Wednesday, January 1, 2020

হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার

কাল এক বন্ধুর বাড়ি জড়ো হয়েছিলাম কয়েকজন। আড্ডা মেরে খেয়ে দেয়ে হুট করেই ইচ্ছে হয়েছিল আরেক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে সারপ্রাইজ দেবার। কাল মদ টদ খাওয়ায় হবে জেনেই গাড়ি নিয়ে বেরোয়নি, এক বন্ধু তার সাইকেল বের করল, সাইকেলের পিছনে বসে মাতাল, হুল্লোড়ে মানুষ আর কুকুরের পাল সামলে মিনিট কুড়ির কোলকাতার রাস্তা। ভারী অদ্ভুত লাগছিল, আজ থেকে এক নতুন দশক শুরু হল। এক দশক আগে এরকম মাঝরাতে সাইকেলে করে বেরোবো এ ভাবতেই পারতাম না।জীবনের এই যে বাঁক গুলো দেখা যায়না,  স্পীডে গাড়ি চলতে চলতে বাম্পার চলে আসে, মনে হয় অনন্ত খারাপ রাস্তা খালি আছে সামনে, তারপর কখন যেন ফের রাস্তা মসৃন হয়ে যায়, দুপাশে গাছ দিয়ে ঢাকা রাস্তায় ঢুকে পড়া যায় আচমকাই, এতেই বাঁচাটা বড় রোমাঞ্চকর মনে হয়। এরকমই কোনো পয়লা জানুয়ারি একলা বরফঢাকা এয়ারপোর্টে বসে কেটেছিল, কোনোটায়  বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রনায়, কোনোটায় মা পরের দিন মটরশুঁটির কচুরি করবে সেই আনন্দে,আবার কোনোটা কিচ্ছু না স্রেফ আরাম করে ঘুমিয়ে। 

 রাত দেড়টা বলে মনেই হয়না!! এত লোক এত গাড়ি। একটা ছেলে মাতাল হয়ে তার বাবাকে চেঁচিয়ে বলছে, "ঘরেএএ ঢোক বলছি, চল ঘরে চল"।  আর তার বাবা তাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে চলেছে, সংলাপ অদলবদল হয়ে গেছে আর কি মদের প্রভাবে। একত্রিশে ডিসেম্বর মানেই মদ খেতে হবে আর তারপর এরকম ছড়াতে হবে এমন নিয়ম কবে হল কে জানে! একটা গলিতে ভুল করে ঢুকে পড়েছিলাম, রাস্তা গোলমাল করায়, দেখি এক গাড়ি ছেলে মেয়ে মিলে গাড়ি থামিয়ে, অসংলগ্ন ভাবে কী সব যেন বলছে। এক মোড়ে কিছু লোক খামোখা বাওয়াল দিয়ে দিল একটা খালি ট্যাক্সিকে, কেন যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা লোককে হর্ণ দেবে! মাতালদের পাশ কাটিয়ে চলেছি আমরা। সাইকেল দেখে কেউই কিছু বলছেনা,খালি একপাল কুত্তা তাড়া করে আসা ছাড়া। বাপ্স কামড়ে দেবে নাকি! পায়ের গুলিটা তাক করেই ছুটছে যে! একটা পুলিশের গাড়ি টহল দিচ্ছে। উৎসবের রাতে এদের জ্বালা বাড়ে।

সকালের রোদে চোখ খোলে, ঘুম পুরো না হওয়ার জ্বালা নিয়ে। বন্ধুরা মিলে হইচই করে লুচি বানাই, ট্যারাব্যাঁকা, শক্ত, খড়মড়ে লুচিই হেব্বিই স্বাদ আনে নলেন গুড়ের সাথে। আহা এমন রোদ মাখা সকালে নলেন গুড়ের সঙ্গতে যে সকাল শুরু হয় তা খারাপ হতে পারেনা। একটা কাক এসে বসে জানলায়, এই নে তুইও একটা খা গুড়ে মাখা লুচি, বচ্ছরকার দিন বলে কথা! রাস্তাঘাট, বাস, সব ফাঁকা ফাঁকাই। অফিস পাড়া শুনশান করছে। অটোটা একটু দূরে নামিয়ে দিয়েছে, হাঁটছি। ভাতের ঝুপড়ি বা ঝুপ্স অধিকাংশই বন্ধ। একটা চা পাঁউরুটির দোকানে দেখি একটা লোক আর মেয়ে উদাস হয়ে বসে আছে। আজ বিক্রীবাটা নেই মোটে। রোজটা গেল। ছুটি নিলেই পারতো তো? একদিন বেশ মেয়ের বা ছেলের সাথে কাটাতে যে ইকোপার্ক কিংবা চিড়িয়াখানা,  এমন উদাস হয়ে বসে না থেকে। আসলে আমাদের মধ্যে ভালো থাকা অপরাধ এ ছোটবেলা থেকে গুঁজে দেওয়া হয়, "দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরছিস, ভালোইই তো আছিস",  "ওর আর কি, বিয়ে থা হয়নি, দিব্যি আছে",  "ওদের ঘোরাঘুরির সমস্যা কি, বাচ্ছাকাচ্ছা হয়নি, ভালোইইই আছে"।  সব কটা "ভালোইই" একটা অদ্ভুত সুরে শ্লেষের সাথে বলা! যেন ভালো থাকাটাই দোষের। সারাক্ষণ "খুব চাপে আছি" বললেই তুমি দায়িত্বশীল কর্মঠ একজন মানুষ। 

এত চাপ নিয়ে বেঁচে কি হবে! বুড়ো হাড়ে পাহাড় বাইতে পারবেন না, লজেন চিবিয়ে আরাম পাবেন না, নদীর জলে নামলে ঠান্ডা লাগবে, সুগারে নলেন গুড় নিষিদ্ধ হয়ে যাবে আর ফোকলা দাঁতে মাংসের হাড় চিবিয়ে সুখ হবে না। এই নতুন বছরটা উদযাপনের হোক না, ভালোবাসার, ভালোথাকার। শুভেচ্ছা রইলো।

4 comments:

  1. সুন্দর লিখেছ। ^_^

    ReplyDelete
  2. হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার, প্রদীপ্ত! নতুন বছরের শুরু এমন সুন্দর হয়েছে যখন বাকি বছরটা খারাপ কাটতেই পারে না। অনেক শুভেচ্ছা নিয়ো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ কুন্তলা।তোমার কেমন কাটলো নতুন বছরের প্রথমদিন? সারা বছর খুব ভালো কাটুক।

      Delete