Friday, December 30, 2022

ইয়ার এন্ড - ব্যলান্স শিট

বছর প্রায় শেষ হতেই চলল।মানে ক্যালেন্ডার ইয়ার। আমার জন্মদিনের বছর থেকে ধরলে সবে শুরু, ফিনাশিয়াল ইয়ার ধরলে ঢের দেরী,  আপিসের ইয়ার শেষ হওয়া ধরলেও সবে মাঝ বয়স। ক্যালেন্ডার ইয়ারের হিসবেই ভাবা যাক। মাঝে মাঝেই ভাবি জীবনের উদ্দেশ্য কী? ভেবে কূল পাইনা তেমন। ঋকানন্দ মহারাজের তো সাধনায় সিদ্ধি হয়নি এখনো, তাই বুঝেই পাইনা এই যে জীবন খানা পাওয়া গেছে এ নিয়ে ঠিক কী করার ছিল আমার?  সেদিন বন্ধুদের আড্ডায় সবাই আওয়াজ দিচ্ছিলো যখন,  আমার কথায় কথায় চল বেড়াতে যাই নিয়ে আমিও খুব বলছি তামাশা করে, "না না,  বেড়ানো আবার কেন! ওসব ভাল্লাগেনা, সারা সপ্তাহ কাজ করবো,  উইকেন্ডে শপিং মলে যাবো কিংবা কাছাকাছি সাজানো রিসর্টে, ফূর্তি করে মদ টদ খেয়ে ফিরে আসবো। বেড়ানো ওই বছরে একবার গেলাম কিংবা দু বছরে, অত বেড়ানো ভাল্লাগেনা"। লিখতে লিখতেই শিউরে উঠছিলাম! ওরে বাবারে,  এ কী লিখছি! এ জীবন বাঁচে  বহু লোকে, তাদের সেটা চয়েস  অবশ্যই কিন্তু এ জীবন আমি পেলে পাগল হয়ে যাবো। বেড়ানো মানে ঘর থেকে বেরিয়ে এলোমেলো রাস্তা ধরে হাঁটা কিংবা কাছাকাছি কোনো গাছেদের মাঝে কিংবা জলের কাছেতেও ধরি অবশ্য আমি। সুতরাং ব্যালেন্স শীটের খাতায় বেড়ানোটাই আগে ধরা যাক। তা হয়েছে, অনেকদিনের স্বপ্নের জায়গা দেখা হয়েছে এবারে।   উদয়পুর, চিতোর, মাউন্ট আবু, সামসিং, লাদাখ, রাঁচী, নেতারহাট আর অজন্তা ইলোরা, আওরাঙ্গাবাদ; ঐতিহাসিক জঙ্গল পাহাড় ।   এছাড়া খুচরো ঘোরাঘুরি গুলোকে ওড়ালে হবে না, ওরা আমার রোজের মাছভাজা, না পেলে প্রান আনচান করে। ওই যে আমাদের আশ্চর্য পিকনিকটা, কিংবা,  শীতের কোলকাতা ঘোরা, কিংবা রাত জেগে বন্ধুর পাড়ায় ঠাকুর দেখা, কিংবা ভ্যাপসা গরমে দু উজবুকের ড্যামের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা, বটগাছের তলায় বসে গরম কচুরিতে কামড়, বর্ষার জঙ্গলে ঢাকা পাহাড় উঠতে গিয়ে ঝিঁঝির ডাক, বর্ষায় ভেজা আমলামেথি নামের গ্রামটা, অচেনা আশ্রমে হুট করে পেয়ে যাওয়া মধ্যাহ্ন ভোজন, গ্রামের রথের মেলায় বৃষ্টিতে ভেজা...  কম নয় কোনোটাই। 


আমার এক হাফ বন্ধু,  মানে পরিচিতের একটু বেশী কিন্তু বন্ধু মানে যদি বিপদের দিনে পাশে পাবে ভাবো তেমন না ,    তা সচারাচর বেশীরভাগ পরিচিতই তাইই হয় তবু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিছু উজ্জ্বল মুহূর্ত এদের জন্যেও তো মেলে তাই এ নিয়ে অভিযোগ নেই। তা যা বলছিলাম, সে ভারী মনঃকষ্টে থাকে, তার জীবনই এতো জটিল কেন, এত সমস্যা তারই কেন হয়। যেমন অনেকেরই আমাদের মনে হয়, ইনফ্যাক্ট হয়ত আম্বানির ব্যাটারও হয়। আসলে চোখের সামনে হাতের পাতা ধরলেও তা পাহাড়প্রমান হয়ে দাঁড়ায় কিনা, অমন মনে হয়।  আমারই কত্ত সময় মনে হয়েছে যে জিনিসটা লোকে না ভাবতেই পায় তার জন্য এত দৌড় কেন করতে হয়, কেন আমার বেলাতেই টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়, আমাকেই কেন একটা কাজে চারবার দৌড়তে হয়? রাগ হয়, মন খারাপ হয়, তারপর তর্ক যখন শান্ত হয়,  আঁচরদাগা বন্ধ হলে দেখি আরে খালি কোথায় হে, ঝোলা তো ভরেইছে দিব্যি। হ্যাঁ সবার ঝোলা কী আর এক জিনিসে ভরে, চেয়ে দেখ রে ব্যাটা তোর ঝোলায় যা ভরেছিস তা দাম দিলেও তো মেলে না সব সময়! তা ঝোলা বলতেই মনে হল,  মানুষের মন এক চায় করে এক এমন দলেই পড়ি আমি। ইচ্ছে আমার ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে যাই, দু চার দানা যা জোটে তাই নিয়েই চলুক দিন পাহাড়ে, নদীর ধারে, রাস্তায় কিন্তু  করার বেলায় দেখো! ঝোলা নিয়ে তাঁবু গেড়ে বসে গেলে।  আরে ও কী তোমার সয়! এক জায়গায় অনেকদিন রয়ে গেলে ঘাস,  জল সব যে পুরোনো হয়ে যাবে! চেনা জলে তেষ্টা মিটবে,প্রাণ জুড়োবে কি? সুতরাং এ বছর ঝোলা তুলে নেওয়া হল। নতুন চলা সব সময়েই অনিশ্চিত,  আকর্ষক একটু সন্দেহাকুল, তাও চলা তো বন্ধ করা যায় না।


সে অর্থে প্রতি বছরই কিন্তু কিছু কিছু পেয়ে থাকি বছরের থেকে। কোনো বিক্রিয়ার শেষ কী জানতে হলে হাবিজাবি কাজ করে যেতেই হয় যেতেই হয়, নয়ত অনন্ত অপেক্ষা নিয়ে বসে থাকতে হয় কী রেজাল্ট আসবে? প্রসেস চলাকালীন মনে হয় ধুস শালা এ কী করে চলেছি,  তারপর এক সময় জিনিসটা শেষ হলে একবার ড্রোন ভিউতে দেখলে বোঝা যায় অতটা খারাপও ছিল না পুরো ব্যপারটা।  জীবন কখন থেমে যাবে কে জানতে পারে, কখন কী দেবে তাই বা কে বলতে পারে কিন্তু প্রতিটা গবেষক, প্রতিটা ঐতিহাসিক প্রতিটা পথিক জানে শুরুর আগের সেই অকূলপাথার ভাব, পথের শ্রম  কিন্তু  পার হয়ে গেলে ওই পথটাই ভরসা জোগায়, আনন্দ দেয়....নতুন বছর আসুক সব অনিশ্চয়তা সব ভরসা নিয়ে।এ বছরটার মুচকি হেসে বলছে একবার তাকাও হে শুরুটা খুব নিশ্চিন্তের ছিল না, কিন্তু তাও তোমার যাত্রাকেমন হল বলো? ধন্যবাদ জানাই হে, অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।


2 comments:

  1. হ্যাপি নিউ ইয়ার, প্রদীপ্ত। জীবনের প্রতি তোমার ধন্যবাদজ্ঞাপন ভালো লাগল।

    ReplyDelete
    Replies
    1. থ্যাংক ইউ কুন্তলাদি। নতুন বছর খুব ভালো কাটুক তোমার।
      -প্রদীপ্ত

      Delete