Tuesday, November 20, 2018

একদিন বেলায়

এদিকটা কেউ আসেনা। ভাঙা জিনিসপত্র পড়ে থেকে থেকে ঘাস বেড়ে উঠেছে এলোমেলো। কদম গাছের ডালে একটা পাখি বাসা বেধেছে, পার্থেনিয়ামের ঝাঁকে প্রজাপতি উড়ছে দিব্যি। আচ্ছা প্রজাপতিদের শ্বাসকষ্ট হয়না, এলার্জি হয়না? এই হলুদ প্রজাপতি গুলোর টাইগার প্রিন্ট ছাপ, লাল সুতোর বিড়ি না কি যেন নাম। যাকগে আমার কি! দুটো সারস লম্বা লম্বা ঠ্যাং ফেলে ভাবছে আজ কাবাব খাবো না কাচের বয়ামের কেক খাবো?

রোদের তেজ আছে, আবার নেইও। মানে ফেসবুকের মতন আলগা সম্পর্কে থাকলে গায়ে লাগে না তেমন কিন্তু একটু বেশীক্ষন থাকলে গা চিড়বিড় করে। দুটো কাঠবিড়ালী ব্যস্ত ভঙ্গীতে বাদাম না কী যেন খাচ্ছে, কদম গাছের ডাল থেকে টুপ করে একটা কদম পড়লো। কদম বর্ষাকালের ফুল না? 
অথচ নোংরা নেই তেমন, সাধারনত পিছন দিক গুলোয় যা হয়েই থাকে। আমার একটু ভীড় এড়ানো দিকগুলোয় হেঁটে বেড়াতে দিব্যি লাগে, ঝুম হয়ে বসে থাকলেও মন্দ না। দূরে ফ্লাইওভার দিয়ে বাস গাড়ি সাঁই সাঁই বেরিয়ে যাচ্ছে....এমন সময় সে এলো।

খুব ভয়ানক বুড়ো একজন। মনে হয় দু কদম হেঁটে তিন কদম পা দিলেই মরে যাবে এক্ষুনি। খক খক করে কাশছে, মাঝে মাঝে থুতু ফেলছে। এ কেন এলো এখানে! আমার একার রাজত্বে দখলদারী! চলে যাবে ভেবে সরে এসে বসলাম। গেলো না। ভালো করে তাকিয়ে দেখি লোকটার সারা গায়ের মাকড়সার ঝুলের মতো কুয়াশা। নভেম্বরের রোদ সে কুয়াশা ভেদ করতে পারে না যেন। থুতু, বুড়ো, কুয়াশা কিছুই ভাল্লাগেনা আমার, আমি সরে এসে বসি।

তাতে লাভ কিছুই হয়না দেখি। কুয়াশাটা দিব্যি ডালপালা লাভ করেছে পাশের ছাতিম গাছটা জড়িয়ে, ধোঁয়ার মত করে। কুয়াশার সাথে কথা বলা মুশকিল, তায় সে যদি আবার জ্যান্ত কুয়াশা হয়। আমি তবু যেতে পারছি না এখান থেকে। ওইদিকে একটা চা এর দোকান আছে, তার পাশে একটা ছানা নেড়ি কুকুর এসে উঁকি মারছে কুয়াশার পাশ দিয়ে।

বুড়ো মাথা নীচু করে চা এর ভাঁড়ে বিস্কুট ডুবোচ্ছে, লাঠি আঁকাবাঁকা, পাশে শোয়ানো। পুরো জায়গাটার পাশ থেকে একফালি রোদ উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করছে কী ব্যাপার। দু হাত দিয়ে দিয়ে কুয়াশা সরিয়ে ভাবছে একটু চা এ চুমুক দেবে কিনা। কিন্তু এন্ট্রি পাচ্ছে না মোটেও।

এদিকে কুয়াশায় মাখামাখি হয়ে ঘাস গুলো, গাছগুলো বিরক্ত করছে আমায় বেজায়। রোদের এন্ট্রি নেই যেখানে, ঋকানন্দও নেই সেখানে। কিন্তু জ্যান্ত কুয়াশা তো সোজা জিনিস না, সে এতোক্ষনে বেশ স্বাস্থ্য বানিয়েছে। বুড়ো আরো যেন বুড়ো হয়ে গেছে। পাঁচিল এর শেষ সীমায় একটা বন্ধ ঘর আছে, বুড়োর পাশটাতেই। ব্যাটা কুয়াশাটা বুড়োর দাড়ি, ঝোলা, বন্ধ ঘর পেয়ে মাথা নেড়ে গান গাইছে আবার। ধুত্তোর ছাই ওদিকে আবার ছানা কুকুরটা তাকাচ্ছে দেখো! কুকুর আমি মোট্টে ভালোবাসিনা। তায় আমার এমন সাধের জায়গায়। কিন্তু অমন খিদে খিদে, দাওনা চোখে, ছোট কুকুর ছানাও মোটে ভালোনা।

একিরে বাবা! এ ব্যাটা তো খেতেও পারেনা। ওই দেখো, ওর মা টা তো সব খেয়েই নিলো। আর বোকাটা গুঁড়ো গুলো খাচ্ছে। মা কুকুরটার পেটে মনে হয় এক কুয়ো সমান খিদে। যা তুইই খা।
আরে রোদটার একটু গায়ে গত্তি লেগেছে , বুড়োটার জামা থেকে কুয়াশা গলে চাএর ভাঁড়ে পড়ছে....

No comments:

Post a Comment