Saturday, June 22, 2019

ভাবনারা

দৈনন্দিন শব্দ গুলো পরপর ভেসে আসছে, প্রেশার কুকারের হিস হিস... ফিইইইইউস, অটো সজোরে ট্যাঁ....রিকশার প্যাঁকো প্যাঁক।সকালের শব্দ। বিকেলবেলার শব্দ আলাদা। বিকেলবেলা অব্দি এখানে থাকবোনা যদিও। একটা কাচ ঘেরা জায়গায় বসে খুদকুঁড়ো জোটাবার চেষ্টা চলবে। এবার বর্ষা নামবে মনে হয়। পিঁপড়ে গুলো ডিম নিয়ে খুব খানিক ছোটছুটি করছে যেরকম তাতেই বোধ হচ্ছে। আচ্ছা পিঁপড়েরা বৃষ্টি হলে সন্ধ্যেবেলা তেলেভাজা মুড়ি খেতে খেতে ভূতের গল্প করে খুব? 
"ও বট্ঠাকুদ্দা, তোমার হুল ধরে একবার একটা পেত্নি কেমন টান মেরেছিল সে গল্পটা বলবে না?"

তখন পিঁপড়েসর্দার পাক ধরা হুলে তা দিয়ে জমিয়ে বলবে গল্পটা। আমাদের যেমন কিছু কমন ভূতের গল্প আছে, জামাই মাছ নিয়ে যাচ্ছে, মাছে দিল টান, কিংবা সিঁড়ি দিয়ে চলে গেল ঠান্ডা এক ঝলক হাওয়া যেন, এরকম পিঁপড়েদেরও কিছু থাকবে, কেকের দোকানে বেরোনোর মুহুর্তে একটা গরম হল্কা শুঁড়ের উপর ছুঁয়ে গেল, শাটার আটকে গেল মিষ্টি শেষ। কিন্তু এমন হবার কথা না, একটু আগেই তো থরে থরে মিষ্টি ছিল....

বর্ষায় নদীতে নৌকা করে ঘুরতে মজা খুব। বেশ একটা বজরা কিনবো নিজের, মাসের পর মাস ঘুরে ঘুরে বেড়াবো ফেরার কথা ভুলে। জলের মধ্যে ডুব দিলেই সেই কোন একটা পাতালরাজত্ব, রাজকন্যা ঘুমিয়ে থাকে। আচ্ছা ওই দেশেতে ইন্টারনেট আছে? লোডশেডিং হয়? নাকি পোকা টোকা দিয়ে আলোর ব্যবস্থা হয় আর হাঙরের মুখ দিয়ে পাঠানো হয় খবর? পাখি দেখলে হেব্বি অবাক সবাই, আরে দেখো এটা কি? জলের তলায় পাখি একটা সেনসেশনাল ব্যপার। নীল মাছ গুলো হলুদ কোরালের কাছে ঝাড়ি মারে আর পাত্তা না পেলে ভাবে দাঁড়াও না একটু বড় পাখনা হলেই কেমন সাঁ করে কত্তদূর চলে যাব আর ফিরবোই না। নিজের পাড়ায় নিজের থালায় বসে বুড়ো সমুদ্র ঘোড়া ভাবে যা যা, কিন্তু এই যে নাতি পুঁতি নিয়ে গুষ্ঠিসুখ করছি শেষবয়সে এর মজা পেতে তো ফিরতেই হবে। ওদিকে রাজকন্যা ঘুমিয়েই থাকে, তার সোনা কাঠি বদলে দেবার রূপকথারা কবেই মরে হেজে গেছে।

একদিন টানা বৃষ্টিতে মাঠে যাব ধান রুইতে, বাড়ির সবাই মানা করবে, তোর রোগা শরীর, তোর যাবার কি দরকার বলে বকবে, কিন্তু তবুও এক ফাঁকে পালাবো, যেমন পালাই। টুপটুপ জলে কাদা কাদা মাঠে পা গেঁথে যাবে, নিজের হাতে গাছ লাগাবার মজাই আলাদা। আর সে গাছ যদি বেঁচে যায়, ফল দেয় তবে বড় মুশকিল, অমনি মায়া জন্মে যাবে। সেই কোন একজন মুনি ছিল মনে আছে? সব ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে শেষে একটা ছাগল না কার জন্যে মায়ায় আটকে পড়ে গেছিল, পরের জন্মে তাই জড়ভরত হল, সেই সন্ন্যাসীর মত কেস হবে। তারচেয়ে ব্যাসদেবের মত নিরাসক্ত হাপ গেরস্ত টাইপ হওয়া ভালো, সমস্যা এড়ালোনা, ফেস করলো, দিয়ে চলে গেল।

জ্বর হলে আবোলতাবোল ভাবনা আসে। আবোলতাবোল স্বপ্নও।একটা বাড়ির স্বপ্ন দেখছিলাম যেখানে গেলে আর হুঁশ জ্ঞান থাকে না, বাইরের খারাপ ভালো কিছুই মনে পরে না, বাড়ির বাইরে যাবার ইচ্ছে করে না....তারপর বেরিয়ে আসলে কোনোভাবে, দেখা যায় ওখানে কিছু ছিলোই না। আমার স্বপ্নেও পালানো হয় না বাস্তবেও না।

No comments:

Post a Comment