Friday, May 8, 2015

নানারকম ৩

ডেনভারে মনে হয় ঋতুগুলো ঘেঁটে  গেছে বা ঘাঁটাই।  শীতের পিঠে ,নলেন গুড়ের রসোগোল্লা , ইত্যাদি সুখাদ্যের পর বসন্ত(সে যতই না কেনো  আমাদের কলকাতায় বসন্তকাল আর গরম কাল যমজ  ভাই হোক নিম বেগুন বসন্তকে ভুলতে দায় না ), তারপর গরম, আহা আমার প্রিয়। জানি লোকে পরলেই এটা মারতে আসবে।  কিন্তু ওই খাঁ খাঁ করা দুপুর এর পর বিকেলে ফুরফুরে হাওয়া , আম , পান্তা ভাত , হু হু বাইক।  তা কোনো ভালো জিনিসই তো পুরো ভালো হয়না, তাই প্যাচপ্যাচে গরমে শেষের দিকে নাকাল হয়ে বৃষ্টির হা পিত্যেশ। তারপর একদিন ঝমঝম করে বৃষ্টি নামে। সেই ঝমঝমে বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সটান হেঁটে যাওয়া, তারস্বরে গান গাইতে গাইতে।শেষে যখন বৃষ্টিতে লোকে জেরবার  তারপর তো হই হই করতে করতে একগাদা ভিড় আর সেল নিয়ে পুজো। তা যেকথা বলছিলাম।  ডেনভারে পুরো ব্যপারটা  ঘেঁটে ঘ। ফেব্রুয়ারি  মাসে তুমুর বরফ পড়ল, মার্চেও পড়ল, এপ্রিলে বৃষ্টি শুরু  হলো।  বিচ্ছিরি পচা মার্কা বৃষ্টি। ঘ্যানঘ্যানে।  এমন বৃষ্টিতে ভিজলে খালি শীত করে ফূর্তি  হয়না মোটেও। অবশ্য আমার ব্যক্তিগত কারণে বৃষ্টিটা বাজে লাগছে। এতদিন ল্যাদ খেয়ে খেয়ে আমি এই সবে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছি। কত উত্সাহ করে শিখলাম, ডাঁয়ে ঘাড়  ঘুরিয়ে বাঁয়ে তাকিয়ে , তা এই বৃষ্টির কল্যানে চালাতে পারছিনা। সকাল বিকে অফিস যাওয়া আসা মুশকিল হচ্ছে। বিশেষ করে সকাল বেলা, যদি সারারাত বৃষ্টির পর সকালটা বৃষ্টি না হয় রাস্তা দিয়ে হাটতে মন্দ লাগার কথা না।  কিন্তু দুটো কারণে লাগছে না এক আমার এরকম বিচ্ছিরি মন খারাপ করা সকাল খুব বাজে লাগে, ঝকমকে রোদ হবে তা না হলে সকালটা  সকাল বলেই মনে হয়না, আর দ্বিতীয় কারণ হলো এই বোকা কেঁচো গুলো যারা কিনা সারাটা শীত ওই বরফের তলাতেও কি করে জানি বেঁচে ছিল সেই গাধা  কেঁচোগুলো  এখন বৃষ্টি দেখে আনন্দ তাল হারিয়ে রাস্তায়। আর তারপর গাড়ির তলায়। তারমধ্যে  কোথাও ঘুরতে যাওয়া যাবে না এই সপ্তাহে এমন বিচ্ছিরি বৃষ্টি। তারমানে ঘরবন্দি।  জঘন্য।
সেই যে বলেছিলাম না হিমালয়ান কুইজিন নাম একটা ভালো রেস্টুরেন্ট পেয়েছি।  সেইখানে খেয়ে দিল জান  অতি তর হয়েছিল আমাদের সবার , তা সেটা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ মাইল হবে. শুধু খাবার জন্য এতটা  যেতে সবারই কুন্ঠা হচ্ছিল মুখে।  মানে মনে সবাই ইচ্ছে যাওয়া  হোক।  তো আমাদের দলে এক বন্ধু দম্পতি আছে তারাই খুঁজে পেতে  ঘোরাঘুরির  জন্য ওই রেস্টুরেন্ট এর কাছাকাছি একটা জায়গা খুঁজে বের করেছিল। বেড়াতে যাব আবার ভালো খেতেও পাব এই কম্বিনেশন অতি লোভনীয় , পারলে লেজ এর উপর দাড়িয়ে রাজি হই।  ব্যাস আর কি চালাও পানসি বেলঘরিয়া  থুড়ি maxwell  ফলস। 
বরফ পরা থেমে গেলে কি হবে এখনো কিছু কিছু জায়গায় বরফ জমে আছে।  বরফ গলার কারণেই হোক কি বৃষ্টি, নালার মত নদীটা বেশ জোরেই বয়ে চলেছে। আমাদের হাইকিং এর রাস্তা এই নালা রূপী  নদীর উত্স মুখে।





থামতে থামতে ছবি তুলতে তুলতে এগোনো যাচ্ছিল বেশ।  মাঝে মাঝেই কুকুরপ্রেমিদের দেখে সিটিয়ে যাচ্ছিলাম।
খুব উচু হাইকিং না. সব মিলিয়ে হয়ত সাড়ে  তিন মাইল হবে,২৮ তলা  হবে খুব বেশি হলে। 







হাইকিং করে টরে বেজায় খিদে পেয়ে গেল।  দোকানের লোকগুলো বোধহয় বুঝেছিল এই রে ৫টা  বক রাক্ষস এসেছে। তাই চিলি চিকেনটা  শেষ হতে আর সাপ্লাই দিতে পারেনি। কপি এনে দিলো। ভাবো! কোথায় কপি কোথায় চিলি চিকেন! তাছাড়া দ্বিতীয় দফার তন্দুরি চিকেনটাও যেন একটু কম ভালো লাগলো। যাই হোক. এই সব ছোটখাটো বিপদ উপেক্ষা করে আমরা প্লেট এর পর প্লেট শেষ করে গেলাম। শেষে যখন পেট গলা সবাই প্রতিবাদ জানালো তখন খান্ত দিয়েছিলাম।
আমার ভিন্ন ভিন্ন কুইজিন  খেয়ে দেখতে ভালো লাগে। অধিকাংশই ফ্লপ শো হয় কিন্তু তাও নতুন জিনিস কি শুধু চোখে দেখে হয়, তাছাড়া 'জিভে প্রেম করে যেই জন...' সেই উদ্দ্যেশ্যে অফিস কলিগদের সাথে এক ভিয়েতনামিজ দোকানে খেতে গেছিলাম। বেশ খারাপ।  যারা নুডলস নিয়েছিলো  কিছুই খেতে পারেনি, কোনো মশলা ছাড়া সেদ্ধ নুডলস খাওয়া প্রতিভার ব্যপার(প্যাটেল না). আমারটা অনেকটা বলা যায় কাবাব আর ভাতের খারাপ ভার্সন।
ছোটখাটো জিনিস গুলো যে কি গুরুত্বপূর্ণ হয় সেগুলো কাছে না থাকলে বোঝা যায়।ফুচকা জিনিসটা খুউব প্রিয় না হলেও যখন  এর মাঝে একদিন আমাদের বাড়িতে ফুচকা পার্টি হলো বেজায় খুশী  বোধ করেছিলাম। সেটা কতটা ফুচকা আর কতটা আড্ডার কারণে কে  জানে। 


সেদিনই কি চমত্কার একটা রামধনু উঠেছিলো।  ডাবল রামধনু, পুরো অর্ধবৃত্তাকারে।

মনে হচ্ছেনা ছোটবেলায় যেমন অর্ধবৃত্ত আঁকতাম , রং পেনসিল  দিয়ে তেমনি কেউ এঁকেছে 




কয়েকদিন আগে একজনকে আনতে এয়ারপোর্ট গেছিলাম। ফিরে যাবার দিনটা চোখ বুজে দেখে নিলাম।  আহ..

19 comments:

  1. darun hoyeche Pradipta, chaliye jaao, r eto joldi joldi fire asar kotha bhebo na, tahole r blog porte pabo na! :p

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thank you Saugata Da, ওখানে ফিরলেও আশা করি ব্লগটা চালিয়ে যাব :)

      Delete
    2. This comment has been removed by the author.

      Delete
  2. klanti bhora diner seshe ek peala cha e chumuk deoar moto laglo............:-)

    ReplyDelete
  3. খুব চলে যেতে ইচ্ছে করছে ওই নালার মত কিন্তু খরস্রোতা নদীটার পাশে, গাধা কেঁচোগুলো যাদের বেশ কয়েকটা তোর পায়ের তলাতেই দেহ রেখেছে তাদের সরিয়ে সরিয়ে মাঠে নামিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে আর সারাদিন কাঁচের জানলার পাশে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে বাঁটুল দি গ্রেট পড়তে ইচ্ছে করছে।।।।দুর ছাতা এখানে বর্ষাটা যে কবে আসবে.....বিটুইন,কথা দিয়ে ছবি আঁকা ভালোই চালাচ্ছিস, চালিয়ে যা....

    ReplyDelete
    Replies
    1. tui to omni nongra , kecho hate dhoris, kothay bolbi ogulo diye mach dhorte jabi :P..... Thank you for your complement mam :)

      Delete
  4. Prochur unnoti hoyeche. aar ebar theke Ei blog r opekhai thakbo. Jara berate bhalobase, Jara khete bhalobase e blog jeno aaina r moto, koto sundor moner protifolon

    ReplyDelete
  5. এ মা, আমি যে গাড়ি চালানোটালানো নিয়ে অত কথা বলে একটা কমেন্ট করলাম সেটা কোথায় গেল? যাই হোক, এখন কম কথায় বলি, লেখাটা খুবই ভালো হয়েছে, প্রদীপ্তা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কুন্তলাদি ওটাতো অন্য পোস্ট, কমেন্টটা জ্বলজ্বল করে আছে :)

      Delete
    2. This comment has been removed by the author.

      Delete