Thursday, September 21, 2017

মহালয়া

 এটাকে বোধহয় পুজোর লেখা বলা যায় না সে অর্থে । মহালয়ার দুপুর রাতে বাড়ি ফিরে ভোর বেলা উঠি আমি আজো , এদিকে নাস্তিক কিন্তু চারটেয় রেডিওতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র চাই , পাশের ঘরে গিয়ে । ভোরের দিকটা একটু গা শিরশির করে এ সময়টা , চাদর টানার বদলে মাএর আঁচল টা টেনে গুটিশুটি মেরে এ বয়সেও আমি মহালয়া শুনি ( আজ্ঞে হ্যাঁ , ওই শুদ্ধ মহিষাসুরমর্দিনী আমি কখনই বলিনি ) । তারপর উঠে টিভির মহালয়াটা দেখতে দেখতে বোর হচ্ছি , কি রে বাবা এতো নাচ কেন যুদ্ধে গেলে কেউ নাচে? মারামারি হোক কি তর্ক সবেতেই নাচছে মহা মুশকিল । অন্যবার এ সময় মহালয়ার সকালের আলো ফুটে যায় এবারে দেখি মেঘলা আকাশ । সকাল বেলা মেঘলা আকাশ আমার এম্নিই দু চোখের বিষ মহালয়ার দিন হলে কিরম রাগটা ধরে!!
ফের ঘুমিয়ে উঠে দেখি তখনো মেঘলা দিন , চোখ খুলছে না সাকুল্যে ঘন্টা দুই ঘুমিয়েছি , অফিস যেতে হবে । 
চুল কেটে আসি বরং মাথা ম্যাসাজ করে দেবে একটু হলেও এই ম্যাজম্যাজ ভাবটা কমবে । এক গাদা তেল দিয়ে দিলো মাথায় ররতন দা , আরে লাগাও , ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল , পুজোয়র আগে একটু স্টাইল করবে তবে না মেয়েরা লাইন দেবে ! বোঝো!! তেল মেখে কে কবে স্টাইল করেছে , এমন জ্যাব্জ্যাবে করে তাও! কিন্তু সেলুনে নাপিতের সাথে তক্কো করা আর কোনো মেয়েকে বলা তোমায় ভালো লাগছে না , একই রকম দুঃসাহসী কাজ আর আমি ভীতু মানুষ ।
মা এর কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছি একটু আরাম করে দাও মাথাটায় , চুল টেনে দাও । আমার মাথায় নাকি ছাগল ছাগল গন্ধ তাই দিতেই চায় না ভদ্রমহিলা ! দু চার মিনিট পেয়েছি জোরজুলুম করে তাও। আজ আর গাড়ি নেবো না । শালা ঘুমে মাথা বুকে ঠেকে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই , কাকে ঠুকে দেবো কেস । বাড়ি থেকে বেরিয়েই দেখি আকাশ কালো করে মেঘ, বৃষ্টি এলো বলে ।
বাসে উঠতে উঠে বৃষ্টি শুরু , কে বলে এটা শরৎকাল , ওই যে একজনের ছাতা উল্টালো , ফাঁকা জানলার ধার । ইকো পার্কের ওই তাজমহল থেকে পিরামিডের কি সব বানাচ্ছে , না না আমি দোষ দিচ্ছি না , হতেই পারে এই নকল তাজমহল থেকেই কত জনের সাধ পুরন হবে । কিন্তু আমাদের কি চিন্তা ভাবনা এতোই দৈন্য হয়ে যাচ্ছে একটা নতুন স্থাপত্য আর ভাবতেই পারিনা! একটা লোক লুঙ্গিটা মাথা অব্দি মুড়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় । কাশ ফুল গুলো নেতিয়ে গেলো , গরুগুলো গরুর মতো ভিজছে পিলারটার গাঁ ঘেঁষে ।
আমার কি হলো আমি নেমে পড়লাম বাস থেকে সেই হুল্লাট বৃষ্টির মধ্যেই । আমি ছাতাই নিইনা আর এক্সট্রা জামা প্যান্ট , এরপর এসিতে ঢুকবো জানি জ্বর হতে পারে কিন্তু এই ফাঁকা রাস্তা অঝোর বৃষ্টি এমন টানতে লাগলো । বাসের লোকগুলো কেমন ঘাবড়ে গেছে , এতোক্ষন একটা পাগল ওদের সাথে মিশে বসে ছিলো ভেবেই হয়তো ! 
একটা লোকও নেই , মাঝে মাঝে সাঁইসাঁই করে গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে , আমি ছপাত ছপাত করে এগোচ্ছি প্যন্টটা আর গুটিয়ে লাভ নেই । শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভিজে অফিসে ঢুকে দেখি অফিসে আজ রঙের এলা । সব মামনি রা শাড়ি আর খোকাবাবুরা পাঞ্জাবি পরে ঘুর ঘুর করছে । যাক কোথাও তো মহালয়া ফ্লেভার আছে অন্তত ।
রাতের ক্যাবে আমি মোবাইল ডেটা অন করি না , কানে গান গুঁজি না , গল্প করি ক্যাব ড্রাইভারের সাথে । আজ আড্ডা হচ্ছে রেড এফেম না মির্চি কে বেশী জনপ্রিয় তাই নিয়ে । পুজোয় আমার কদিন ছুটি জেনে সে বলল পুজোর চারদিন সেও আর গাড়ি বের করবে না । বল্লাম কেন ভীড়? বলে না না বন্ধুবান্ধব্দের সাথে ঘুরবো মজা করবো সারাবছর কাজ করলে হয় । ছেলেটা খুবই ছোট দেখে মনে হয় , আপনিটা চালানো গেলো না , বললাম বয়স কত কুড়ি? হেসে ঘাড় নাড়ে । পড়াশোনা করলে না? "বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো না , , আর টানতে পারতো না , তার চেয়ে বললাম একটা গাড়ি কিনে দাও" । দিব্যি সহজ সুরে বলল । আমি নেগেতিভ কথা ভালোবাসিনা , যারা স্বপ্ন মেখে উৎসাহ নিয়ে জীবন হাঁটে তাদের ভালোবাসি বড় । এই হয়নি সে হয়নির বদলে এই হয়েছে সেই হয়েছে শুনতে ভালোলাগে আমার ।
সকালের যে রোদটা ওঠেনি বলে পুজো পুজো মনে হচ্ছিলো না সে রোদ টা এই মাঝ্রাতে উঠে গেলো যখন স্বপ্ন স্বপ্ন চোখে রহমান বলছিলো , "সারারাত , সকাল দুপুর গাড়ি চালায় আর বিকেলে ঘুমায় , দিব্যি আছি ভাই বুঝলে , নিজের মতো , রাতের অফিস ডিউটির টাকা বাবাকে দিই আর সকালের টা আমার হাত খরচা তেলের খরচা । পুজোয় ভাই আসবে দিল্লী থেকে , আমার যমজ ভাই কিন্ত ও পড়াশোনা করে । চারদিন ঘুরে বেরিয়ে ঠাকুর দেখে তারপর আবার শুরু । ভালো থাকবেন স্যার । "
তুমিও ভালো থাকো রহমান । পুজোর আনন্দ নিয়ে , নাছোড়বান্দা অপরাজিত হয়ে ।

2 comments:

  1. রহমানের গল্পটা বড় ভালো। থ্যাংক ইউ, প্রদীপ্ত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. তোমার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো কুন্তলাদি :) । হ্যাপ্পি পুজো ।

      Delete