Wednesday, December 27, 2023

চড়ুইভাতি

কাল তুমুল আনন্দে কেটেছে দিন। কেন আনন্দ যদি বলো তাহলে আমি বলব নেশায় ছিলাম বলে।
মদ, গাঁজা, তামাকজাত বস্তু, কোকেন এসবের বাইরে সে নেশা। এতই তূরীয় সে আনন্দ, রাত দুটো অব্দি অর্থহীন আনন্দে ডুবে সাড়ে নটায় খোঁয়ারি কেটেছে। ও হ্যাঁ কী যেন বলছিলাম, আনন্দ। তা সে আনন্দ যজ্ঞের উপাদানে খুব বিজ্ঞাপিত কিছু ছিল না তেমন। আমবাগানে চট, পুরোনো শতরঞ্চি, ছাতা পরা মাদুরে থেবড়ে বসে রাধাবল্লভী আর আলুরদম, বাড়ির বানানো মাফিন, কফি চা খাওয়া।  পিকনিক বাস্কেটে সকাল সকাল সব কিছু গুছিয়ে তুলছে কেউ, মজা পুকুরের পাশে কাঠপিঁপড়ের কামড় খেয়ে ঘুমোচ্ছে কেউ। রোদ পড়া মাঠটায় শুকনো গোবরের পাশে অত্যন্ত অদক্ষ চারজন মিলে ব্যডমিন্টন খেলা। এবং ফের অকারন হাসিতে লুটোপুটি খাওয়া।
আমাদের ইস্কুল কলেজে লাইফ স্কিল শেখায় না। তাই আনাড়ি হাতে পাতা, ঘুঁটে কাঠ ঠেসে দিই উনুনে। উনুন নিভে যায়। পরিত্রাতা হয়ে আসে রান্নামাসী যার বাড়ি এখানেই। উনুনের ধোঁয়ায় চোখ থেকে জল বেরিয়ে যায়, তারপরেও মহানিন্দে আগুনে কাবাব ঝলসাই, সসেজ সেঁকি। সসেজ, কাবাবের কেউ কেউ উনুনে পড়ে যায়, ছাইমাখা সে মাংসও জলে ধুয়ে ফের সেঁকে খাওয়া হয়। ধুলোয় ধোঁয়ায় এলার্জির কথা মনেও পড়েনা। মনে পড়েনা, স্বাস্থ্যবিধির কথাও। তারপর আগুন নিভু নিভু হয়ে এলে রসুন, কাঁচালংকা ঠাসা বেগুন পোড়ানো হয়। টমেটোও। শীতের পড়ন্ত বেলায়, কলাপাতায় ধোঁয়াওঠা ভাত, বেগুন পোড়া  মুরগীর মাংস আর চাটনি। 
তারপরেও অদ্ভুত চড়ুইভাতি, অদ্ভুত দিন শেষ হয়না। বয়সের হিসেবে তাদের এত অকিঞ্চিকর জিনিসে খুশী হবার কথাই না। কিন্তু তারা হয়তো বড় হয়নি। না হলে রোদ নেমে যাওয়া বিকেলে অমন করে হাসিতে লুটোপুটি খেতে খেতে কান ফিসফিসের মতো বালখিল্য খেলায় মজবে কেন! যাই বলো কান ফিসফিস বড় মজার খেলা। আম আঁটির ভেপু হয়ে যায় কাঠবেবুন। আয়না ভরা দিন হয়ে যায় আয়নায় অশরীরী।  স্বপ্নে পাওয়া দিন হয়ে যায় স্বপ্নাদেশে ঠাকুর পোষা।
ক্রমে গাছতলার আশ্রয় ছেড়ে ঘরে ফিরি। কয়েকজন তখনও নেশায় টইটম্বুর।কম্বল কাড়াকাড়ি করে তারা বই পড়ে, বা সবাই মিলে ফের আইস এজ দেখতে বসে। তারপর নাইন্টিজের যত অদ্ভুত গানের ভিডিও দেখতে দেখতে ফের অর্থহীন মানেহীন হুল্লোড়। নেশায় ছিলাম বলেই মনে হয়। এ নেশায় বুঁদ হতে কী যে লাগে তাও জানিনা, যে পারে সে পারে আর কি। ওই ফিরতি পথে ভাতের হোটেলটার মতো। সে ভাতের হোটেলটা অদ্ভুত। একটা কুকুর একটা বিড়াল একটা মানুষ বুড়ো একটা মানুষ বুড়ি। কুকুর বেড়াল কেউই পোষা না। কিন্তু তাদের মেজাজেই বুড়ো বুড়ি অস্থির। আমাদের খুব নালিশ করল, বেড়ালটার দুধে জল মেশালে বেড়াল আর সে দুধ খাবে না, আর ভাত ফুরিয়ে গেলে যদি অন্য হোটেল থেকে ভাত এনে দেওয়া হয়, তাহলে আর কুকুরটা সে ভাত খাবে না! নালিশ করতে করতেই কুকুর বিড়াল দুজনকেই ডেকে বিস্কুট খাওনো হল।
বলছিলাম না আনন্দের নেশায় কী যে লাগে কেউ জানে না, খুঁজে পেলে মানিক পেলে না পেলে নাই।













1 comment: