Monday, May 6, 2019

শাটলে

মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, হাতে একটা প্লাস্টিক, একটা জলের বোতল, জানলার ধারটা চেয়েছিল কুন্ঠিত হয়ে, মাথা ঘোরে।

এমনিতেই যেদিন গাড়ি বের করতে পারিনা, শাটলে হাঁটু, কনুই, বগলের চাপে মেজাজ খিটকেল থাকে। জানলার ধার পেলে কে ছাড়ে! একটু হাওয়া অন্তত আসবে খোলা অংশটা দিয়ে। এই লোহার বাক্স গুলো ঠিক মানুষের জন্যে বানানো না মনে হয়, অত সেফটি ফিচার টিচার নেই। আরাম তো দূর কি বাত। ঠাসাঠাসি করে মাঝের অংশে তিন তিন ছয়, সামনে দুই, পিছনে চার। সামনে দুই আবার দুরকম, ইঞ্জিনের উপর আসন পাতা উঁচুতে বসা একজন আরেকজন ভালোভাবে বসা, এগুলো একটু পুরোনো। আরেকরকম হল, ছোট্ট দেড় জনের জায়গায় দুজনকে বসতে হয়, এর ঘাম ও মেখে, এগুলো একটু নতুন।
মাঝের জায়গাটায় যদি স্বাস্থবান পুরুষ বসে তো সেই একই ঘামতে মিলিল ঘাম কেস। আর যদি স্বাস্থবতী মহিলা বসেন তো চিত্তির আরো বাড়ে। তাঁকে "টাচ" না করে মোবাইলে খুটুরখাটুর বা বাইরে তাকানো। ফলে জানলার ধার পেলে কে ছাড়ে আর!

লোকটাকে ভালো করে দেখলাম একবার। সস্তার সিন্থেটিক গেঞ্জি, হাতের রঙ লাগানো নখে ময়লা, রোদে লালচে হয়ে যাওয়া চুল,গালে এদিকাসেদিক ভালোভাবে না ওঠা খোঁচা দাড়ি,বসে যাওয়া চোখ। ধান্দাবাজ অফিস পার্টি না আমার মত। দেখে অসুস্থ মনে হয়।হাতের প্লাস্টিক দেখে মনে হচ্ছে তো রিপোর্ট.... টাটা মেডিকেল যাবে কি?
লিখতে এতক্ষন লাগলো, কিন্তু দেখতে আর ভাবনা মাথায় আসতে কয়েক সেকেন্ড। জানলার ধার ছেড়ে মাঝে বসলাম। কানে গান হাতে ফেসবুক...লোকটাকে দেখছি। অবাক চোখে গলা বাড়িয়ে বাইরেটা দেখছে। এ পাড়ায় তেমন আসেনা নির্ঘাত। জানলা পেলেও তো মোবাইল চোখ কেড়ে নেয়, এমন করে আর কজন বাইরেটা দেখে! স্বস্তি বোধ করছিলাম, জানলা আজ ভালো সহযাত্রী পেয়েছে। লোকটা যেন গিলে নিচ্ছিল বাইরের সব টুকু, ছাতু মাখা খাওয়া বুড়ো, ঝকঝকে ফুলে সাজানো রাস্তা, স্কুল ব্যাগ কাঁদে ছাত্র, ভোঁ বাইক হাঁকানো ছেলেটা, সব সব.....

আরেসের কাছে এসে জড়ানো গলা কি যেন বলল সামনের ছেলেটাকে, ছেলেটা কায়দা করে শ্রাগ করলো। কেমন ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে আমার দিকে তাকালো দেখি....
-কোথায় যাবেন?
-নারকেল বাগান কখন আসবে?
জড়ানো গলা ভালো বোঝা যায়না। আহারে অসুস্থ লোকটা মনে হয়। বললাম যে আমারা নারকেল বাগান অনেক্ষন ছেড়ে এসেছি। লোকটা কেমন হতবাক গলায় বিড়বিড় করলো, "কিন্তু আমি যে নামিয়ে দিয়ে বলেছিলাম"।

তারপর স্ক্রীন ভাঙা একটা সস্তার এন্ড্রয়েড থেকে কাকে যেন ফোন করে জিজ্ঞেস করলো। এবার বলে সিরিঞ্জবাগান/শীরিষবাগান। ভালো বুঝলাম না। ততক্ষনে আমার নামার জায়গা এসে গেছে। শাটলওয়ালা, খুব বিরক্ত নিয়ে বলল, " মনে করিয়ে দেবে তো। আমার অত খেয়াল থাকে?"
লোকটা খাবি খাওয়া মত করে বলল, "এখানেই নেমে যাব? " শাটলওলা আমার ফেরত দিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষনে।

আমার জানা হল না, এই ভয়ানক রোদে লোকটা কেমন করে ফিরতি পথ পাড়ি দিলো...আজকাল তো ছায়া নেই তেমন আর.... কি জানি ছায়া পেল না বোতলের জলটুকু ভরসায় পাড়ি দিল।

No comments:

Post a Comment