Thursday, October 12, 2023

ইউকে ডায়রি (এক)

বেড়ানোর গল্প ঠিক কখন শুরু হয়? ব্যগ গোছানোর সময়, স্বপ্ন দেখার সময় না পৌঁছে যাবার পর? কে জানে! সে ছিল একটা গরমের সকাল, যখন জানা গেলো, ময়ূরাক্ষী চার্লস ওয়ালেস ফেলোশিপ পেয়েছে। আমাদের এবারের ঘোরার গল্পটা মনে হয় সেই সময় থেকে শুরু। তিন সপ্তাহের কাজ করার জন্যে, যাওয়া আসা থাকা খাওয়ার অল্প একটু ওরা দেবে বাকিটা তোমার নিজের। সে অর্থে আমাদের মতো ট্যাঁকখালির রাজাদের,  "চল তবে একই সাথে ঘুরেও আসি" বলাটা মানায় না বটে। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিমান আমাদের অতিবড় সাপোর্টারও বলবে না। সুতরাং, কড়া ব্যাকপ্যাকিং প্ল্যান করা শুরু হল, যা আমাদের বয়সের সাথে হয়তো খুব উপযুক্ত নয়, কিন্তু কী আর করা। মোটামুটি ওই তিন সপ্তাহ আমিও ওখান থেকে কাজ করবো, আর ময়ূরাক্ষীও নিজের কাজ করবে। ছুটির দিন গুলোয় ঘুরে বেড়াবো। আর শেষে এক সপ্তাহ দুজনেই ছুটি নিয়ে না হয় ঘুরে বেড়াবো। তিন সপ্তাহে দুজনের কমন ছুটির দিন ওই রবিবার গুলোই হবে, তাই আরো এক দুখানা ছুটি দুজনেই নিয়ে নেবো খন!


বেড়ানোর গল্পের আগের এ ভনিতাটুকু দরকার, কারন এরপরে মাস দুই আমাদের সংগ্রামের কাহিনীটুকুও লিখে রাখি৷ নিজেরাও কখনো বড় হলে ফিরে দেখে অবাক হবো হয়তো। ভিসা খরচ তো স্ট্যান্ডার্ড,  আমাদের দেশ থেকে পশ্চিমের দেশে যাবার মূল খরচ তো দুটো জায়গায়। যাওয়া আসার টিকিট আর থাকার খরচ। বাকিটা তবু খানিক নিজের হাতে থাকে। অতয়েব সস্তার ফ্লাইট আর সস্তার থাকার জায়গা খোঁজা শুরু হল। কোলকাতা থেকে সব ফ্লাইট কেন জানিনা সাত আট হাজার টাকা বেশী হয়। দুজনের সেটা তারমানে চোদ্দো পনেরো হাজার বেশী হয়ে যাবে। সুতরাং অনেক পারমুটেশন কম্বিনেশন করে মুম্বই থেকে যাওয়াই সাব্যস্ত হল। কিন্তু মুশকিল হল, আমাদের কপাল নিয়ে আমাদের খুবই নিশ্চিত কিছু বিষয়ে। আমাদের তাড়া থাকলে আমাদের লাগেজ সব চেয়ে শেষে আসে, আমাদের টাইট স্কেডিউল থাকলে ফ্লাইট ডিলে বা রিস্কেডিউল হয় (ইন ফ্যাক্ট এইবারেও যাবার সময় চার ঘন্টা ডিলে হয়েছিল ফ্লাইট)। সুতরাং আমাদের মাঝে অনেকটা সময় লে ওভার রাখতে হবে মুম্বই নামা আর ওঠার মাঝে। সে আমরা মেনে নিয়েছি, যাবার দিন আমি মুম্বই এয়ারপোর্টে বসে কাজ করেছি আর ফেরার দিন দুজনে গল্প করে, ঝিমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। পনেরো হাজার আমাদের জন্যে অনেকই। 

মুম্বাইতে বসে থাকতে থাকতে

পরের ত্রাহিমাম দশা হল বাড়ি পেতে। চেনা,  আধচেনা, বন্ধু, এক্স কলিগ কাউকে বাকি রাখিনি বলতে যে এক মাসের জন্যে একটা ঘর ভাড়া পাওয়া যায় কিনা। ব্যপার হল বিএনবি পাওয়া যায় বটে। কিন্তু বিএনবির লোকেশন খুব দূর হয়ে যাচ্ছে, আমরা যে জায়গায় চাইছি তার তুলনায়। সেন্ট্রাল লন্ডনে থাকার কথা ভাবাও যায়নি, কিন্তু তাতেও বিএনবির খরচা অনেক বেশী পড়ে যাচ্ছিলো , আমাদের বাজেটের তুলনায়। নানান অ্যাপ আছে ঘর খোঁজার সেসবে আবার সমস্যা হল, ডিপোজিট চায়। দেখিনি শুনিনি ফস করে অগ্রিম ডিপোজিট চাইলে আমাদের বুক শুকোয় বটে। টাকাটা নিয়ে চুপচাপ কেটে পড়লেও আমার কিচ্ছুই করার থাকবেনা। শেষে যাবার দিন দশেক আগে যখন আমাদের প্রায় সব আশা শেষ তখন মরীয়া হয়েই একটা ঘর ঠিক করা গেলো, অল্প খানিক অগ্রিম দিয়ে। এই ঘর খোঁজার সময় বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে বটে।অনেক পরিচিত বন্ধুরা তাদের পরিচিতদের হদিশ দিয়েছিল। তাদের কেউ কেউ বলেছে এ সময় কেন যাচ্ছি, কেউ বলেছে এত কম বাজেটে লন্ডনে থাকা যায় না, সেভিংস ভেঙে বাজেট বাড়াও (সেভিংস ভাঙা ছাড়া আমাদের মতো লোকের বাজেট আসবেই বা কোত্থেকে)। এক জুনিয়র তো ভয়ে কন্ট্যাক্ট করাই বন্ধ করে দিয়েছিল, অথচ তার আগে অব্দি নিয়মিত বাজে বকতে ফোন করতো! কেউ কেউ তাদের বাজেটের হিসেবে বলেছে আরে এ তো থ্রো অ্যাওয়ে প্রাইস নিয়ে নাও। ধন্যবাদ তাকে, এই থ্রো অ্যাওয়ে প্রাইস লব্জটা আমাদের জীবনে বেশ একটা বিনোদনের জিনিস হয়েছে। বাজেটের বাইরে কিছু দেখলেই বলি, আরে নিয়ে নে থ্রো অ্যাওয়ে প্রাইসে দিচ্ছে! তবে সব চেয়ে সেরা বিনোদন দিয়েছিল একজন, একটা হোটেলের ঠিকানা দিয়েছিল। যার দাম অনেকটা ওই, রুটি খেতে পায়না তো কেক কিনে খাক এর মতো।  তবে ভালো অভিজ্ঞতাও কম না। যেমন,  এক দাদার বন্ধু আমাদের বিনামূল্যে তার বাড়িতে থাকতে বলেছিলেন। ওঁর বাড়িটা ময়ূরাক্ষীর  কাজের জায়গা থেকে সুবিধাজনক দূরত্বে ছিলনা কিন্তু এই বলাটা আমাদের হৃদয় ভরিয়ে দিয়েছিল। আরেক বন্ধুর বন্ধুর থেকেও উষ্ণ ব্যবহার পেয়েছিলাম। পৌঁছে যাবার পর খোঁজও নিয়েছিল।

কুয়েতে লে ওভার ছিল, এয়ারপোর্টে বাংলাদেশী, চীনা, আর আরব শেখদের দেখা যায় বেশী। বাংলাদেশী দু রকম দেখলাম, এক,  মহিলারা পুরো আগাপাশতলা ঢাকা, চোখ দুটি ছাড়া। দুই, মহিলারা স্বাভাবিক পোশাক পরা। আরব শেখদের ব্যপারটা আলাদা। তাদের পুরুষরা সাদা জোব্বা মাথায় লাল টুপি, আর তাদের বউ হল, হয় বোরখা মোড়া বা, শুধু মুখ টুকু খোলা। যাদের মুখটুকু খোলার সুযোগ আছে, তারা খুব প্রসাধন চড়িয়েছে। ওইটুকুতেই  শখ পূরণ আর কি!  ফেরার সময় আরেক মজার জিনিস দেখেছিলাম। আমাদের দেশে যেমন তীর্থস্থানে লোকেরা খালি গায়ে, বা চাদর জড়িয়ে, বা অনেক সময় মন্দিরের পাশে চেঞ্জ করে যায়, শেখগুলো এয়ারপোর্টেই চান টান সেরে, গায়ে কোমরে সাদা তোয়ালে জড়িয়ে জেদ্দা চলেছে। আর প্রতিটা এরকম শেখের বউরাই কালো জোব্বায় আগাপাশতলা ঢাকা। পুরুষদের আব্রু থাকতে নেই আর মহিলাদের আব্রুর একেবারে হদ্দমুদ্দ। ঝাঁ চকচকে আধুনিক এয়ারপোর্টে, প্রাচীন মনোভাব থুড়ি আজকাল তো সংস্কৃতি বলা দস্তুর এসবকে, দেখলে বেশ বোঝা যায় তেলের ক্ষমতা। 

কুয়েতে ভোর

লন্ডনে সেপ্টেম্বরে গেলে মানুষ এক ব্যাগ সোয়েটার নেবেই। ঠান্ডা হবে খুব নির্ঘাত। আর ঠান্ডা!! গরমে অস্থির। ইমিগ্রেশনে রীতিমতো কোলকাতার মতো ঘামের গন্ধে চারপাশ ম ম করছে। চারদিকে প্রচুর বাংলাদেশী,  বাংলায় সাইনবোর্ড অব্দি লেখা। কুয়েতেও ছিল অবশ্য। ওখানে দেখেছিলাম  টয়লেটে বাংলা হিন্দি আর ইংরেজিতে লেখা বেসিনে পা ধোবেননা। হিথরোয় ভীড় খুব, কিন্তু সুসংবদ্ধ।  ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কির ব্যপার নেই।  দুটো জিনিস হিথরো এয়ারপোর্ট থেকে শুরু হবে আর আগামী একমাস সর্বত্রই দেখবো, এক   এই ডিসিপ্লিন ব্যাপারটা, ধাক্কাধাক্কি না করে ট্রেন থেকে আগে নামতে দিয়ে তারপর ওঠা  হোক বা যে কোনো জিনিসের জন্যেই হোক। এর আগে ইউএসে , সিঙ্গাপুরে সর্বত্রই এটা দেখেছিলাম অবশ্য। আমাদের কেন নিয়মানুবর্তীতা নেই? স্কুলে শেখানো হয় না তা তো না। আমার বেশ মনে আছে , লাইন করে প্রেয়ারের পর ক্লাসে যেতে হত । সব স্কুলে কি তাই হয় না? আর দুই নাম্বার হল, এই লোক সামলানো, ঝাড়পোঁছ করা, সিকিউরিটি ইত্যাদিতে দক্ষিন এশিয়ার লোক না হোলে আফ্রিকান লোক বেশী। সাদা চামড়া কম।  যাইহোক, রাতে বাড়িওয়ালা একটা টেবিল ফ্যান দিয়েছিল ভাগ্যিস। যদিও ভোরে গা শির শির করছিল।




টায়ার্ড কিন্তু উৎসাহের কম নেই


বাড়ির সামনে
  

বাড়িওয়ালা একজন প্রবাসী বাঙালী। জন্মকর্ম বেনারস, লখনৌ, পুনে এসব জায়গায়। এই পরিবারটার সাথে থাকা আরেক অভিজ্ঞতা। আসছি সে কথায়। যাইহোক, বাড়িওয়ালার কাছেই জেনেছিলাম কাছাকাছি গুরুদ্বোয়ারা আছে। ফ্লাইট ডিলে, ২৪ ঘন্টার বেশী হয়ে গেছে ভালো করে ঘুমোইনি। সুতরাং গুরুদ্বোয়ারাতে রাতে খেতে গেলাম, রান্না করার আর দম ছিল না। ম্যাগি বানালে হত হয়তো, ওটা থাক, পরে আরো আতান্তরে পড়লে হবে খন।প্রচুর খাওয়ায় গুরুদ্বোয়ারাতে। পোলাও, রুটি, চানা, কালিডাল, বেগুনের তরকারি, দই, পায়েস। এই গুরুদ্বোয়ারা কিন্তু যারা ব্যকপ্যাকিং করতে চায়, তাদের জন্যে বড় ভালো জায়গা।  আমার খুবই অবাক লাগে, এরা ফ্রিতে এত সার্ভিস দেয় কিভাবে? মানে খাওয়ানোতে একটা বড় খরচ তো আছেই, কিন্তু অমলিন ভাবে লোকের এঁটো পরিষ্কার করে চলে, খাবার বানায়। ভক্তি ব্যপারটা বড় অদ্ভুত, ভালো মন্দ কত কীই যে করাতে পারে। 


সকাল সকাল উঠে চা বিস্কুট পাঁউরুটি খেয়ে, ঝোলায় পাঁউরুটি ডিম কলা পুরে(রাতেই কিনে এনেছি) শুরু হল আমাদের ঘোরা। ছুটির দিনগুলোয় শহর চষে ফেলার ইচ্ছে আছে। কটা দিন মূলধন, যতটা পারা যায় দেখে নিই। আজ সারাদিনে সাড়ে তেরো কিলোমিটার হেঁটেছি৷ ঘুরেছি মূলতঃ সেন্ট্রাল লন্ডন। তাও বেশ খানিক বাকি আছে। কাল খানিক হবে। বাকি আবার অন্য কোনোদিন। 

টিউবে চড়ার অভিজ্ঞতা কালকেই, এয়ারপোর্ট থেকে বাড়ি যাবার সময়। খুব নতুন অভিজ্ঞতা কিছু না আমার। এরকম মসৃন জালের মতো ট্রেন আমি আগে চড়েছি কিন্তু নতুন দেশে সব কিছুই ফের ভালো লাগে। আমার এমনিতেই বুদ্ধি কম বলেই হয়তো, সহজে আনন্দিত, বিস্মিত ভালো লাগায় বুঁদ হতে পারি। তা নতুন অভিজ্ঞতা হোক কি পুরোনো।  আজও টিউবে করেই যাওয়া আসা। মাঝে একবার বাসও নিয়েছি। দোতলা লাল বাস।  টিউবের তো নানান লাইন আছে, আমাদেরটা পিকাডেলি লাইন, এটা নাকি, ১৬০ বছর আগের। ভাবো একবার, আমাদের দেশে যখন হারামজাদারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে নিজেরা "দায়িত্ব" নিয়ে জ্বালাতন শুরু করেছে, নিজেদের দেশে এমন চমৎকার জিনিস চালু করেছে। যাইহোক, নিজেদেরও দোষ দিই, কতটুকু আমরা করেছি এতদিনে। এতদিনে আমরাও কি এরকম জালের মতো একটা নেটওয়ার্ক তৈরী করতে পারতাম না? টাকার জন্যে সবটা আটকায় তা নয় কিন্তু, কিছু জিনিসের জন্যে মন মানসিকতা লাগে স্রেফ। ধরো, এই যে ডিসেবলড মানুষদের জন্যে ইউকে বলো ইউএস বলো সব জায়গায় র‍্যাম্প থাকে,  না হলে, পাটাতন বেরিয়ে আসে বাস থেকে, হুইল চেয়ার ওঠার জন্যে, এটার জন্যে কি খুব টাকা পয়সার দরকার হয়? আমাদের এমপ্যাথি কম খানিক। "নিজের গাড়ি করে যাবেন এত অসুবিধে থাকলে" এ জিনিস আমাদের মতো গরীব দেশেই মানায় বুঝি! যাকগে, টিউবের সিটগুলোর মাঝে হাতল থাকায় আমার মতো লোকেদের জন্যে ভালো। নাহলে দাদা চেপে বসুন করে বড় চেপ্টে যাই।


টিউবে





অস্থায়ী ঠিকানায়

ট্যাঁকের জোর না থাকলে স্যন্ডম্যান ট্যুরটা বেজায় ভালো ব্যপার। টিপস বেসড ট্যুর হয় এদের। অলি গলি ঘোরায়, সহজ সুবিধেজনক জায়গা থেকে, ভীড় এড়িয়ে বিখ্যাত জায়গা গুলো দেখায়, গল্প শোনায়। সব গল্প তো আর গুগল করলেই মিলবে না।  আর এই ট্যুর গাইডদের সেন্স অফ হিউমার চমৎকার হয়। আমাদের ঘোরাবে, হার্বি। সে ভারী মজার লোক। গল্প করে অ্যাক্টিং করে সময়টা জমজমাট করে তুলল।সারা রাস্তা নানান গল্প নানান ইতিহাস,  ম্যাজিক দেখিয়ে চলল। আসলে সে ছিল স্ট্রীট পারফর্মার।বয়স হয়েছে, হাঁটুর জোর কমে গেছে, তাই এখন ট্যুর গাইড হয়েছে। হাঁটার স্পীড দেখে মনে হবেনা অবশ্য যে এর পায়ের জোর কমেছে। ট্রাফালগার স্কোয়ারে এসে অভিনয় করে গল্প শোনালো কেমন করে অ্যাডমিরাল নেলসন মরে যাওয়ার আগে বলেছিল দেশে মাটি পেতে চায়, সমুদ্রে ডুবতে চায়না। নাবিকেরা মদের পিপের মধ্যে পুরে তাকে এনেছিল বটে কিন্তু মুশকিল হল, সেই মদের মায়া ছাড়াতে কেউই পারেনি, সবাই সেই মরা ডোবানো মদই স্ট্র দিয়ে টেনে খেয়ে, জেনারেলের দেহের বদলে চাটনি এনে হাজির করেছিল ইংল্যান্ডে। গল্প শুনে চারদিকে সাহেব মেমরা চোখ কপালে তুলছে যখন ফোকাস ঘুরিয়ে দিল সিংহের দিকে। "এই দেখো আমাদের জাতীয় পশু সিংহের মূর্তি, কিন্তু ব্রিটেনে সিংহ তো বললেই পাওয়া  যাচ্ছে না, সুতরাং এডউইন ল্যানসিয়ার যখন দায়িত্ব পেলো স্কাল্পচার বানাবার, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করলো কবে একটা সিংহ মরবে চিড়িয়াখানায়।  সে বেচারি আর জানবে কী করে তার মরার জন্যেও মানুষে বসে থাকে। ফলে বছর দুই বেঁচেই নিল। কিন্তু মরা সিংহ তো রানীর শাসন শোনেনা, ফলে কাজ শেষ হবার আগেই সে গেল পচে। ল্যান্ডসিয়ার তখন বাড়ির বেড়ালের পা এর মতো করে এর সিংহের পা বানালো, পিছনটা বানালো তার অ্যালসেশিয়ানের আদলে আর মুখটা,  হ্যাঁ মুখটা সিংহের মতোই বটে। সুতরাং দেখে নাও, আমাদের জাতীয় পশুর মূর্তি আসলে, বিড়াল, কুকুর আর সিংহের গোঁজামিলে তৈরী"। ন্যশনাল আর্ট গ্যালারিতে একবার একজন চুরি করেছিল, প্রোটেস্ট করার জন্য। চমৎকার গল্পটা শোনাবার আগে বলল, "জানোই তো, আমরা সব সুন্দর আর্ট বানিয়েছে যে সব দেশ,  সেই সব  দেশে গিয়ে বলি, ওহ বানিয়েছ বটে কিন্তু তুমি আর আর্টের কি বুঝবে! ও জিনিস  আমায় দিয়ে দিতে হবে, কারন তুমি বানালেও আমি খুব আর্ট বেটার বুঝি।" সত্যি বলতে এর পরেও হার্বির ফ্যান না হয়ে থাকা যায় না মশাই!

উইজার্ড হার্বি


এটাই নাকি ডায়গনালির উৎস

জায়গায় জায়গায় বড় বড় পার্ক। আমাদের দেশের উঠোনের মতো না, বিশাল এলাকা নিয়ে বড় বড় গাছ, ফুটবল মাঠ, টেনিস কোর্ট, হাঁটার জায়গা অথচ কোনোটাই জায়গাটাকে সম্পূর্ণ  কৃত্রিম করে ফেলেনি। আমাদের দেশে লোভ বেশী না বাঁচতে না জানার অজ্ঞতা বেশী? হার্বির সাথে ঘোরার পর থুতুহীন, কুকুরের হাগুহীন, গুটখার পিকহীন  ঘাসে বসার লোভ সামলানো গেলো না। বড় গাছের ছায়ায়, কাঠবিড়ালিদের সাথে সবুজ ঘাসে আরামে বসে থাকার আনন্দই আলাদা। অনেকক্ষন ধরে বসে বসে করা সস্তার লাঞ্চ (পাঁউরুটি, ডিম কলা) । আসলে খাবারের থেকেওই দুজনে বসে বসে এলোমেলো বকবক করা, শিশুর কৌতূহলে কাঠবিড়ালি দেখার আনন্দটা বেশী। হেঁটে বেড়াই গাছের মধ্যে দিয়ে দিয়ে। হুট করে উঠে পড়ি বাসে কংবা ট্রেনে। চিনতে না পেরে, এক দু স্টপেজ আগে নেমে পড়ি। সবই নতুন তাই খারাপ লাগে না কিছুই। পা টনটন করে, তারপর যেই দেখতে পাই হুট করে ১৬৬৫ সালের চার্চ টুক করে ঢুকে পড়ি। এ যাত্রায় আমাদের ফক্কা পকেট সামলাতে খাবার দাবার বাইরে খুব কমই খেয়েছি। ইচ্ছে সামলেছি। আর নিজেদের বলেছি বড় হলে খাবো বল? 

রাজহাঁস এমনিই গর্বিত হয় এ তায় খুব রাগী মত ছিল


হার্বির গল্প শুনতে শুনতে পোজও দেওয়া যায়


বাকিংহাম প্যালেসে সে সময় চেঞ্জ অফ গার্ড হচ্ছিল


্সেন্ট জেমস পার্ক

সেইন্ট জেমস পার্ক



9 comments:

  1. বাহ বাহ। বেশ মাখন মাখন হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ 😀 - প্রদীপ্ত

      Delete
  2. তোর মন যেন চিরকাল তোর লেখার মতো থাকে। কোনোদিন যেন বড় না হয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ - প্রদীপ্ত

      Delete
  3. দারুউউণ হয়েছে রিক!! কোনো পত্রিকায় দিলি না কেন??

    ReplyDelete
  4. হুম, পুরোটা লিখবে, স্কটল্যান্ড পড়ার জন্য অপেক্ষা করছি। কারণ আমরাও প্রথমবারে এমনই কয়েন টিপে টিপে বেড়াতাম। তবে সেই ১৯৮৪ সালে মিউজিয়ামগুলো বিনি পয়সায় ঢুকতে দিতো। এখন আর দেয় না। পি করতেও কুড়ি সেন্ট নিতো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. বেশীরভাগ মিউজিয়াম এখনো ফ্রি আছে, তবে পি করতে পয়সা আজকাল আর নেয় না। সভ্য হয়েছে খানিক আর কি। - প্রদীপ্ত

      Delete
  5. Apnar lekha r dhoron ta onnorokom...onek kichu jana jae

    ReplyDelete