Wednesday, May 20, 2015

বাহনের গপ্পো

গাড়ি বাপারটা আমায় সেই ছোটবেলা থেকেই বেশ টানে। ছোটবেলায় কন্ডাক্টার হবার খেলাটা আমাদের বয়েসীরা ছোটবেলায় কমবেশী  সবাই খেলেছি। অনেক বড় বয়েস অব্দি আমার শখ ছিল আমি ট্রাক ড্রাইভার হব।  ঐরকম মাঠ ঘাট বেরিয়ে যাব, ধাবায় থেমে খাব. তারপর খোলা আকাশের নিচে ঘুমোনো। সব মিলিয়ে ওই জীবনটা খুব টানতো। সাথে ইচ্ছে মত গাড়ি চালিয়ে এক সর, রাজ্য পেরিয়ে অন্য জায়গায় পারি দেব।  কিন্তু ওই জীবনটা পেতে গেলে জ সুখ সচ্যন্দ তা ফেলে দিতে হবে সেটা আমার পক্ষে পারা সম্ভব না যখন বুঝলাম সেফ খেলা শুরু হলো।  হতাশা গ্রস্থ ভাবে লিখছি এমন না, আমি মনে করি বসবে ট্রাক ড্রাইভার হলে ওই স্বপ্নটা ফুরিয়ে যেত, আর খুব বিরক্ত হলে, হতাশ হলে, মন কেমন করলে ওই জবন্তায় চলে যাব যেত না যখন তখন. 
সে যাক যে কথা বলছিলাম, গাড়ি।  আমার কিন্তু গাড়ি চরে তত আগ্রহ ছিল না, চালানোতে। আমার বেশ মনে আছে ছোটবেলায় আমাদের গাড়িতে আমি উঠতেই চাইতামনা, কারণ আমার খুব গন্ধ লাগত তেলের আর গা গলাত। তার চেয়ে দাদের মোটর সাইকেল এর এ চড়া অনেক সহজ ছিলো।  মোটর সাইকেল স্টার্ট দিলে জ গন্ধটা বেরোত বাড়ি চমত্কার লাগত আমার। আমার গ্রামের বাড়ির ওদিকে সাইকেল তা অবশ্যম্ভাবী বস্তু আর মোটর চ্য়্চ্লেতা তখন আসতে আসতে অবশ্যম্ভাবীর  দিকে যাচ্ছে। আমাদের বাড়িতে কেউ একজন এসেছিল, মোটর সাইকেল এ করে. তখন মোটর সাইকেল বলতে "হামারা বাজাজ" নয়তো M-৮০, আর একটু রেয়ার ছিল রাজদূত।  তো আমি যথারীতি m-৮০ উপর চরে কল্পনায় রাস্তাঘাট মরুভূমি সব এক করে এগিয়ে চলেছি, এদিকে গাড়িটা স্ট্যান্ড করা ছিল একটু নড়বড়ে জায়গায়।সে আমার কল্পনার দৌরাত্য সজহ করতে না পেরে নিজেকে সরিয়ে নিল আর আমিও .... সায়লেন্সারটা  বেশ গরম ছিল সেটা এখনো মনে আছে ভালই।
ক্লাস ৪ এ পড়তে সাইকেল পেয়েছিলাম, নিজের না অবশ্যই। আমার ছোটবেলা কেটেছে মধ্যবিত্ত জয়েন্ট ফ্যামিলিতে।  নিজের সাইকেল ৫-৬ এ ওঠার আগে ভাবা যেতোনা।  আর আমি যেহেতু ক্লাস ৫ থেকেই হোস্টেল এ আমার নিসস্ব সাইকেল হয়নি কখনই। । তবে সত্যি বলব সাইকেল আজও আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা যান।  ফোর  এ যখন প্রথম প্রথম সাইকেল এ করে স্কুল যেতাম মনে আছে বাস রাস্তা দিয়ে যাবার অনুমতি ছিল না। অন্য একটা রাস্তা যেটা একটু ঘুরে যায়,  গ্রামের ভিতর দিয়ে সেটা দিয়ে যেতাম। আর সেই সময়কার ওই রাস্তা পুকুর, মাটির গন্ধ, ঝি ঝি ডাক আমার মনটা এমন আচ্ছন্য  করে ফেলেছে সেই ঘোর  থেকে আজ কাটাতে পারিনি। সেইসময় আমি সাইকেল চালাতাম যখন নিজের সাথেই কখনো রেস  করতাম, কখনো ভাবতাম আমি দারুন এডভেঞ্চার এ বেরিয়েছি, ডাকাতদের থেকে গুপ্তধন  উদ্ধার করে যাচ্ছি আর পিছনে অদৃশ্য ডাকাতরা তাড়া  করেছে তাদের সর্দারের খুনের বদলা নিতে। সবকটা কল্পনাই  বইয়ে  পড়া গল্প গুলো এধার ওধার করে হত কিন্তু সেই সময় আমার সাইকেল, পক্ষিরাজ থেকে কিরিটির  গাড়ি, সবই হত। 
কৈশোরটা ওই সাইকেল এর ঘঘোরেই  কেটেছে। বড় হয়েও আমি কলেজে পড়তে সিকিউরিটি এর থেকে বেশ কয়েকবার সাইকেল নিয়ে চলে গেছিলাম, কাউকে কিছু না বলে, কোনো গন্তব্য স্থির  না করে এদিক সেদিক বেরিয়ে পড়তে  বেপাত্তা হতে বেশ লাগত। অবশ্য বন্ধুরা ক্ষেপে  যেত খুব।  চিন্তা করত।  কিন্তু আমার যে কোনো উপায় থাকত না, ওই রোদ্দূর , নদীর ধার সব্বাই আমায় ডাকত, আর কারোর সাথে যেতেও ভালো লাগত না, সাইকেল  ছাড়া।  
৯-১০ এ নতুন নতুন বাইক  এর বিজ্ঞাপন দেখে খুব সখ হয়েছিল নতুন বাইক  কেনার। মাধ্যমিক দিতে যাবার সময় মাকে বলেছিলাম, রেজাল্ট ভালো হলে কিন্তু বাইক  কিনে দিতে হবে।  মা সেই ছোটো  থেকে ছেলে ভুলানো গপ্প বলে কালমেঘ এর রস পর্যন্ত খাইয়ে  এসেছে আর সামান্য পরীক্ষা! অবশ্য  রেজাল্ট ভালো হয়নি তাই সে নিয়ে আর কথাও ওঠেনি।  মাধমিক এর পর ববাইক  চালানো শিখে কি উত্তেজিত হয়েছিলাম।  যদিও খুব বেশি চালাতে  পারিনি।  তবে চাকরি পাবার এক বছর হবার আগেই আমার পক্ষিরাজ খানা কিনেছিলাম।  সেকি উত্তেজনা, সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়তাম।  প্রথম দিকে কিছুই জানতাম না, তেল রিজার্ভ এ পড়লে কি করব, কিংবা গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেলে গিয়ার্ চেঞ্জ করে সেটা আবার স্টার্ট দেব কি করে কিছু না ,তারপর কতবার পরে গেছি। আর পরে গেলেই মনে হত আমার পক্ষিরাজ টার  কোথায় চোট  লাগলো।  তারপর গলি ছেড়ে বড় রাস্তা, তারপর হাইওয়ে, প্রচন্ড দুঃখের দিনে, আনন্দের দিনে ,গরমে,বৃষ্টিতে। উপনিষদে আছে না, এ বিশ্ব প্রপঞ্চময় , আমি উপলব্ধি করতাম , আমার পালসার  এর প্রাণ আছে।  নিঃশব্দ  অনুগত সেবক।  
















বাইক  চালানোর মজা বোধহয় লিখে বোঝানো যাবেনা।  দেশের বাড়ি যাবার পথে একটা জায়গা আছে, অনেক গাছ,দুপাশে ছায়া, ভারী মনোরম একটা সকাল কিংবা দুপুর কিংবা বিকেল। ঐখানটা দাড়িয়ে প্রাণ ভরে ফুসফুসে বাতাস ভরে তারপর রওনা হতাম।  অনেক অনেক স্বপ্নের রাইড আমার ওই বাইক  এই পাওয়া।  কিন্তু আমার কালো পক্ষীরাজ  কে আমার আস্তাবল থেকে মুক্তি দিতে হলো... 
এদেশে এলাম যখন, গাড়ি বাপারটা এদের এখানে নেসেসিটি।  তবে আমি ল্যাদ খেয়ে সেটাও শিখে উঠলাম এই সেদিন। আর লাস্ট উইকেন্ড এ  রেন্ট নিয়েছিলাম। সাদা elantra , এই গাড়িটার আমার এক পরিচিত কিনতে গিয়েও কেনেনি, গাড়িটা আমর খুব পছন্দ হয়েছিল।ফলে এন্টারপ্রাইজ থেকে এই গাড়িটাই দেবে দেখে  খুব খুশি হয়ে গেছিলাম।  আমার এক বন্ধু আমার সাথে গিয়েছিল , কারণ এদেশের নিয়ম কানুন  বড় করা. আমার লাইসেন্স আছে কিন্তু যা হয় নতুন ড্রাইভার , যাতে ছড়িয়ে লাট  না করি তাই জন্যে ।  সে আমার বাড়ি অব্দি আমার সাথে এলো এবং তারপর একটা রাউন্ড পাক খেয়ে , আসে পাশে ঘুরে সে চলে গেল।  বন্ধুটির রোড সেন্স খুব ভালো, বলল এই জায়গাটা কয়েকবার পাক দিস, গাড়ি কম, ছুটির দিন আরোই কম হবে, তারপর একটু বেশি গাড়ি বহুল রাস্তায় চালাস।  কিন্তু আমার যে  রোড সেন্স কম সেটা আমি ভুলে গেছিলাম। গুগল এ  ম্যাপ সেট না করেই বেরিয়ে পড়লাম  এবং যা হবার তাই হলো, ছোট   রাস্তা(মানে কম স্পিড লিমিট ওলা  রাস্তা) ছেড়ে চলে গেছিলাম বড় রাস্তায়। ম্যাপ সেট করা নেই, জানিনা কোন রাস্তায় কত দূর যাচ্ছি। কথাও যে  পার্ক করব, সেরকম সুযোগ ও পাছিনা।  এমনিতে পৃথিবীর সব সিগন্যাল আমায় দেখলে লাল হয়ে যায় খালি সেদিনই সমস্ত সবুজ হয়ে রইলো।  অবশেষে এক সিগন্যাল পুরনো অতীত না ভুলে লাল হলো।  আমিও স্মার্ট ফোনের সুবিধে নিয়ে মুখের সামনে এনে "হোম" বলে দিলাম।  সত্যি বলব এদেশের প্ল্যানড রাস্তা ঘাট , হাতের মধ্যে মধ্যে জিপিএস বলা ফোন নিয়ে কেউ হারাতে পারেনা জানি , তবু  বেশ  একটা রোমাঞ্চ হচ্ছিল।  
পরেরবার ডেস্টিনেশন সেট করেই বেড়িয়েছিলাম।  একটু আধটু ছড়িয়ে  পৌছেও গেছিলাম।  বৃষ্টি হবার পূর্বাভাস ছিলোই , কিন্তু তাই বলে শিলাবৃষ্টি হবি, পেরথম দিন গাড়ি চালাচ্ছি ,যত্তোসব। যা হোক , যদিও ম্যাপ এ ডেস্টিনেশন বাড়ি করা ছিল, তাও ম্যাপ  এর কথা না শুনে এলোমেলো চালালাম অনেক অনেক খন।  আর যখনি মনে হচ্ছিল হারিয়ে গেছি তখন আবার জিপিএস এর  আজ্ঞা শিরোধার্য করছিলাম।  দুদিনে ১৬০  মাইল চালিয়ে , আমর ওই বন্ধু দম্পতিকে যতপরনস্তি জ্বলিয়ে , আরো দুজনকে রাইড দিয়ে( রাস্তা ভুল করেছিলাম একটু আর তাই একটা সুন্দর লেক দেখতে পেয়েছিলাম ), এযাত্রা ভালয় ভালোয়  সাদা elantra  কে তার মালিক এর কাছে পৌছে দিতে পেরেছি।  তবে যাই হোক ট্রাক ড্রাইভার হলে মন্দ হতোনা। ..



15 comments:

  1. খুব ভালো লাগল পড়ে, প্রদীপ্তা। আমারও গাড়ি চালানোর খুব শখ ছিল, কিন্তু দেশে ফিরে এসে সব চৌপট হয়ে গেছে। দিল্লিতে গাড়ি চালাতে হলে ইস্পাতের স্নায়ু আর গণ্ডারের চামড়া দরকার। দুটোর কোনওটাই আমার নেই। তাই এখন অটোভাইসাবদের দয়ায় দিন গুজরান করি। ছবিগুলোও খুব সুন্দর তুলেছ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. seto botei Kuntala Di, deshe gari chalate gele Ispat kano aro mojbut kichur snau darkar hoy, ei clutch re , pash theke manush rickshaw sob chole asbe samal re
      ...Thank you so much :)

      Delete
  2. Darun...aaro onek onek post chai r chhobi chai... Ebare ki Harley Davidson chalabe? - Saugata

    ReplyDelete
    Replies
    1. na Saugata Da, Harley na, Harley ar kolkatay kothay chalabo, ar edeshe bike chalate gele ato saj soronjam lage...

      Delete
  3. Akta jibonto golpo chokher samne dekhchi bole mone hochilo. Amar chotobelar sathe ba boro hoye uthar pore, onek ghotonari mil ache ��

    ReplyDelete
    Replies
    1. Indraneil , khub balo laglore tor comment pore :) , Thanks you

      Delete
  4. পক্ষীরাজ টাই ভালো ছিলো 😝

    ReplyDelete
    Replies
    1. pokkhiraj to obossoi bhalo chilo, cycle hok ki gari amar pokkhiraj khanar samne keu daratei parbe na :)

      Delete
  5. Tor truck driver howar sathe sathe rajmistri howar bhavna tah niyeo lekha chai.. :)

    Daruuun laglo.. !!!

    ReplyDelete
  6. Surur dikta Porte besh kosto hochilo, sesh ta jhorjhore, tor boudi k porabo, jodi vorsha bare.

    ReplyDelete
  7. Jadio anekdin bike chalachhi, bike niye amar kokhoni romantic chinta aseni.. amar bike amar kachhe time and labour saving machine hoye roilo... khub bhalo likhechhis... carry on

    ReplyDelete