Sunday, August 19, 2018

গোল্লাছুট


কিছু না কিছু সকলেই পারে৷ কেউ ভালো গান গায়, কেউ আঁকে,  কেউ বাজায়, আমি কিছুই পারিনা এসব তাই আমি খালি মানুষ বানাই। মানুষ বানানো বুঝলে না? আচ্ছা বলছি, আমরা হলাম গিয়ে এক রকম প্রাণী,  যাদের খেলনা বাটি হলো গিয়ে এই পৃথিবীর মতো নানান গোলক। আমাদের জোনটার জন্য পৃথিবী বরাদ্দ হয়েছে। মূল ডিজাইনটা অনেক আগেই ঠিক হয়ে গেছিলো, এখন যা চলছে ওই ডিজাইনের উপর বেস করেই এনহ্যান্সমেন্ট বলতে পারো। আসলে একেবারে বসে তো থাকা যায় না, এবার তুমি কি করছ না করছ তোমার রিসোর্স নিয়ে তা রিপোর্ট করতে হয়। এবার তোমায় দিয়ে যদি কোনো প্রফিটই না হয় মানে তোমার জোন থেকে তাহলে তোমাদের হটিয়ে দেওয়া হবে। প্রফিট বলতে তোমাদের টাকা পয়সা ভেবো না আবার। প্রফিট মানে ধরো পৃথিবীতে একটা সুর সৃষ্টি হলো, সেই সুর ঝরনার জলে মিশলে নীল সাদা পাথর তৈরী হয়, তারপর ধরো জঙ্গলের গন্ধের সাথে মায়ের আঁচলের গন্ধ মিক্স করে যে আরাম তৈরী হলো, কিংবা নীল ঝকঝকে আকাশের বুকে যদি একটা পদ্মপাতায় বসে পিঁপড়ে আর মাছে গল্প করে তাহলে সেই রঙ দিয়ে রামধনু মেরামত করা যায়, এইসব গুলোই প্রফিট। এরকম নানান জিনিস আছে, কিন্তু কিছুই না হলে তাহলে আর পৃথিবী পোষা কেন!

আমাদের জোনে সবাইই যে আমার মতো কিছু পারে না তা নয়, আমিই খালি এরকম হয়েছি। অনেকে মানুষ বানায় আবার সুন্দর করে আঁকে। কেউ কেউ গাছ বানায় আবার মানুষও বানায় এরকম।  যেহেতু আমি খালি মানুষ বানাই, আমার হাতে বেশ খানিক সময় থাকে। মানুষ বানাই মানেই যে সে যা কাজ কর্ম করবে তা বলে দিইনা, তাহলে ব্যাপারটা ভারী বোরিং হয়ে যাবে বলেই আমাদের তরফ থেকে এটা করতে অস্বীকার করা হয়েছিলো। সেও অনেক আগেকার গল্প, যাই হোক। আমি মানুষ বানাই আর দেখি। আসলে আমার তেমন বন্ধু বান্ধবও নেই,  সেই ছোটবেলা থেকেই। আমায় দেখতে একটু অন্যরকম কিনা। কিরকম? তোমাদের বললে ঠিক বুঝবে না, আসলে আমরা কেমন সেটাই তো তোমাদের বোঝানো যাবে না, তাহলে অন্যরকমটাই বা কেমন করে বোঝাই! 

আচ্ছা চেষ্টা করছি। এই যে আমাদের খেলনাটা, মানে পৃথিবীটা, আহাহা চটো কেন, তোমরা আমাদের দেখতে পাও না কিনা তাই ভাবো এ তোমাদের, আমরাও যেমন খেলতে খেলতে ভাবি এ আমাদের, আসলে কারোরই না। আসলে এই ধরো আমাদের প্রত্যেককে তো একরকম দেখতে না,  আমাদের সবার নানান রকম জিনিস তোমরা দেখতে পাও কিন্তু। লেজ, শিং,  ক্ষুর, দাঁত, হাত, পা, চোখ, জিভ, নাক, স্বর, ভাব সব সব কিছু আমাদের কারোর না কারোর আছে, এবার আমাদের মধ্যে যখন কেউ কিছু তৈরী করে করে সে তার একটা বৈশিষ্ট্য ঢুকিয়ে দেয়। ধরো না কেন এই লেজ, ব্যাপারটা খুবই কমন কিনা তাই দেখবে তোমাদের আশেপাশে যারা আছে তাদের লেজ আছে বেশীরভাগেরই।  এবার আমায় দেখতে একেবারেই আলাদা, মানে আমার লেজ শিং ক্ষুর ইত্যাদি কিছুই নেই। তাছাড়া আমি আগেই বলেছি, আমার বিপদ সেন্স করার ক্ষমতা থেকে গান বাজনা করার ক্ষমতা কিছুই নেই। তাই আমি দেখি বেশী, নিজের মনে।

মানুষ হয়েও গেছে অনেক। আর মানুষ না ছাড়লেও হবে, কিন্তু সব মানুষ তো আমরা তৈরী করি না, কিছু কিছু মানুষ আবার মানুষ নিজেরাও তৈরী করে। ফলে ব্যাপারটা ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ গোল্লাটার প্রজেক্ট হয়তো আমরা আর কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট করে দেবো। খুব কিছু পাওয়া যাচ্ছে না এখান থেকে, খালি মানুষ গুলো দিনরাত কাটাকাটি মারামারি করছে, তেমন ভালো কিছু তৈরী হচ্ছে না, মানুষ বাদে বাকি প্রাণীগুলোও ঠিক নিজেদের গ্রুম করতে পারলো না, মেলে ধরতে পারলো না। এইযে পিঁপড়ে এদের এতো বুদ্ধি দেওয়া হলো,  বৃষ্টি ঝড় সেন্স করতে পারার ব্যাটারা চিনির দানা খুঁজেই গেলো। 

এসব নিয়ে আমরা খুব বেশী ভাবি তা না, করুক যা ইচ্ছে, ইচ্ছে থাকলে পৃথিবীটা বাঁচিয়ে নেবে সবাই মিলে না হলে মরে যাবে এই তো কথা! আমাদের অনেক অন্য জায়গা আছে, সেখানে ফের নতুন করে সব শুরু হবে। হ্যাঁ কোনো প্রজেক্ট এর সাপোর্ট বন্ধ হয়ে গেলে খানিক কর্মশূন্যতা তৈরী হয় বটে, উপরের কর্তাদের কিছু চাপও হয় কিন্তু আমাদের রিসোর্স অনেক, আমরা জানি কিভাবে ফের রিইনভেন্সটমেন্ট করে নিতে হয়। তাই আমরা কেউ চাপ নিই না। খালি আমি,  আমি তো ওদের মতো হইনি, ফলে এই হেরো লোকগুলোর উপর আমার আলতো একটা মায়াও আছে, বোকাগুলোর উপর রাগ যেমন আছে তার সাথেই। 

তোমরা যখন একটা বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাও অন্য শহরে, কেমন মায়া মায়া চোখে দেখো না সব? এটাও আসলে ইনহেরিটেন্স,অল্প করে মায়া ব্যাপারটাও দিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। তোমাদের এ গল্প শোনাচ্ছি কেন? আমার মনে হয় তোমরা যারা এ গল্প পড়ছ তারা হয়তো একটু আলাদা, পড়াশোনা বা খেলাধূলো বা গান বাজনা এসব কোনো কিছুতে সেভাবে দাগ কাটোনি কখনোই, খারাপ কাজও খুব বেশী করতে পারোনি যেমন ভালো কাজও করোনি। তোমরা আসলে আমার তৈরী মানুষ, সবাই না, যারা এসব কিছুর মানে খুঁজে পাওনা, কোনো জায়গাতেই থাকো না যেন তারা।  বাকিরাতো এ গল্প শুনতে পাবে না। তোমাদের মন খারাপ হয় না? এমনি এমনি মন খারাপ? জানি তো আমারও হয়। কী করবে তখন? আমি জানিনা। বরং তোমাদের বলি আমি সারাদিন কেমন সব লোক দেখি। 

ওই দেখো বাইকে করে দুটো লোক যাচ্ছে। একটা গুঁফো লোক যে চালাচ্ছে বাইক আর একটা দেড়ো লোক যে বাইকের পিছনে। কেমন নিস্পন্দ মুখ দেখো, এ নির্ঘাত নিজের কাজের জায়গায় খুব ভালো, আপিসের পর আড্ডা মারে, বাড়ি এসে বারমুডা কিংবা পাজামা পরে খালি গায়ে টিভি দেখতে বসে, মাঝে মাঝে বগল চুলকে নেয়, তারপর রাত বাড়লে এক থালা ভাত খেয়ে সিগারেট খেয়ে ঘুম যায়।
আচ্ছা ওই লোকটা দেখো, ফর্সা, ট্রিম করা দাড়ি, ব্রান্ডেড চশমা, গেঞ্জি, ফোন। এরও কেমন নিস্পন্দ মুখ। এও ওই রকমই করে, গান শুনতে শুনতে আপিস যায়, আপিসে কাজ করে তামাশা করে, শুক্রবারে বাইরে রেস্তোরাঁয় যায়, রাতে ল্যাপটপ কিংবা ফোনে থাকে খানিক তারপর ঘুম যায়।

বোরিং মনে হচ্ছে? তা তো হবেই এরা সব কটাই বোরিং, আচ্ছা চলো তোমায় একটু দূরে নিয়ে যাই। কোথায় যাবে? পাহাড় না সমুদ্র? সমুদ্র? তা বেশ, ওখানে লোক বেশী পাবে  বটে। ওই দেখো,  দুজন লোক তাদের বউ মেয়ে নিয়ে এসেছে। দুটো পাপড়িচাট কিনে শেয়ার করছে, লোকটার আরেকটু খেতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু বউটা খাবে বলে কম কম করে খাচ্ছে দেখছি। আবার বউটা কম কম খেয়ে মেয়েটাকে আর অন্য বউটাকে একটু দিচ্ছে, সে আবার একটু খেয়ে পাশের জনকে.......বড় মায়া হে বড় মায়া। 

আচ্ছা শামুক দেখবে? ওই দেখো, একটা শামুকের পিঠে একটা পিঁপড়ে চড়ে কেমন গল্প করছে। আমি ওদের নাম জানি, ওদের গল্প ওরা নিজেরাই এসে বলে যাবে খন। এদিকটা বড় ভীড়,  চলো একটা গান ভেসে আসছে ওই দিকে বালিয়াড়ির ওদিকটা থেকে। আমি গাইতে পারিনা বটে কিন্তু শুনতে ভালোবাসি বেজায়। তোমরা শুনতে পাচ্ছোনা না? স্বাভাবিক, জোরে জোরে তো গাইছে না কেউ। হাওয়ার সুর, ঝাউগাছের বাজনা সমুদ্রে ভোকাল...লিরিক্স? ওই যে মাছ গুলো ঘাইমারছে, আর লাল কাঁকড়া গুলো হুটোপুটি করতে করতে কি সব বলছে শোনো.... 
ওই দেখো একটা মেয়ে একটা পাখির ছানাকে কোলে করে তুলে নিয়ে গেল, ওইই দেখো বুড়ো মাঝি ভালোবেসে ছেলেটাকে কাঁকড়া দিচ্ছে একটা বেশী.....

তোমাদের উচ্ছন্নে যেতে আরো কিছু বাকি আছে মনে হয়। তোমাদের গোলকের এখনো কিছুদিন আয়ু আছে দেখছি।

6 comments:

  1. সুন্দর ভাবনা, ভালো লাগলো

    ReplyDelete
  2. এবার Old Man and the sea টা gift দিতেই হচ্ছে

    ReplyDelete
  3. Maya o ekta inheritance Tintin. Ki chash bol. Anything for you.
    Boi hotobhaga

    ReplyDelete
    Replies
    1. মহাস্থবির জাতকটা দিস তবে 😎😎

      Delete