Saturday, March 23, 2019

আবার পাহাড় (২)

ঠান্ডার জায়গায় ঠান্ডাকালে যাবার অসুবিধে সুবিধে সবাইই জানে। আরেকটা অ্যাড করে দিই, জামাকাপড় মোজা সব পরেই শুয়ে পড়ো, সেই পরেই ফের সকালে বেরিয়ে পড়ো। তাই সকালবেলা যখন ঘুম ভাঙলো, আমার জানলার কাচের বাইরের অন্ধকার কেটে গেছে দেখে, তুড়ুক করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়তে সময় লাগে না বিশেষ। 
ছাদে গিয়ে দেখি ওইই তো স্নো পিক দেখা যাচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা না কুম্ভকর্ণ কোন পিক জানিনা, কিন্তু গরম চা এর কাপ হাতে, পাইন বনে ঘেরা গ্রামে চাদে বসে স্নো ক্যাপ মাউন্টেন দেখতে গেলে নামের অত মহিমা লাগে না। অন্তত আমার কাছে। সুন্দর রোদ মাখা সকাল। কিচিরমিচির করে পাখি ডাকছে। একটু পরেই বেরিয়ে পড়ব। তার আগে হেঁটে হেঁটে ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখে আসা গেল একবার। মন্দির থেকে ঘন্টার আওয়াজ ভেসে আসছে।





এক পেট নুডলস খেয়ে, পদ্মদিদির ভরে দেওয়া চা ফ্লাস্কে আর জল বোতলে নিয়ে শেরপা নিবাসের পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু হল। আলোয় ছায়ায় মোড়া রাস্তা। পদ্মদিদির বর বলে দিয়েছে ফুটবল গ্রাউন্ড অব্দি চওড়া রাস্তা তারপরেই ফুট ট্রেল শুরু, কোনো ভাবেই যেন ওই ফুট ট্রেল না ছাড়ি৷ আর পদ্মদিদি বলে দিয়েছে সাবধানে যেত। শেরপা নিবাসের পাশে একটা ঘোড়া একমনে পাতা চিবোচ্ছে। খান কতক ছেলে ট্রেক শুরু করবে বলে প্রস্তুত, গাইড এলেই শুরু করে দেবে। অল্পবয়সীইই সব, কলেজ পড়ুয়া বা আরেকটু বেশী। ফুটবল গ্রাউন্ড এর পাশেই প্রাইমারি স্কুল। ট্রেইল ধরে একটু এগোলেই জঙ্গলের রাস্তা শুরু। সাদা একটা ফুলের গাছ আছে সবুজ জঙ্গলটায় মাঝে মাঝে আলো জ্বালিয়ে ফুলে ভরে আছে।




সামনে গুরাস পিছনে ম্যাগনেলিয়া

 নীল ঝকঝকে আকাশ, ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ পাখি উড়ছে। আমি তাক করলেই তারা উড়ে পালাচ্ছে। বদামির সীমা থাকে মশাই। এই পাখিগুলো এত জ্বালিয়েছে, মানে ফচকেমি করে খালি উড়ে উড়ে পালিয়েছে ফোকাস করতে গেলেই যে আমি ঠিক করেছি পরের জন্মে এইরকম ফুদকুরি পাখি হয়েই জন্মাবো আর মানুষ গুলোকে উত্যক্ত করবো মনের সুখে। লাল লাল ফুলের গাছও ঢের আছে আর আছে ঘাসফুল। অদ্ভুত আরাম আর আনন্দ হচ্ছে এই পুরো জঙ্গলটার রাস্তায়, যতক্ষন না টংলু পৌঁছচ্ছি একা আমি। উঠতে উঠতে হাঁফিয়ে পড়লে পাখির ছবি তোলার নামে জিরিয়ে নিচ্ছি একটু। খানিক ওঠার পর দেখি শুকনো সাদা পাতা ছড়িয়ে গাছের তলাটা কেমন যেন বরফের রঙ নিয়েছে। ছবি তোলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ভালো পারিনা, তাই যা চোখে দেখলাম তা লেন্সে ধরা গেল না।




গাছতলায় আরাম করে বসে একটু জল খেয়ে চা এ চুমুক দিচ্ছি। ঝিরঝিরে হাওয়া দিচ্ছে। ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মতো জ্যাকেট, গেঞ্জি খুলে ফেলেছিলাম ক্রমে, এখন আবার মনে হচ্ছে পরে নিলেই ভালো। এই জ্যাকেট খোলা পরার ক্যাপ্টেন গিরি টংলু অব্দি চলেছিল। বেশ খানিক ওঠার পর একটা খোলা জায়গা এল আর সেখান থেকেই দূর পাহাড়ের উপর টংলু দেখতে পেলাম। দেখে সত্যি বলব আমার শুকিয়ে গেছিল। হ্যাঁ! ওই পাহাড় চড়তে হবে এখনো! ইরিবাপ্রে। কী আর করা দূরে না তাকিয়ে ফের ফুল পাখি গাছ পালা দেখতে দেখতেই হাঁটা দিলাম। খানিক ওঠার পর দেখি, অ্যাঁ! আমি এই এতোটা উঠে পড়লাম! মানে রাস্তা যতটা কঠিন লাগে দেখলে অতটাও না। চলা শুরু করলেই সোজা হয়ে যায়। 







আর দু পাক ঘুরে একটা ঝাঁকড়া গাছের পাশ দিয়ে উঠলেই ওই তো টংলু। একটা মারুতি ওমনি দাঁড়িয়ে আছে। তার ভিতরে দুজন কি সব করছে। একটা বাড়ি দেখা যাচ্ছে। বাড়িটায় গিয়ে খোঁজ নিতে গেছি, ওটাই ট্রেকার্স হাট কিনা ওব্বাবা একটা বিটলে বদ কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে এলো। পাঁচিলের ফাঁক দিয়ে গলে আমায় সে কি চমকানি। জ্বালাতন তো! কই কে আছেন? এটা ট্রেকার্স হাট? উঁহু এটা না এটা না, ওই বাঁকটা এগিয়ে যাও ওইখানে৷
বাঁকটা ঘুরতে দেখি এক দল ঘোড়া একটা ফাঁকা জায়গায় লুটোপুটি খাচ্ছে খুব গড়াগড়ি দিয়ে। আজব তো! ঘোড়ারা তো নাকি খালি মরে গেলে শুয়ে পড়ে শুনেছিলাম! ওইদিকে দুটো কুকুর চেঁচাচ্ছে হিংস্র ভাবে; বাঁধা আছে দেখছি! যাক!





ট্রেকার্স হাটে ঢুকে দেখি দুজন লোক, স্থানীয় না অবশ্যই, হিন্দিতে আমায় বলল, ওই দিকে কেউ আছে কিনা খোঁজ নিতে, বাঙালীই হবে বোধ হচ্ছে। "কোই হ্যায়" বলে উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখলাম একটা খাবার জায়গা, কেউ নেই, আমার আওয়াজেই মনে হয় এক অল্পবয়সী মেয়ে বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। 
"বুকিং নেই, ঘর চাই।"
-ভাইয়া বল সকতে হ্যায়।
চেয়ারে ব্যাগ রেখে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। মেঘে স্লিপিং বুদ্ধ তো দূর বুদ্ধের নাকটুকুও দেখা যাচ্ছেনা! অবশ্য নতুন করে হতাশ হবার কিছু নেই, আমার সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘার সম্পর্ক পদ্মাবতী আর আলাউদ্দীন এর মতোই। রানী দেখা দেবেননা আমিও নাছোরবান্দা, দেখি কতদিন অপেক্ষা করায়। 
বাঙালী ভদ্রলোক দুজন তখন বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। আমায় একা দেখে অফার করলেন ওনাদের সাথে সান্দাকফু অব্দি যেতে, গাড়িতে জায়গাও আছে, আর সান্দাকফুতে বুকিংও। কাল ওনারা নেমেও যাবেন। কিন্তু আমার তো তাহলে হাঁটা হবে না। আমি তো হাঁটতেই এসেছি...নিজের মতোন, গাছেদের সাথে বকবক করবো, পাথরে শুরে পড়বো, ইচ্ছে মতো জায়গায় বসে গান গাইবো হেঁড়ে বেসুরো গলায়....কিংবা একদম চুপ করে পাহাড়ি নিস্তব্ধতা বুকে পুরে নেব।
সবিনয়ে জানালাম এ যাত্রায় হবে না, তবে পথে এই যে কত লোক পাওয়া হয়ে যায় তবু বলি কেন একা ঘুরি?








খানিকবাদে জিসিং ভাই এলো। গাল দুটো টমেটোর মত লাল। খুব নাকি বুকিং চলছে তাই ঠিক সামনের ভালো ঘর গুলো দিতে পারবেনা। পিছনের ঘর এ থাকতে পারি। তাই সই। ব্যাগ বস্তা রেখে বেরোলাম। ট্রেকার্স হাটে জিসিং ভাই বিরানব্বই সাল থেকে আছে। নিজের ফার্ম মত বানিয়ে ফেলেছে এতোদিনে। গরু, মুরগী, কুকুর, ঘোড়া, ছাগল নিজের ক্ষেতিবাড়ি। তবে শুনে যেমন মনে হচ্ছে ওরকম না। এই ধরো একটা পাথরের উপর মুরগির ঘর, উঁচু নিচু চড়াই ভেঙে খানিক গিয়ে গরুর থাকার জায়গা। ওইই দূরে পাহাড়ের ঢালে অল্প করে চাষের জায়গা। আরো খানিক নীচে নেমে গেলে জল ধরে রাখার জায়গা...ওইইই টুমলিং থেকে আসে। জলের বড় অভাব এখানে। এই ধরে রাখা জলই বয়ে নিয়ে যেতে হয় ট্রেকার্স হাটে। ওইই যে নীচে টুমলিং দেখা যাচ্ছে। 


সোজা রাস্তায় গেলে ঘুরপথ হবে, পিছনের এই পাহাড়ি পায়ে চলা রাস্তা ধরে গেলে কম হবে খানিক। নীল আকাশে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, সুন্দর হাওয়া, আমি তরতর করে হেঁটে নেমে গেলাম ঘোড়াগুলো যে রাস্তায় গেছে সেই পথে। এ পাহাড়টা পুরো ন্যাড়া। গাছ নেই একদম। হয়ত মরে গেছে বা শীতের পর পর বলে এত ন্যাড়া বোঁচা লাগছে। চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়েছি একটা চ্যাটালো জায়গা দেখে। মেঘ গুলোর হাবভাব দেখছি। পুরোই কেতাদুরস্ত মানুষ এর মতো ব্যবহার! এই দিক থেকে মেঘবাবু এক যাচ্ছেন, ওদিক থেকে মেঘবাবু দুই আসছেন, দুজনে মুখোমুখি, "হাই, সব ভালো তো?"? " হ্যাঁ হ্যাঁ, হ্যাভ এ নাইস ডে"। ব্যাস কথা শেষ, দুজনে নিজের মত চলতে লাগলো। শেষে রোদ যখন নাকটা ভালো রকম খামচাতে শুরু করলো ফের ওঠা গেল। রাস্তার ধারে একটা বৌদ্ধ মন্দির মত আছে, সেখানে ঢোকার আগে একটা ছোট গেট, কেউ কোথাও নেই, ঝরা পাতার রাশি, ফুল ফুটেছে লাল গাছটায়, এমনকি পাখির আওয়াজও শোনা যায়না।



টুমলিং এ ঘরবাড়ি কিঞ্চিৎ বেশী। সান্দাকফু যাবার গাড়িগুলো সারাই ঝাড়াই হচ্ছে এখানে। এখানেও একটা বৌদ্ধ স্তুপ টাইপ আছে। আমি ঘুরে দেখলাম, ফল আর জল দিয়েছে খেতে, নো পয়সা। আমি আবার মন্দির টন্দিরের খুচরো টাকা নিয়ে আরেক মন্দিরের কাজ সেরে থাকি....যদিও এখানে প্রয়োজন নেই। টুমলিং থেকেও কিচ্ছু দেখা গেল না। মেঘ বরং আরো বেরেছে। ফেরার রাস্তাই ধরলাম আবার। এদিকে মেঘগুলো নেমে এসেছে উপত্যকায়। মেঘ দিয়ে পুরোই ঢেকে গেছি। এইরে, রাস্তাটা কোথায়?




টুমলিং টংলুর থেকে নীচে। ফলে নামার সময় রাস্তা ঠাওর করে করে না নামলেও চলে কারন পুরো জায়গাটাই ফাঁকা, গাছপালা নেই, রাস্তা হারাবার প্রশ্নই আসেনা। কিন্তু ওঠার সময় তো লাগে। এমন মেঘে ঢাকা তারা হয়ে আছি, গরুর পাল, ঘোড়া গুলো,কিচ্ছুই দেখতে পাচ্ছি না। শেষমেষ জলের লাইন যেটা কিনা জিসিং ভাই দেখিয়েছিল, টুমলিং থেকে যে লাইন দিয়ে জল এসে টংলুতে আমাদের খাওয়া ধোয়ার ব্যবস্থা করে সেই জলের লাইন ধরে ধরে এবড়োখেবড়ো বেপথে চলতে লাগলাম। চলতে চলতে একটা নীচু জায়গায় দিল্লি একটা ঘোড়ার কংকাল পড়ে আছে। মরে কংকাল হয়ে শুয়ে আছে....বড় অসহায় দেখতে লাগে। পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাই, ট্রেকার্স হাটের কাছাকাছি এসে দেখি, একটা দল খচ্চরের পিঠে জিনিস মালপত্র চাপিয়ে হেঁটে আসছে, কথা ভাসছে তাদের 
"টংলুতে কিছুই নেই"
"সেবার অমরনাথের রাস্তায় গেছিলাম, ওটা আরো খাড়াই...."
এসব দলকে সযত্নে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। বেলা হয়েছে বেশ, খেয়ে নিলেও হয়। মেঘ এখোনো কাটেনি। তবে দু হাত দূরের জিনিস দেখা যায়নার থেকে বেটার হয়েছে।





খেয়ে উঠে আশপাশটা চড়তে বেরিয়েছি ফের। খাদের দিকে মেঘ হলে কি হয়, গাছের উপর রোদ পড়েছে বেশ, কিচিরমিচির করে সেই ফচকে পাখিগুলো খুব আমায় প্রভোক করছে আর যেই না ফোকাস করার চেষ্টা করছি অমনি ফুড়ুৎ। যা যা, তুলবো না ছবি হুহ, এলেন আমার ক্যাটরিনা রে। পস্ট শুনলাম কিচিরমিচির করে আমায় আওয়াজ দিয়ে পালালো ফচকে গুলো। 




সকালে মারুতি ওমনিতে যাদের দেখেছিলাম, তারা ক্যাম্প করতে এসেছে। গাড়িতেই থাকা খাওয়া শোওয়া সব। তবে কতদূর যেতে পারবে ওরা জানেনা, কারন, গিসিবাসের পর তো ওমনি আর যাবে না। যাকগে ওরা তা নিয়ে অত ভাবছেই না। কম্বলের উপর জায়গা করে দিয়েছে, আঙুর খাও, লাঞ্চ করে যাও আমাদের সাথে, গাঁজা খৈনী চলবে কিছু? বেশ খানিকক্ষণ আড্ডা মেরে উঠে পড়লাম। এই যে আমি কোনো স্নো পিক, কোনো স্লিপিং বুদ্ধ দেখতে পাচ্ছিনা তাতেও আমার কোনো দুঃখ হচ্ছেনা। আমি উঁকি মেরে মেরে দেখছি লাল গরুটা হাম্বা হাম্বা করে জিসিং ভাইকে ডাকছে, "এবার আমায় ঢুকিয়ে দাও না ঘরে", বলে বলে। ছাগল গুলো তো বোকার হদ্দ মেঘে মেঘে কোথায় ঘুরছে কে জানে! মুরগীটা কোঁক্করকোঁ করে করে চিক্কুর ছাড়ছে, মুরগী না মোরগ এটা? কে যেন ডাকে? ভারী সুন্দর দেখতে কিন্তু। তবে আমি আবার সাধক মানুষ কিনা, এমন সুস্বাস্থ্যের মুরগী দেখলে মনে হয় খেতেও হেব্বি হবে।



বেলা পড়ো পড়ো যখন, একটা পরিবার এলো, বাবা মা ছেলে, প্রপার ট্রেকিং ব্যাগ, জামা জুতো লাঠি নিয়ে। আমার মতো যা আছে নিয়ে বেরিয়ে পড়া পাব্লিক না। আর কেউ না আসলে জিসিং ভাই আমায় সামনের ঘরটা দেবে, আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে ওই ঘর থেকেই স্নো ক্যাপ মাউন্টেইন দেখতে পাওয়া যায়। আর কেউ এলো না, ঠান্ডা আরো বাড়লো....ক্রমে অন্ধকার হয়ে এলো আর একটা ফ্যাকাশে চাঁদ উঠলো। ওই অন্ধকারে ওই চাঁদেরই জোর বেজায়। সে যে কী অদ্ভুত, কী মায়াবী লাগছিল বোঝাতে পারবোনা। চাঁদের আলোয় মেঘে ঢাকা টংলু আমার কাছে ভারী অচেনা লাগছে। যেন এই পাহাড়, গাছ, ঘরবাড়ি, রাস্তা সব অন্য জগতের। আমি ওই রাস্তা ধরে কুয়াশায় মেঘে মিলিয়ে গেলে অন্য কোথাও পৌঁছে যাব। আমি বোঝাতে পারবোনা সে অনুভূতি। বাঁধানো রাস্তা ধরে হাঁটছি, কেউ কোত্থাও নেই, নিজের পা এর শব্দ ছাড়া.....চুপ করে বসে রইলাম একটা জায়গায়। তারপর গেলাম ফের সেই ছেলে দুটোর গাড়ির কাছে। ওরা তখন কাল ওদের সঙ্গে আনা কাঠ জ্বেলে আগুন পোহাচ্ছে।বসে কফি খেলাম, আবোলতাবোল ভাবতে ভাবতে ফিরেও এসেছি আবার। ঠান্ডায় হাত পা জমে যায় মশাই। জিসিং ভাই এর ছেলে পেম্বা ক্রুজে শেফ, ছুটিতে এসেছে। কিচেনে কাঠের আগুনে রান্না হচ্ছে, আমি আর পেম্বা খানিক গল্প করছি, ওদিকে জিসিংভাই, ওর বৌ,শালী আর দুজন লোক মিলে গল্প গুজব করছে। একটা দল এলো এগারোজনের। রাতের রান্না শেষ প্রায়। এমন সময় দেখলাম সেই সুন্দরী কমলা থুড়ি মুরগী কাঠের থালায় শুয়ে এলেন। পেম্বা, যার নামের মানে শনিবার, সে দামী ঘড়ি হাতে, একটা চপার হাতে লেগে পড়লো কাজে। ঢিমে আঁচে কাঠের উনুনে হওয়া দেশী মুরগীর মাংস আর ভাত.....খেয়ে হাত ধুতে ইচ্ছে করে না এত ঠান্ডা। কুয়াশা কিংবা মেঘ আরো নেমে এসেছে, ওদিকের মাঠে দুটো দল ক্যাম্প করেছে, কুকুর দুটো ডেকে উঠছে মাঝে মাঝে। আস্তে আস্তে সব চুপ করে গেল। আমি ছাড়া এদিকের ঘর গুলোয় আর কেউ নেই। জানলার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিলে ফ্যাকাশে চাঁদ, কুয়াশা কিংবা মেঘ, কয়েকটা তারা....আর অনন্ত নিস্তব্ধতা। যতবার ঘুম ভাঙলো রাতে ততবার এ দৃশ্যের বদল হয়নি, আলো ফোটা অব্দি।










(ক্রমশ)

4 comments: