু হীন একটা অচেনা প্রোফাইল থেকে পিং করা, মেসেঞ্জার উড়িতে দেবার পর নিজের নাম্বার হাইড রেখে হোয়াতে ডিস্টার্ব করা সবটাই অবিশ্বাসের।

-আচ্ছা বেশ মেনে নিলাম। এবার ধরুন আমি পাঁচশো হাজার বন্ধু নিয়ে,  যে কোনো কারোর একটা ছবি, যে কোনো একটা নাম পদবী, বায়ো ইত্যাদি নিয়ে,  আপনার পরিচিত গ্রুপে চারটে কমেন্ট করে আপনার সাথে কথা বলতাম, তাতেই আপনি আমায় জেনে চিনে যেতেন?

-না তা হয়ত হতনা। আমি অচেনা লোকের সাথে এমনিও কথা বলিনা।

-ফেসবুকে সবাই আপনার চেনা?

-ফেসবুক আর ইনবক্স এক না। পার্সোনালি সবার সাথে কথা অবশ্যই বলিনা।

-বেশ, তাহলে আর কি! ফেসবুকে চাট্টি বাজে মিথ্যে বলে, কমেন্ট করেই আপনার সাথে আলাপ করব!

-মানে! কিরকম লোক আপনি! মিথ্যে বলে কথা বলবেন,  সেটাও গলা বাজিয়ে বলছেন!

-কী করব ম্যাডাম,  সত্যি বললাম আপনি তো বিশ্বাস করলেন না!

-কারন সেটা বিশ্বাসযোগ্য না!

- আচ্ছা বেশ শুনুন, আপনার বাড়ি শোভাবাজার, ভাড়া থাকেন, বাড়িতে মা বাবা আছেন। বাবা ব্যাংকে চাকরি করতেন এখন রিটায়ার করেছেন। আপনি চাটার্ড একাউন্ট্যান্ট। এসব গুলোই আপনি বলবেন হ্যাকার বলে আমি জেনেছি বা আপনার ফেসবুক থেকে জেনেছি, যদিও লাস্টের ইনফরমেশনটা ছাড়া কিছুই আপনার প্রোফাইলে নেই। আপনার একটা ছোট বোন ছিল, দু বছর বয়সে সে মারা যায়, আপনার কনুইএ একবার চিড় খেয়েছিল, আপনার জ্যেঠতুতো দাদা কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট করে ফেলে, এখনো আপনার বাঁ হাত পুরো টা টান করতে পারেননা। আর কিছু বলব?

- আপনি কে? কী চান?

- বিশ্বাস করবেন না জানি। তাও আবারও বলি আমি ভূত। বেঁচে থাকলে আমার বয়স আপনার বয়সের থেকে দশ বছর বেশী হত, মরে গিয়েও অবশ্য একই আছে।

-আপনি সত্যি বলছেন?

- হ্যাঁ রে বাওয়া হ্যাঁ। আমাদের সম্পর্কে যা সব শোনেন,  সবই ভুলভাল। আসলে ধরুন মানুষ মরে অন্য ডাইমেনশনে চলে যায়। আমরা আপনাদের সাথে কমিউনিকেট করতে পারিনা চট করে কারন টাইম ট্রাভেল করে ওয়ার্ম হোল দিয়ে এক্স্যাক্ট আমার জীবনেরই ফিউচারে যাওয়ার সোজা কোনো রুট পাওয়া যাচ্ছিল না। হয়ত অন্য কোনো প্যারালাল ওয়ার্ল্ডে চলে গেলাম আর সেখানে হয়ত আমার মা বাবার বিয়েই হয়নি, কিংবা আই হয়ত এখনো বেঁচে আছি। তবে রিসেন্টলি একজন এটা আবিষ্কার করেছে। ফলে আসা যাওয়া সোজা হয়ে গেছে।

-আমার খুব অবাক লাগছে। বিশ্বাস করার মত না। তাও আপনার কথার কারিকুরিতে বিশ্বাস করে ফেলছি যেন।

-ইটস ওকে। একটু শক্ত বটে বিশ্বাস করা।  তবে বিশ্বাস করলেও ক্ষতি নেই কিছু। এই যে আপনার আগের বয়ফ্রেন্ড যে আপনাকে ঠকালো, তাকে তো চিনতেন অনেকদিন, তাও চেনা হল কই। আরে আরে ওরকম মুখ করবেন না, আই অ্যাম সরি, আমার বলা উচিত হয়নি ও প্রসঙ্গ।

-আপনি আমার মুখ দেখতে পারছেন?

- সত্যি বলতে কি আমি তো যেখানে খুশিই যেতে পারি। আপনার ঘরেও। কিন্তু সেটা ঠিক হবে না,  তাই এই চ্যাটেই এসেছি...না আপনার মুখ আমি দেখতে পারছিনা তবে, অনুভূতি বলে তো একটা ব্যাপার আছে নাকি?

-😀

- হাসির কী হল! আগেকার মানুষের অনুভূতি বেশী ছিল, তাদের শিকড় ছিল...আপনাদের মত ভার্চুয়াল জগতের শিকড়হীন সম্পর্কে বিশ্বাসী ছিলনা।

-এমন বলছেন যেন কত বছর আগে জন্মেছিলেন। আপনি ইয়ে মানে কতদিন হল, মানে..

-আরে ভূত হয়েছি কিনা জানতে চান তো? এত আমতা আমতা করার কী আছে। পাঁচ বছর। না পাঁচ বছরের তফাতে এত কথা বলছি না, যদিও পাঁচ বছরে বদলেছে অনেক। আসলে ওই ওয়ার্ল্ডে সব কিছুই আলাদা ভাবে তৈরী হচ্ছে জানেন। ওখানে মায়া দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে মানুষের জীবন বইছে। আমার শুরুতে ভারী অসুবিধে হত, ছোট্ট একটা চাকরি করে আরো দশটা মানুষ তারা হয়ত সে অর্থে নিজের না, এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি, তাদের নিয়ে বাঁচা। বিলাসের জায়গা কমে গেছে, তবে আস্তে আস্তে সে স্বাদ পেলে আর অভাববোধ থাকেনা। বাড়িতে রঙচটা হাফ প্যান্ট পরে থাকার সুখের মত। বোঝাতে পারলাম না ঠিক মনে হয়।

-জানি। আমি বুঝি।

-জানি ম্যাডাম,  তাই জন্যেই তো আপনাকে পিং করছিলাম।

-আচ্ছা আপনি সামনে আস্তে পারেন না?

- হুঁ। পারি তো। কিন্তু এই যে একটু দূরে থাকা, দুম করে প্রথমেই সব দূরত্ব ঘুচিয়ে না দেওয়ার অসুবিধেটুকু থাক না?

- আর ফের কথা বলতে ইচ্ছে করলে?

- হবে। চিঠি লিখে রাখবেন। আমি পড়ে জবাব দেব।

-পুরোনো দিনের মত?

-আমি তো পুরোনো দিনেরই লোক।

- বেশ।  এমনিতেও আজকাল আর ভরসা বিশ্বাস করতে পায়ারিনা, এই চিঠি চিঠি খেলাটাই থাক।

-খেলা না ম্যাডাম,  আপনার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবো ফের, দেখবেন।

-আপনি চলে যাবেন আবার আপনার ওই দুনিয়ায়?

-যেতে তো হবেই ম্যাডাম। সব কিছুর জায়গা থাকে। চাইলেও তো এখানেই থেকে যাবার উপায় নেই। তবে একজন বন্ধু যাকে এখনো চিঠি লেখা যায় তাকে পাবেন।

-মন খারাপ করছে।

-সেকি! এক্ষুনি তো কথাই বলতে চাইছিলেন না।!
- 😑
- আহা রাগ করেনা ম্যাডাম।

-ধোর মশাই আপনার ম্যাডাম। আমার নাম আছে একটা।  আর আপনার নামটাই বা কি? স্যার বলে ডাকতে পারবো না!

- আচ্ছা আচ্ছা,  চিঠিতে জানাবো। কিংবা আপনি জানাবেন। দেখি কে আগে লেখে। আজ যেতে হবে। সময় শেষ,  ডাক পড়েছে। ভালো থাকবেন। চিঠি লিখবেন কিন্তু।

No comments:

Post a Comment