Saturday, May 14, 2022

পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা.. (১)

একদম শীতের শেষে তিনটে গাছ এনেছিলাম। আমি গাছ ভালোবাসি কিন্তু যত্ন জানিনা। টবের গাছের যত্ন অনেক। বেচারাটা অল্প মাটি পায়, তাতেই মাস থুড়ি দিন চালানো কষ্টকর, তাই একটু বেশী যত্ন লাগেই। বাড় কমিয়ে কিংবা ডাল ছেঁটে। আমার এসব ভালো লাগেনা, একটা নিমের বীজ কোথা থেকে এসে পড়েছিল, তা থেকে গাছ হয়েছে, অমন একটা সজীব গাছকে মেরে ফেলার কথা আমরা ভাবতেও পারিনা, তাই নিজের মত বেড়ে উঠেছে। আশ্চর্য রকম রোগা হয়ে, বেঁটে হয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজেকে। নিজে নিজেই, বাবা হয়ত মাঝে সাঝে ডাল ছেঁটেছে কিন্তু মূলতঃ তারই উদ্যোগ ছিল বাঁচার। হাঁ করে দেখার এত কিছু থাকে আমার, আমি হাঁ করে দেখি, কেমন বিন্দাস বাঁচে গাছটা,ওর মাটি পাওয়া বন্ধুরা এই মোটা এই লম্বা এই বড়। গাছেদের আলাদা নেটওয়ার্ক,  তাই ওও জানে নির্ঘাত, কিন্তু তাতে ওর দুঃখ দেখিনা, বসন্তে কচি পাতা, ফুল, প্রজাপতি অভাব নেইই৷ 

আমার আনা তিনটে গাছই শীতের গাছ। ডালিয়া, ক্যালেন্ডুলা, আর গোলাপ। আশ্চর্যজনকভাবে তিনটে গাছই বেঁচে আছে দিব্যি। ডালিয়া ফুল ফোটায়না, একদিকের পাতা,ডাল সব মরে শুকিয়ে গেছে, অন্যদিকে দিব্যি কচি কচি পাতা! ফুল দিক বা না দিক একে উপড়ে ফেলব কেন! ফুল দিলে ভালো না দিলেও ভালো। ক্যালেন্ডুলা কুঁড়ি ধরায়, তারপর কুঁড়িতেই মরে যায়, অপুষ্টিতে হয়ত। সার দিলে হয়, কিন্তু আমার দৌড় খালি মাটি আলগা করে দেওয়া আর রোজ জলটুকু দেওয়া। আজ দেখি একটা কুঁড়ি মাথা তুলেছে গায়ের জোরে কিংবা মনের জোরে। হলুদ রঙের ছোট্ট ফুল ফুটেছে।
 গোলাপটার সব পাতা ঝরে গেল যখন কী দুঃখ কী মন খারাপ। তারপর এক সকালে দেখলাম কচি কচি পাতা হয়েছে।বেঁচে থাকা দেখতেও এত আনন্দ!  তারপর থেকে সে রোজই নতুন নতুন পাতার জন্ম দেয়। আমি মাটি আলগা করতে গেলে কাঁটায় হাত ছড়ে যায়, বকুনি দিই মাঝে, তারপর আবার সকালে জল।

আশা করে আছি একদিন গাছ বড় করতে পারা শিখবো গাছেদেরই কাছ থেকে। যেমন করে আমার বুকের মধ্যে অকারণ না পাওয়া কিংবা আরো পাওয়ার চাহিদা মাথা চাড়া দিলে শান্ত করে দেয়,সে ভাষা আমি টের পাই তেমন করেই ঠিক কী কী করলে ওদের সাথে আরো ভালো করে কথা বলতে শিখবো সেটাও বলে দেবে নির্ঘাত।আপাতত স্রেফ জল দিতে দিতে বলি, মরে যাস না...আমার ইচ্ছের জোরে চুনিপান্না হোক বা না হোক, হলুদ ফুল আর সবুজ পাতা হয়েছে,চুনিপান্নার থেকে কম কি?

No comments:

Post a Comment