Tuesday, December 25, 2018

এদিক সেদিক

বারবিকিউতে পয়সা তোলার জন্য মনের জোরে পেটকে বস্তার মত করে গিলেছি। ভিখিরিপনা বলতে পারেন, কিন্তু মহারাজদের ওইরকমই নিয়ম। মাঝে এলিয়ে পড়েছিলাম, নাভিশ্বাস উঠে গেছে ভেবে ওয়েটাররা সাবান জল এনেদিল, আহা হাত ধোবার জন্য না, খেয়ে বমি করার জন্য। তা বমি করে খেলেও হয় ভাবতে ভাবতেই আরো খানিক খেয়ে নিয়েছি। পাশের টেবিলে লোক বদল হল, আমি আর উঠিনা...শেষে কিরকম কড়া চোখে দেখতে লাগলো যখন আমায় ওয়েটাররা, আর আমারও ভুঁড়ি যখন থুতনি বেয়ে এসে টেবিলে পড়ব পড়ব হলো আমিও উঠে পড়লাম।

যাই হোক এত খেয়ে কোনোরকমে গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ারেস্ট কোথায় বিনা পয়সায় গা এলানো যায় দেখলাম। তা ময়দানটাই বেস্ট এ আর বলার কি! কিন্তু ময়দানে ঢোকার আগে দেখি একটা দরজা হাফ খোলা, বড়লোকদের বাগানওলা বাড়ির মত। আমি ভুঁড়ি নিয়ে ঢুকবো কিনা ভাবছি, আটকে গেলে টানাটানিতে লাগবে খুব। দোনোমনা করে ঢুকিই গেলুম। আরিব্বাপ্রে একটা সাজানো গোছানো পার্ক তো! মাঠে ঘুমোলে মেরে তাড়াবে নাকি?

এখানে লোকে প্রেম করতে আসে। একা শুলে মারবে এমন না নিশ্চয়ই? ভারী নিঃঝুম দুপুর এখন চারদিক। শীতের হাওয়ার টান আছে শীত নেই। আলতো রোদে পাঁচিলের ঘুপচিতে একটা কুকুর ঘুমুচ্ছে দিব্যি আরামে। ওইদিকে কতকগুলো মালী বাগান সাজাচ্ছে। নানান দিকে নানান রকম প্রেম, ওই যে কোলেকোলে প্রেম, মানে প্রেমিকাকে কোলে তুলে নিয়েছে আর কি। আর ওই যে দন্ডায়মান হয়ে গাছে ঠেস দিয়ে, স্ট্যান্ডিং প্রেম...আচ্ছা এদের পায়ে ব্যথা করে না?

সিপাহি আগে....ফরোয়ার্ড মার্চ... মানে মুখোমুখি ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে ফরোয়ার্ড ব্লক আর পিছন্দিকে হেলে গেছে দুজনেই, ব্যাকোয়ার্ড স্ট্রেচ....প্রেম করলে ব্যয়াম জানা জরুরি দেখছি রীতিমতো!

নানারকম দেখতে দেখতে ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। মালী এসে তাড়া দিলো, হেই ওঠো ওঠো, এটা ঘুমাবার জায়গা নাকি! লেহ্! যাকগে এমনিতেও বেলা পড়ে গেছে এরপর ঘুমোলে কানে ঠান্ডা ঢুকে যাবে। ফের রাস্তায়, হরেক কিসিমের মানুষ দিয়ে কোলকাতার বিকেলবেলা ঠাসা। একটা ট্যাক্সিওয়ালা উদাস মুখে বসে আছে। আচ্ছা অ্যাম্বাসেডর এর ডিকিতে কি নির্লিপ্ত বস্তা থাকে? সব ট্যাক্সিওয়ালা গুলোই কেমন সন্ন্যাসী ভাব নিয়ে বসে থাকে, কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই!

ঘুরতে ঘুরতে শহরে অন্যদিকটা চলে এসেছি। এখানটা ঠিক শহর না, শহরতলি। অন্ধকার নেমে আসতে ঠান্ডাও নেমে এসেছে খানিক এদিকটায়। ধোঁয়াশা আর অন্ধকারের আলোয়ান গায়ে মেখে চায়ের দোকানে দিব্যি আড্ডা বসেছে। 
"নারদ কে ছিলো জানো?"
- তুমি বলো না? 
- আগে বলো জানো কিনা। কই রে নবা, চা টা কই....

ওদিকে সব্জির বাজার জমে উঠেছে," মটরশুঁটি সত্তর টাকা? কদিন হয়নে রে তোর?"

সবজি বাজার পার করলে বুড়োটে মিষ্টির দোকান, দানাদার, রসগোল্লা আর পান্তুয়ার গামলা নিয়ে টিমটিম করে দাঁড়িয়ে। দোকানের মানানসই ভাঙা বেঞ্চ, ঘোলাটে চশমা পরা বুড়ো। পাশেই তেলেভাজার দোকান জমজমাট। দুটো বউ খুব করে ধনেপাতার বড়া ভাজছে। লোকটা হাতে হাতে চা দিচ্ছে।

রাত নামছে,কুয়াশায় মাখামাখি হিম লাগা রাত। আচ্ছা এই রকম রাতে কোলকাতার রাস্তায় পার্কে গাছেদের যে মিটিং বসে তাতে মিটিং মিনিটস বানাতে হয়? এক দুটো গাড়ি চলে যাবার আগের মুহুর্তে যে রসিকতা হয়েছিলো, গাড়ি যাবার সময় মিউট করে রেখে ফের চালু হয়?

গাছগুলো যেন বুঝতে পারে আমার বক্তব্য, মিচকি হাসলো কি?পা চালাই....

No comments:

Post a Comment