লেখাটা শুরু করব ভেবেছিলাম বেশ কায়দা মেরে বসন্ত এসে গেছে ডায়লগ দিয়ে।তা ডেনভার এর আবহাওয়া আমার মত কাটখোট্টা লোকের কবিত্ব সহ্য করলো না। গতকাল আর আজকের ছবি দুটো দেখলেই বুঝবেন।.
আমি আদতেই একজন অস্থিরমতি মানুষ।কোনো জায়গায় বেশিদিন থাকলেই কিরকম ছটপট করি। মনে হয় কত কি দেখার বাকি রয়ে গেল। আমার মনে আছে দেশে বিদেশে পড়ে আমি কাবুল যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। খাইবার পাস পার হব প্রাণ হাতে, আব্দুর রহমান আমার জন্যে কখনো ৬ জনের খাবার বানিয়ে তার বিখ্যাত উক্তি দেবে " আরো আছে", কখনো আমি না অনাহারে থাকলে বন্দুক জোগার করে ডাকাতি করতে যেতে চাইবে। একা থাকা শুরু করে বুঝেছি ,আসলে ওই রকম জীবন পেতে গেলে ওই ভাবে জীবনটা উপভোগ করার কলিজা চাই। লাভ ক্ষতির তোয়াক্কা না করে।
এই একবছরে আমার অভিজ্ঞাতার ঝুলিটা কিছুটা হলেও বেড়েছে নিশ্চই। কত মানুষের সাহায্য পেয়েছি যা পাবার কথা না, তেমনি বাজেভাবে ঠকেছি বেশ কয়েকবার। ক্ষতির পরিমানটা কম না কিন্তু জানি আমি যদি আরো ৩০ বছর বাঁচি এই ক্ষতিটা না বরং রং বেরঙের কথা গুলো থেকে যাবে।
মাঝে মাঝে weekend এ হাইকিং এ যাই এখানে। দারুন। একবার গেছিলাম flatiron বলে একটা জায়গায়। সেই সময় জায়গাটা বরফে ঢাকা। তাতেও কিন্তু লোকজন দমেনি। জায়গাটা কলোরাডো ইউনিভার্সিটির কাছে। দল বেধে ছেলে মেয়েরা গেছে, একজন কাছের মত বরফে পা পিছলে পড়ল আর অমনি সবাই মিলে স্লিপ করা সুরু করলো ইচ্ছাকৃত ভাবে। আমি আমার কলেজ এর কথা ভাবছিলাম। বুড়ো হয়ে গেছি! আমাদের দলটা সামলে সুমলে চলল। কোনো মানে হয়! কলেজের দল তা পেলে নির্ঘাত ঠেলে ফেলতাম! যাকগে হাইকিং টা প্রায় ট্রেকিং হয়ে গেল। পায়ে চলা পথ গুলো বরফে জমে আছে, আছড়ে পড়লে পাথরে জোর লাগবে। আমি শুরুতে আর শেষে গদাম গদাম করে পরলাম। মাঝে অবশ্য আছাড় না খেয়েই হেঁটেছি।
লোকজন এর এনথু দেখে পাগল হয়ে যেতে হয়. শুধু সেবারেই নয় পরে আরো যতবারই গেছি দেখেছি, বুড়ো বুড়ির দল দৌড়াচ্ছে, বাচ্ছাকে পিঠে বেঁধে মা বাবা, হাতে কুকুর। বাপরে বাপ. আমাদের তো খালি হাতেই উঠতে দম বেরিয়ে গেছিল। কলোরাডো তে weeds লিগাল, তা তার গুনেই কিনা কে জানে এক বয়স্ক ভদ্রলোক দেখি ওই কনকনে ঠান্ডায় স্যান্ডো গেঞ্জি হাফ পান্ট পরে হেঁটে চলেছে। একটু পরে দেখি খালি গায়ে! সামিট এ পৌছে একদল ছেলে মেয়ে weeds খাচ্ছে দেখে বুঝলাম "গাঁজার গুন" .
নামার পর বরফের উপর ঠ্যাং ছড়িয়ে বসে গায়ে মাথায় রোদ্দুর মেখে পাউরুটি কমলালেবু খেতে খেতে দুপুরটা মনের মধ্যে দিব্বি এক চিলতে জায়গা করে নিল। ছোটবেলায় শীতের দুপুরে মাঠে মাঠে ঘোরা কিংবা কলেজ পালিয়ে নদীর পারে যাওয়া দুপুর কিংবা খাঁ খাঁ দুপুরে বাইক চালানোর মতই।
আর এক সপ্তাহে গেছিলাম আর একটা জায়গায়। একটু বড় দলে। বরফের উপর টিউবিং করলাম। মজা মন্দ না. এক জন বা একাধিক জন মিলে বরফের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নামা টিউব এর মধ্যে বসে. ওরা ছাড়ার সময় একটু ঘুরিয়ে দিছিল আবার ।
ওখান থেকেই আর একটা জায়গায়া গেছিলাম। লেক ছিল গরমের সময়। লোকে নৌকোবিহার করে গরমকালে। আজ সেটা এই রকম. কিরকম মরুভূমি মরুভূমি লাগছে না?
নিচের ছবির লোকটা প্যারাস্লাইডিং করছিল। আমার খুব ইচ্ছে করছিল। কিন্তু চাওয়া তো আর যায় না, আমাদের দেশ হলে ঠিক বলতাম "কাকা আমি একটু করি"?
কলোরাডো তে আর যাই হোক ইন্ডিয়ান রেস্তোরা বেজায় খারাপ। খালি ওই দিন মানে ডিলন লেক থেকে ফেরার পথে এক জায়গায় খেয়েছিলাম। ভারী চমত্কার। হিমালয়ান কুইজিন নাম. আহা খেয়ে সত্যি মন প্রাণ তর হয়ে গেছিল।
ডিলন লেক থেকেই আর একজায়গায় গিয়েছিলাম। গাছপালা ঘেরা ছোট্ট একটা নদী তির তির করে বয়ে চলেছে , এমন শ্বাসরোধকারী বরফ যা কিনা অমন মস্ত হ্রদ তাও জমিয়ে দিয়েছে , এই ছোট্ট নদীর স্রোতের মুখে হেরে গেছে। খুব মন কেমন করে এমন জায়গায় আমার। এই নদীটার জন্যে , গাছের ফাঁকে পড়ন্ত রোদটার জন্যে, সব কিছুর জন্যই।আমি নির্ঘাত গত জন্মে গাছ ছিলাম।
সেদিন আমার অফিসে একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। এদেশে সবই আমাদের উল্টো। ছেলেরা বিয়ের পর বাবা মার সাথে থাকে শুনে বেচারী আঁতকে উঠেছিল। এদের ছেলে এবং মেয়ে দুইই থাকলে মেয়েটি বাবা মার খেয়াল টেয়াল । মানে তাই বলে এক বাড়িতে থাকে এমন না. মেয়ের বাড়ির কাছাকাছি। এদের কনসেপ্টটা হলো আমার জীবন আমার জীবন আমার ছেলে মেয়ের জীবন তাদের জীবন। কেউ কারোর জীবনে হস্তক্ষেপ করবে না। যাই হোক ভদ্রমহিলা বেশ ভালো। প্রতিদিনই প্রায় দেখা হয় , গল্প হয়.
আমি নাস্তিক সে কথা সগর্বে সব সময় বলি আমি, ওকেও কোথায় কোথায় বলেছিলাম। আর ওই মহিলা হলো গোঁড়া ক্রিষ্টান যারা কিনা ইভোল্যুশন এ বিশ্বাসী না, বিশ্বাস করে আদম ইভ থেকেই মানুষ হয়েছে। বোঝো!
তো আমায় সে গুড ফ্রাইডে তে ইনভাইট করেছিল। কি জানি ভেবেছিল হয়ত ওদের চার্চে গেলে যুক্তি ভোঁতা হয়ে যাবে। আমি নতুন মানুষ এর সাথে মিশতে তাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত ভালোবাসি। আর চার্চ মন্দির মসজিদ কোথাও যেতেই আমার আপত্তি নেই। গুড ফ্রাইডের দিন জ্বরে কেতরে পরে রইলাম। বেচারী সত্যি ভালো মানুষ , বলল কোনো বাপার না আমরা পরে সানডে চার্চ এ যাব আর ডিনার এর বদলে লাঞ্চ। উনি আমায় বাড়ি থেকে পিক করে চার্চ এ নিয়ে গিয়েছিলেন, এবং পৌছে দিয়ে গেছিলেন।
চার্চ এ পৌছনোর পর বিভিন্ন মানুষের সাথে মুলাকাত কথাবার্তা মন্দ না। তারপর কুকি কফি, নাটস এর পর্বটাও বেশ. তারপর গিটার বাজিয়ে একজন পার্থনা সুরু করলো। ছোটবেলায় ব্রাহ্ম স্কুল এ পড়ার সুবাদে প্রচুর প্রার্থনা সঙ্গীত শুনেছি , বেশির ভাগ রবীন্দ্রসঙ্গীত হলেও অন্যান্য গান সুনেছি, আমার শ্যামাসঙ্গীত শুনতেও খুব ভালো লাগে। তাই এই প্রার্থনা সঙ্গীত মন্দ লাগলো না।
কিন্তু এর পরের পর্বটাই মুশকিল। বাইবেল থেকে পড়া শুরু হলো. জবাব গুলো মুখে আসছিল কিন্তু চুপ করে থাকাই দস্তুর। চার্চের মধ্যে টাওয়ার নেই, আমি বই পরা শুরু করলাম মোবাইল এ। ব্যাস আর কি বইয়ের মধ্যে ঢুকে গেলে নিশ্চিন্ত। অবশেষে তাদের বক্তব্য শেষ হলো। আবার বিভিন্ন লোকেদের সাথে আলাপ পর্ব শুরু হলো। ওদের জিভে আমার নাম শক্ত হলেও আমি কেটে ছেঁটে আমার নাম বিকৃত করা ভালবাসিনা। ওদের প্রত্যেককে আমার নাম শেষ অব্দি উচ্চারণ করেছিল। এটা কিন্তু এদের ভালো মানতেই হবে, পারেনা তা স্বীকার করে এবং পারার চেষ্টা করে.
আমার দেশ নিয়ে কোনো কথা উঠলে, সে ভয়ংকর ট্রাফিক হোক কি দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা হোক , আমি এমন ভাবে জবাব দেবার চেষ্টা করি যাতে 'হ্যা কথাটা ঠিক তবে কিনা , গরিব তো হবেই লোক সংখ্যাটা বেশি, ট্রাফিক তো ডাউনটাউন এও বেশি হয় তাই না ' এই জাতীয় কথা বলি। ঠিক ভুল জানিনা আমার দেশকে লোকে ওরে বাবা কি কষ্টে মানুষ বাঁচে চোখে দেখবে আমি সেরকম ভাবতে ভালবাসিনা। আমার দেশের অনেক অনেক ভুল ভ্রান্তি খারাপ আছে , তা বলে অন্য কেউ সেটা বলবে আমার ভালো লাগেনা। তো কথা বলতে বলতে এক মহিলা বললেন আর এক ভদ্রলোককে যে তিনি নাকি এক ভারতীয় বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছেন। অবশ্য উনি ভারতে যাননি কখনো।
লাঞ্চ এ গিয়ে আমি একটা স্যামন নিলাম আর আমার কলিগ, tammie নিল ৩ কোর্স একটা মিল , আর ওর হাসব্যান্ড নিলো একটা সালাদ।খেতে বসেও ভগবান আছে নেই নিয়ে তর্ক হলো. যারা ডারউইন এর তত্ত্বের বিশ্বাস করে না, আদম ইভ থেকে মানুষ এসেছে, বিশ্বাস করে, অলৌকিক ৭দিনে এ মহা বিশ্ব তৈরি হয়েছে বলে তাদের সাথে তর্ক করার চেয়ে অবশ্যই আমি গ্রিলড বিষ্ণু অবতারের শরনাপন্ন হব এটাই স্বাভাবিক। তাও চালিয়ে গেছি ! এদিক সেদিক কথা বলতে বলতে ভদ্রলোক বলল আমি তুমি পড়াশোনা করতে পেরেছ, তোমার কাছে টাকা আছে ভারতীয় হিসেবে তুমি লাকী। কারণ আমি শুনেছি সবাই এরকম সুযোগ পায় না. কথাটা সত্যি কিন্তু তা আমি মানব কেন. আমি বললাম তা না তোমাদের দেশেও তো হোমেলেস মানুষ আছে, এত সংখ্যক মনোরোগী ঘুরে বেরাছে যারা কিনা যে কোনো সময় বন্দুক দিয়ে তোমায় মারতে পারে সেরকমই আমাদের দেশেও কিছু সমস্যা আছে তবে এমন না যে বেশির ভাগ লোক কোনো সুযোগ পায় না, অনেকেই শূন্য থেকে শুরু করে মিলীয়নিয়ার হয়েছে। আমি জিগ্গেস করলাম তোমাদের এই যে বাবা মাকে একা ফেলে রাখো এদের মধ্যে কেউ মারা গেলে আর একজন তো ভয়ানক একা হয়ে যায়, বার হয়ে যায়, তাকে তবু তোমরা একসাথে রাখো না? তো সে বলল হেন এটা সমস্যা তো বটেই, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওরা থাকতে চায় না, এই যেমন tammie এর বাবা মা অসুস্থ , কিন্তু ওরা আমাদের সাথে থাকতে চান না. তবে সত্যি বলতে কি অনেকেই আজকাল রাখে বাবা মাকে নিজেদের সাথে, ফলে তাদের ছেলে মেয়েরাও সেটা দেখে বড় হয় আর শেখে।
আড্ডা খাব দাবার ফাঁকে কোনো ছবি তোলা হয়নি। বুঝতেও পারছেন কিসব জটিল জিনিসপত্র চল্ছিলো ,আশা করি ক্ষমা ঘেন্না করে শুধু লেখায় পরে নেবেন এবারের মত।
আমি আদতেই একজন অস্থিরমতি মানুষ।কোনো জায়গায় বেশিদিন থাকলেই কিরকম ছটপট করি। মনে হয় কত কি দেখার বাকি রয়ে গেল। আমার মনে আছে দেশে বিদেশে পড়ে আমি কাবুল যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। খাইবার পাস পার হব প্রাণ হাতে, আব্দুর রহমান আমার জন্যে কখনো ৬ জনের খাবার বানিয়ে তার বিখ্যাত উক্তি দেবে " আরো আছে", কখনো আমি না অনাহারে থাকলে বন্দুক জোগার করে ডাকাতি করতে যেতে চাইবে। একা থাকা শুরু করে বুঝেছি ,আসলে ওই রকম জীবন পেতে গেলে ওই ভাবে জীবনটা উপভোগ করার কলিজা চাই। লাভ ক্ষতির তোয়াক্কা না করে।
এই একবছরে আমার অভিজ্ঞাতার ঝুলিটা কিছুটা হলেও বেড়েছে নিশ্চই। কত মানুষের সাহায্য পেয়েছি যা পাবার কথা না, তেমনি বাজেভাবে ঠকেছি বেশ কয়েকবার। ক্ষতির পরিমানটা কম না কিন্তু জানি আমি যদি আরো ৩০ বছর বাঁচি এই ক্ষতিটা না বরং রং বেরঙের কথা গুলো থেকে যাবে।
মাঝে মাঝে weekend এ হাইকিং এ যাই এখানে। দারুন। একবার গেছিলাম flatiron বলে একটা জায়গায়। সেই সময় জায়গাটা বরফে ঢাকা। তাতেও কিন্তু লোকজন দমেনি। জায়গাটা কলোরাডো ইউনিভার্সিটির কাছে। দল বেধে ছেলে মেয়েরা গেছে, একজন কাছের মত বরফে পা পিছলে পড়ল আর অমনি সবাই মিলে স্লিপ করা সুরু করলো ইচ্ছাকৃত ভাবে। আমি আমার কলেজ এর কথা ভাবছিলাম। বুড়ো হয়ে গেছি! আমাদের দলটা সামলে সুমলে চলল। কোনো মানে হয়! কলেজের দল তা পেলে নির্ঘাত ঠেলে ফেলতাম! যাকগে হাইকিং টা প্রায় ট্রেকিং হয়ে গেল। পায়ে চলা পথ গুলো বরফে জমে আছে, আছড়ে পড়লে পাথরে জোর লাগবে। আমি শুরুতে আর শেষে গদাম গদাম করে পরলাম। মাঝে অবশ্য আছাড় না খেয়েই হেঁটেছি।
লোকজন এর এনথু দেখে পাগল হয়ে যেতে হয়. শুধু সেবারেই নয় পরে আরো যতবারই গেছি দেখেছি, বুড়ো বুড়ির দল দৌড়াচ্ছে, বাচ্ছাকে পিঠে বেঁধে মা বাবা, হাতে কুকুর। বাপরে বাপ. আমাদের তো খালি হাতেই উঠতে দম বেরিয়ে গেছিল। কলোরাডো তে weeds লিগাল, তা তার গুনেই কিনা কে জানে এক বয়স্ক ভদ্রলোক দেখি ওই কনকনে ঠান্ডায় স্যান্ডো গেঞ্জি হাফ পান্ট পরে হেঁটে চলেছে। একটু পরে দেখি খালি গায়ে! সামিট এ পৌছে একদল ছেলে মেয়ে weeds খাচ্ছে দেখে বুঝলাম "গাঁজার গুন" .
নামার পর বরফের উপর ঠ্যাং ছড়িয়ে বসে গায়ে মাথায় রোদ্দুর মেখে পাউরুটি কমলালেবু খেতে খেতে দুপুরটা মনের মধ্যে দিব্বি এক চিলতে জায়গা করে নিল। ছোটবেলায় শীতের দুপুরে মাঠে মাঠে ঘোরা কিংবা কলেজ পালিয়ে নদীর পারে যাওয়া দুপুর কিংবা খাঁ খাঁ দুপুরে বাইক চালানোর মতই।
আর এক সপ্তাহে গেছিলাম আর একটা জায়গায়। একটু বড় দলে। বরফের উপর টিউবিং করলাম। মজা মন্দ না. এক জন বা একাধিক জন মিলে বরফের ঢাল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে নামা টিউব এর মধ্যে বসে. ওরা ছাড়ার সময় একটু ঘুরিয়ে দিছিল আবার ।
ওখান থেকেই আর একটা জায়গায়া গেছিলাম। লেক ছিল গরমের সময়। লোকে নৌকোবিহার করে গরমকালে। আজ সেটা এই রকম. কিরকম মরুভূমি মরুভূমি লাগছে না?
নিচের ছবির লোকটা প্যারাস্লাইডিং করছিল। আমার খুব ইচ্ছে করছিল। কিন্তু চাওয়া তো আর যায় না, আমাদের দেশ হলে ঠিক বলতাম "কাকা আমি একটু করি"?
কলোরাডো তে আর যাই হোক ইন্ডিয়ান রেস্তোরা বেজায় খারাপ। খালি ওই দিন মানে ডিলন লেক থেকে ফেরার পথে এক জায়গায় খেয়েছিলাম। ভারী চমত্কার। হিমালয়ান কুইজিন নাম. আহা খেয়ে সত্যি মন প্রাণ তর হয়ে গেছিল।
ডিলন লেক থেকেই আর একজায়গায় গিয়েছিলাম। গাছপালা ঘেরা ছোট্ট একটা নদী তির তির করে বয়ে চলেছে , এমন শ্বাসরোধকারী বরফ যা কিনা অমন মস্ত হ্রদ তাও জমিয়ে দিয়েছে , এই ছোট্ট নদীর স্রোতের মুখে হেরে গেছে। খুব মন কেমন করে এমন জায়গায় আমার। এই নদীটার জন্যে , গাছের ফাঁকে পড়ন্ত রোদটার জন্যে, সব কিছুর জন্যই।আমি নির্ঘাত গত জন্মে গাছ ছিলাম।
সেদিন আমার অফিসে একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। এদেশে সবই আমাদের উল্টো। ছেলেরা বিয়ের পর বাবা মার সাথে থাকে শুনে বেচারী আঁতকে উঠেছিল। এদের ছেলে এবং মেয়ে দুইই থাকলে মেয়েটি বাবা মার খেয়াল টেয়াল । মানে তাই বলে এক বাড়িতে থাকে এমন না. মেয়ের বাড়ির কাছাকাছি। এদের কনসেপ্টটা হলো আমার জীবন আমার জীবন আমার ছেলে মেয়ের জীবন তাদের জীবন। কেউ কারোর জীবনে হস্তক্ষেপ করবে না। যাই হোক ভদ্রমহিলা বেশ ভালো। প্রতিদিনই প্রায় দেখা হয় , গল্প হয়.
আমি নাস্তিক সে কথা সগর্বে সব সময় বলি আমি, ওকেও কোথায় কোথায় বলেছিলাম। আর ওই মহিলা হলো গোঁড়া ক্রিষ্টান যারা কিনা ইভোল্যুশন এ বিশ্বাসী না, বিশ্বাস করে আদম ইভ থেকেই মানুষ হয়েছে। বোঝো!
তো আমায় সে গুড ফ্রাইডে তে ইনভাইট করেছিল। কি জানি ভেবেছিল হয়ত ওদের চার্চে গেলে যুক্তি ভোঁতা হয়ে যাবে। আমি নতুন মানুষ এর সাথে মিশতে তাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত ভালোবাসি। আর চার্চ মন্দির মসজিদ কোথাও যেতেই আমার আপত্তি নেই। গুড ফ্রাইডের দিন জ্বরে কেতরে পরে রইলাম। বেচারী সত্যি ভালো মানুষ , বলল কোনো বাপার না আমরা পরে সানডে চার্চ এ যাব আর ডিনার এর বদলে লাঞ্চ। উনি আমায় বাড়ি থেকে পিক করে চার্চ এ নিয়ে গিয়েছিলেন, এবং পৌছে দিয়ে গেছিলেন।
চার্চ এ পৌছনোর পর বিভিন্ন মানুষের সাথে মুলাকাত কথাবার্তা মন্দ না। তারপর কুকি কফি, নাটস এর পর্বটাও বেশ. তারপর গিটার বাজিয়ে একজন পার্থনা সুরু করলো। ছোটবেলায় ব্রাহ্ম স্কুল এ পড়ার সুবাদে প্রচুর প্রার্থনা সঙ্গীত শুনেছি , বেশির ভাগ রবীন্দ্রসঙ্গীত হলেও অন্যান্য গান সুনেছি, আমার শ্যামাসঙ্গীত শুনতেও খুব ভালো লাগে। তাই এই প্রার্থনা সঙ্গীত মন্দ লাগলো না।
কিন্তু এর পরের পর্বটাই মুশকিল। বাইবেল থেকে পড়া শুরু হলো. জবাব গুলো মুখে আসছিল কিন্তু চুপ করে থাকাই দস্তুর। চার্চের মধ্যে টাওয়ার নেই, আমি বই পরা শুরু করলাম মোবাইল এ। ব্যাস আর কি বইয়ের মধ্যে ঢুকে গেলে নিশ্চিন্ত। অবশেষে তাদের বক্তব্য শেষ হলো। আবার বিভিন্ন লোকেদের সাথে আলাপ পর্ব শুরু হলো। ওদের জিভে আমার নাম শক্ত হলেও আমি কেটে ছেঁটে আমার নাম বিকৃত করা ভালবাসিনা। ওদের প্রত্যেককে আমার নাম শেষ অব্দি উচ্চারণ করেছিল। এটা কিন্তু এদের ভালো মানতেই হবে, পারেনা তা স্বীকার করে এবং পারার চেষ্টা করে.
আমার দেশ নিয়ে কোনো কথা উঠলে, সে ভয়ংকর ট্রাফিক হোক কি দারিদ্র সীমার নিচে বাস করা মানুষের সংখ্যা হোক , আমি এমন ভাবে জবাব দেবার চেষ্টা করি যাতে 'হ্যা কথাটা ঠিক তবে কিনা , গরিব তো হবেই লোক সংখ্যাটা বেশি, ট্রাফিক তো ডাউনটাউন এও বেশি হয় তাই না ' এই জাতীয় কথা বলি। ঠিক ভুল জানিনা আমার দেশকে লোকে ওরে বাবা কি কষ্টে মানুষ বাঁচে চোখে দেখবে আমি সেরকম ভাবতে ভালবাসিনা। আমার দেশের অনেক অনেক ভুল ভ্রান্তি খারাপ আছে , তা বলে অন্য কেউ সেটা বলবে আমার ভালো লাগেনা। তো কথা বলতে বলতে এক মহিলা বললেন আর এক ভদ্রলোককে যে তিনি নাকি এক ভারতীয় বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছেন। অবশ্য উনি ভারতে যাননি কখনো।
লাঞ্চ এ গিয়ে আমি একটা স্যামন নিলাম আর আমার কলিগ, tammie নিল ৩ কোর্স একটা মিল , আর ওর হাসব্যান্ড নিলো একটা সালাদ।খেতে বসেও ভগবান আছে নেই নিয়ে তর্ক হলো. যারা ডারউইন এর তত্ত্বের বিশ্বাস করে না, আদম ইভ থেকে মানুষ এসেছে, বিশ্বাস করে, অলৌকিক ৭দিনে এ মহা বিশ্ব তৈরি হয়েছে বলে তাদের সাথে তর্ক করার চেয়ে অবশ্যই আমি গ্রিলড বিষ্ণু অবতারের শরনাপন্ন হব এটাই স্বাভাবিক। তাও চালিয়ে গেছি ! এদিক সেদিক কথা বলতে বলতে ভদ্রলোক বলল আমি তুমি পড়াশোনা করতে পেরেছ, তোমার কাছে টাকা আছে ভারতীয় হিসেবে তুমি লাকী। কারণ আমি শুনেছি সবাই এরকম সুযোগ পায় না. কথাটা সত্যি কিন্তু তা আমি মানব কেন. আমি বললাম তা না তোমাদের দেশেও তো হোমেলেস মানুষ আছে, এত সংখ্যক মনোরোগী ঘুরে বেরাছে যারা কিনা যে কোনো সময় বন্দুক দিয়ে তোমায় মারতে পারে সেরকমই আমাদের দেশেও কিছু সমস্যা আছে তবে এমন না যে বেশির ভাগ লোক কোনো সুযোগ পায় না, অনেকেই শূন্য থেকে শুরু করে মিলীয়নিয়ার হয়েছে। আমি জিগ্গেস করলাম তোমাদের এই যে বাবা মাকে একা ফেলে রাখো এদের মধ্যে কেউ মারা গেলে আর একজন তো ভয়ানক একা হয়ে যায়, বার হয়ে যায়, তাকে তবু তোমরা একসাথে রাখো না? তো সে বলল হেন এটা সমস্যা তো বটেই, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওরা থাকতে চায় না, এই যেমন tammie এর বাবা মা অসুস্থ , কিন্তু ওরা আমাদের সাথে থাকতে চান না. তবে সত্যি বলতে কি অনেকেই আজকাল রাখে বাবা মাকে নিজেদের সাথে, ফলে তাদের ছেলে মেয়েরাও সেটা দেখে বড় হয় আর শেখে।
আড্ডা খাব দাবার ফাঁকে কোনো ছবি তোলা হয়নি। বুঝতেও পারছেন কিসব জটিল জিনিসপত্র চল্ছিলো ,আশা করি ক্ষমা ঘেন্না করে শুধু লেখায় পরে নেবেন এবারের মত।
ক্ষমাঘেন্না নয়, দারুণ আরাম করে পড়লাম, প্রদীপ্তা। ছবিগুলোও চমৎকার হয়েছে।
ReplyDeleteঅনেক অনেক ধন্যবাদ কুন্তলাদি, লেখাটা পড়ার জন্য।ভালো লেগেছে জেনে খুব খুশী হলাম। :)
DeleteThis comment has been removed by the author.
DeleteBhalo hoyeche aro lekh
ReplyDeleteThank you Arnab :)
DeleteKhub valo hyeche...... (y)
ReplyDeleteThank you Sampayan
Deleteপ্রতিবার লেখাগুলো পড়তে পড়তে মনে হয় কেন এক্ষুনি শেষ করে দিলি, একলা থাকতে থাকতে তোর ভিতরের লেখক সত্ত্বাটা বেরিয়ে আসছে আসতে আসতে।,,,দুর, আর ওদেশে বসে লিখতে হয়না,এবার চলে আয় এখানে, মিস ইউ
ReplyDeleteআমিও মিস করছি খুব, কিন্তু কি আর করা... :(
DeleteChomotkar hoyeche! Aro regularly lekho.
ReplyDeleteThank you Tapabrata :)
Delete