elomelo-hijibiji
Saturday, April 13, 2024
চৈত্রের দিন
Friday, January 19, 2024
লন্ডন ডায়রি (তিন)
Monday, January 1, 2024
নতুন বছরে বছর শেষের কথা
বছরের শেষদিন। আজকের তারিখটা ভালো লেগেছে ১২৩১২৩। একটু কায়দা করে লিখতে হল বটে। আমি কেন জানিনা চুলদাড়ি কাটতে এরকম বাঘা বাঘা দিনেই যাই। দেড়টায় গিয়ে তন্নতন্ন করে চারপাঁচটা দোকান ঘুরে শেষমেশ বুঝলাম, আজ কপালে অপেক্ষা আছে। তা সত্যি বলতে তেমন তেমন জায়গায় কান উঁচিয়ে অপেক্ষা করতে অত মন্দ লাগে না। বট গাছের নীচে একটা ছোট্ট সেলুন। একেবারে ইটালিয়ান না, কিন্তু বাহুল্যও নেই। তা দুটো অল্পবয়সী ছেলে চুল কাটছে তখন। একজন বলছে ভাই কাল নিউইয়ার আজ বাঁ গলা অব্দি মদ খাবো। আরেকজন তখন চুলে কামানো কাট দিচ্ছে, দিতে দিতেই সমর্থন। এই কোনো উৎসব যাপন মানেই মদ বা বেড়াতে গিয়ে মদ এ ব্যপারটা আমি ভালো বুঝিনা। যাই হোক পরেরজন এলো, আমার পরে কিন্তু তাকে আমিই আগে ছাড়লাম। বাংলার একটা বোতল আর প্লাস্টিকের গ্লাস নিয়ে এসেছে। বলছে জল টল পড়েনি, চড়চড় করছে।বলতে বলতেই দু প্লাস গলায় ঢাললো জল খাওয়ার মতো করেই। ওস্তাদ মানুষ, তাকে না ছেড়ে যাই কোথায়। তাছাড়া সে খুব তাড়ায় ছিল।ভাত খাবে গিয়েই, তাই তার দাড়ি কাটার পরেও আমার চুল দাড়ি কাটা, মাথা মালিশ হয়ে গেল, তারপরে আরেকজন বসে গেল কিন্তু সে তখনো ডিয়ার লটারি থেকে মেট্রো রেল সর্বত্র ঘুরছে। শীতের বেলা ওদিকে তখন পড়েই এসেছে প্রায়। বোতল শেষ না হলে উঠবে বলে মনে হচ্ছে না।
সেদিন ফিরছিলাম শহরের বাইরের থেকে। ট্রেনের অপ্রতুলতার কারনে স্লিপারের টিকিট কেটেই উঠতে হয়েছিল, দূরত্বটা লোকাল ট্রেনের মতো হলেও। হরেক রকম হকার ওঠে বটে স্লিপারে। যারা টাকা পয়সা বাঁচাতে ভাববে স্লিপারে উঠে যাবে খেতেই তো সব ফুরিয়ে যাবে অ্যাঁ। নাকি আমিই এমন হ্যাংলা? প্রথমে উঠলো, সেদ্ধ চানা মাখা। কেউ কেউ খেলো, আমারও ইচ্ছে হল কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, ছোটবেলাতেও যেমন এ চানা খেতে পাইনি এখনো পেলাম না। তারপর চা। চা খাওয়া গেল। তারপর গুড় কাঠি। তাকেও বঞ্চিত করা হল না। তারপর পেন। ও দিয়ে স্রেফ পিঠ চুলকানো যায়, শীতে এমনিই চামড়া ফেটেফুটে আছে চুলকোলে রক্তারক্তি হবে! ক্রমে আরো কারা কারা যেন উঠলো। পাশের খোপে একটা আড়াইজনের পরিবার। ছেলেটার মুখটা অকারণ কঠিন,অথচ বাচ্ছাটার সাথে খেলার সময় সেই মুখ আশ্চর্য ভাবে বদলে নরম হয়ে যাচ্ছে। এরা খুব একটা রিল পরিবার না।মানে মোবাইলে ব্যস্ত না।নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলছে না হলে বাচ্ছাটাকে নিয়ে ব্যস্ত। আপারে একজন লোক এই ভর দুপুরেও টানটান হয়ে ঘুমোচ্ছে। পাশেই আরেকটা যে পরিবার তারা অনেকজন। নিজেদের মধ্যে গল্পও করছেনা, ঝিমুচ্ছে সব।
তালতলার কেকের দোকানে যাবো বলে বেরিয়েছি।এই জায়গাটা কসমোপলিটান এর হদ্দমুদ্দ যাকে বলে। মসজিদ, যীশুবাবার চার্চ, গাছের নীচে ঠাকুরে দিব্যি ফুল বেলপাতা চড়ানো। গলির মধ্যে ফেল্লায় ফ্ল্যাট আর সস্তার বস্তি দুইই আছে। গলিরা যেমন হয়, তেমনই একটা ঠেলাওয়ালা, একটা ইস্ত্রির দোকান, দুটো বেপরোয়া বাইক। বস্তির ঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে প্লাস্টিকের বালতি, দরজার সামনে কয়লার উনুন, একটা দুটো রোলের দোকান। হাঁটতে হাঁটতেই সন্ধ্যে নামে।
মেট্রোতে উঠলে গল্প দেখি চারিদিকে। শিয়ালদার মেট্রো এমনিতে ফাঁকাই থাকে। পাশেই এক জোড়া অল্পবয়সী ছেলে মেয়ে। আজকালকার সেল্ফি আর রীল সর্বস্ব না। অবশ্য নিজেদের মধ্যে গল্পে বুঁদ বলেও হতে পারে। সেই একই গল্প, যা বহুদিন ধরে হয়ে এসেছে, হয়ে চলেছে, হবেও। হলেই ভালো অবশ্য মানুষ টিকে যবে যদ্দিন এ গন্তব্যহীন ভালোবাসার গল্প চালু থাকে। সামনের সীটে বসেছে একটা দাড়ি কামানো, তাগড়া গোঁফওয়ালা বলিষ্ঠ চেহারার লোক। ভিতরে ভিতরে খুবই নড়বড়ে তাই হাবভাবে খুব আত্মবিশ্বাসী। চারিদিকে এসব তুচ্ছ জিনিস দেখে মুখের গুটখাকেই প্রায়োরিটি দিচ্ছে, একটা তাচ্ছিল্য মার্কা হাসি ঝুলিয়ে। পাশের লোকটা বংশদবদ হবার জন্যেই জন্মেছে যেন। কিছু একটা বলছে মন জোগানো মত ভাব মুখে, আর গুটখা চিবুতে চিবুতে লোকটা শুনছে। এরকম লোক আমি দেখেছি খুব।মেট্রো থেকে নেমে দুটো খিস্তি দেবে, পচাৎ করে পিক ফেলে তারপর খুব অদ্ভুত কোনো এক রসিকতা করবে।
কোলকাতা থেকে চলে আসার পথটাও কম আকর্ষক না। গাড়িতে এলে রাস্তায় হুট করে থামি কোনো ছোট্ট দোকানে। ফুড ব্লগার কিংবা ট্রাভেল ভ্লগারদের ফোনের বাইরে। ছোট্ট দোকান, মুটে মজুর গোছের একজন হামহাম করে মুড়ি ঘুগনি খাচ্ছে স্টীলের কাঁসি মতো জিনিসে। দোকানের বাইরের চৌকিতে একটা বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেশী কুকুরছানা জামা গায়ে শুয়ে আছে। দুটো চা খোর ছাগল খুব ঘুরঘুর করছে। পারলে আমাদের চায়ের ভাঁড়টাই কেড়ে নেয়।
কখনো চায়ের দোকানে দাঁড়ালে জানতে পারি, নতুন দোকান খুলেছে। আগে ভাই দোকান দিতো। ভাই দিয়েছে পাশাপাশি দোকান কি আর দেওয়া যায়, তাই এতদিন দেয়নি সে। তারপর একদিন জানতে পারে যে জমিটার টাকা ভাইকে দিয়েছিল কেনার জন্যে, ভাই নিজের নামেই কিনেছে সবটা। চায়ের ভাঁড়ে মিশে যায়, "একই মায়ের পেটের থেকে বেরিয়েছি আমরা, এরকম করল?"
মফস্বলের দিনগুলোও কাটে মন্দ না। সকালে কিংবা বেলার দিকে বারান্দায় দাঁড়ালে দেখি তুরতুর করে কাঠবিড়ালি ঘুরছে। ইলেক্ট্রিকের তারে একটা বুলবুলি এসে বসল। পড়াশোনা নেই দিব্যি আছে। শীমূল গাছে একটা কাঠঠোকরা বাসা করার চেষ্টায় আছে, সামনে বিয়ে মনে হয়! সেদিন খুব হনুমান এসেছিল। মাঝে মাঝেই আসে। জানলার পাশেই একটা সজনে গাছ আছে, আরাম করে লেজ ঝুলিয়ে বসে সজনে পাতা খেলো খুব। ওদিকে দেখি একটা খুব ছোট ছানা গাছে উঠতে গিয়ে ধপ্পাস! ও বাবা ফের লাফ দিয়ে উঠে পড়েছে খুব। আরেকটা কেমন উদাস মুখে নিমগাছের ডালে বসে দেখো! একগাদা কাজ থাকলে আমিও অমন মুখেই বসি অবশ্য।
আর ছোট কুকুরটা আর তার মা বাবাটার কথা বলিনি বুঝি? ও বাবা তারা আরেক! ছোট কুকুরটা এসেছে সেদিন আমার গায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলবে বলে! পালিয়ে বাঁচি কোনোরকমে। ছোট কুকুর অবশ্য দুটো। একটা খুবই দুবলা। মরেই যবে মনে হয়। সেদিন দেখি সকালে দুটোয় খুব গররগরর করে খেলে টেলে ওদের মায়ে কাছে গিয়ে খুব দুধ খেলো। শেষে বিরক্ত হয়ে মা'টা রোদে হাঁটু মুড়ে বসেছে একটু অমনি একটা ছানা গিয়ে খুব আদিখ্যেতা করতে গেছে। "এই তো খেলি আবার জ্বালাসনি, একটু শান্তিতে বসতেও দেবে না" ভাব নিয়ে মা কুকুরটা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বসল।
এরকম হাবিজাবি ফুত্তিতেই ২০২৩ ফুরোলো।নটে গাছ তো মুড়োয় না, আজকের দিনে সুতো ধরে কাল থেকে নতুন হাবিজাবি হবে আবার।