Friday, February 20, 2015

ঘোরাঘুরি

সেদিন বলছিলাম বটে রাস্তায় কাউকে জিগ্গেস করা যায় না ঠিকানা, কথাটা পুরোপুরি সত্যি না. আমি অনেক সাহায্য অনেক লোকের থেকে পেয়েছি।কালিফর্নিয়াতে থাকার সময় আমি ছুটির দিন  হলেই একটা জলের বোতল ,বিস্কুট আর জ্যাকেট টা  ব্যাগ এ পুরে বেরিয়ে পড়তাম। আমি যে জায়গাতে থাকতাম সেখান থেকে অনেক কটা sea  beach খুব কাছেই ছিল। একবার একটু দুরে একটা beach এ গেছি। একদম  শুনশান ফাঁকা  বিচ, যাকে বলে  ভার্জিন beach , হাওয়ার  এত দাপট পায়ের  ছাপ  মুহুর্তেই মিলিয়ে যায়. ফলে মনে হয় এর আগে আর কেউ আসেনি।

 অমন ফাঁকা জায়গায় অমনি বিশালত্বের  সামনে বসে সময় খেয়াল থাকেনা। সূর্যাস্ত দেখে উঠতে গিয়ে দেখি প্রায় ৮টা বাজে। সন্ধ্যে  নেমে আসছে  দ্রুত। আমি সী  বিচ ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাস স্ট্যান্ড থেকে  বেশ খানিকটা দুরে এসেগেছিলাম ।ওই রাস্তা দিয়ে ফিরতে হলেই চিত্তির।রাস্তায় পৌছনোর আগেই অন্ধকার হয়ে যাবে। বলে রাখা ভালো সেই সময় আমার কোলকাতা থেকে আনা  স্মার্ট ফোন  কাজ করছে না। ফলে আনস্মার্ট ফোন নিয়েই কাজ চালাতে হয়।কেউ নেই আশেপাশে যে  জিগ্গেস করব কোনো shortcut আছে কিনা। বেশ খানিকটা দূরে  খালি দুটি চুম্বনরত যুবক যুবতী । এই স্বর্গীয় পটভূমিতে ওদের এত মানিয়েছে আমার মত বেরসিক ও ওদের " রাস্তা" জিগ্গেস করার কথা ভাববে না। আন্দাজে এগিয়ে গেলাম।বাস স্ট্যান্ড এ পৌছে যা ভেবেছিলাম তাই, বাস মিস করেছি, পরের বাস এর জন্যে অপেক্ষা। বসে থাকতে থাকতে দুজন মাতাল  এলো।  মেক্সিকান। মাতাল এর সাথে দর্শনের বিরাট এক সম্পর্ক। যত মাতাল তত দার্শনিক। দুজনের বক্তব্যে বোঝা গেল একজন যাচ্ছে হোটেলে কারণ বউ ঝামেলা করে মদ খেয়ে ঘরে ফিরলে, তাই খামোখা চাপ নিয়ে লাভ নেই । তাছাড়া যা মূল কথা তাতো সব দেশএ এক "কা  তব কান্তা কস্তে  পুত্র" ।তবে সমস্যা হচ্ছে তার খেয়াল নেই কোন বাস সেখানে  যায়,কারণ জায়গাটার নাম সে সঠিক মনে করতে পারছে না।   তার চেয়েও বড় সমস্যা সে কোথায় আছে সেটাও সঠিক জানে না।   গল্প শুনে সময়টা কেটে গেল ভালই। একটু ভয় ভয় যে করছিলনা বলব না, কারণ শুনেছি এখান কার ড্রাগ addict রা নাকি ডেঞ্জারাস হয়. অবশ্য এদের তেমন বিপদ্জনক বলে মনে হচ্ছিল না।  বাস এলো ।
বাস এ উঠে ড্রাইভার কে বলেছিলাম আমার নামার জায়গাটা এলে যেন বলে দেয়, সাধারণত, লোকে স্টপ রিকোয়েস্ট করে বাস থামায়। তাছাড়া announce ও করে। কিন্তু আমি তখন নতুন নতুন এসেছি, এদের ভাষায় কান তখনও সড়গড় হয়নি , তাই চাপ নিইনা, ড্রাইভারকে বলি স্টপটা বলে দিতে। তা ভদ্রলোকের সাথে এটা ওটা কথা বলতে বলতে আমি বললাম আমি আসলে কোন জায়গায় যেতে চাই. উনি আমায় বললেন যে স্টপেজে আমি নামতে চাইছি তাতে করে পরের বাস্ পেয়ে বাড়ি ফিরতে ঢের দেরী হবে বরং অন্য স্টপেজেএ নেমে যদি অন্য আর একটা বাস ধরে যাই সেটাই ভালো। সব জায়গার মত এদেশেও ড্রাইভাররা ঢের  বেশি জানে গুগল এর থেকে। উনিই বাস নম্বর বলেদিলেন। সঠিক জায়গায় নামিয়ে কোন দিকে যেতে হবে দেখিয়ে দিলেন।  ওই ভদ্রলোকের জন্যই সেবার তাড়াতাড়ি  ফিরতে পেরেছিলাম।

আরো একবার, সেবার আমি ইউনিভার্সাল ষ্টুডিও দেখতে যাব ঠিক করেছিলা। সকলেরই মোটামুটি ঘোরা  হয়ে গেছে তাই একটা ট্যুর কোম্পানির সাথে কথা বলে ঠিক করলাম। তারা একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সবাইকে নিয়ে তারপর শুরু করেন। ওইখান অব্দি পৌছব কিভাবে! আমি গুগল ম্যাপ দেখে নিয়েছিলাম যে  দুটো বাস বদলে  পৌছনো যায়. প্রথম বাস্ থেকে নেমে দেখি পরের বাসটার যে বাস স্ট্যান্ড তার কোনো অস্তিত্ব  নেই. পরের বাস্ কোথা থেকে কোন দিক থেকে আসবে কোন দিকে যাবে কিছুই বুঝলাম না।আর এখানে তো কাউকে জিগ্গেসও করা যায় না. তবু লজ্জার মাথাখেয়ে একজনকে জিগ্গেস করেছিলাম  ডিজনিল্যান্ড  কোনদিকে। কারণ আমার বাস ডিজনিল্যান্ড এর কাছাকাছি কথাও থেকে ছাড়বে জানতাম।  সে নির্বিকার ভাবে হেঁটে চলে গেল, আরো একজন দেখা যাচ্ছে, ওকে জিগ্গেস করা যাক, সে অবশ্য  দেখালো একটা দিক।যাই হোক তার দেখানো রাস্তায় হাঁটতে  শুরু করলাম। ঘড়িতে তখন ৭.৫৫।আমার বাস ছাড়বে সাড়ে আটটা।কতটা রাস্তা , কিছুই বুঝছি না.খানিকটা এগিয়ে দেখলাম এক ভদ্রমহিলা, মূল রাস্তার পাশে একটা সরু রস্তায় বাড়ির সামনে গাড়ির স্টার্ট  অন করে হয়ত কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন বা অন্যকিছু। আমি মরিয়া তখন। আটটা পাঁচ।  আমি অনেক ক্ষমা টমা  চেয়ে বললাম আমার ফোন এর জিপিএস কাজ করছে না তাই উনি যদি অনুগ্রহ  করে এই ঠিকানাটা কতদূর একটু বলে দেন।এখানে লোকজন একটু সন্দেহ করে রাস্তায় কেউ যেচে কথা বললে এভাবে। আমার ফোনটা  তাই আগেই দেখিয়েছিলাম , যদিও ওটা এদেশে আসার পর থেকে একদিনও  কাজ করেনি, তাতে কি. ফোনের মতই তো দেখতে বন্দুক বা  ছুরি  তো না। যাই হোক আমার মুখ দেখে আশা করি আমায়  নির্দোষী  মনে হয়েছিল। দেখে টেখে বললো  মাইল খানেক। মাইল খানেক হাটতে কিছু না হোক ১৫ মিন, তারপর জায়গাটা খোঁজা । কেলো  করেছে। একটা cab  কে কল করলাম। তারা বলল অন্তত ১০-১৫ মিনিট লাগবে। টিকিট  কাটা হয়ে গেছে। ভাবলাম ছুটব না কি! দরকার নেই, একে আমার ফুসফুস এত সবল না যে  আমি এক মাইল দৌড়ে চলে যাব, তাছাড়া কে জানে বাবা এখানকার লোকে চোর টোর  ভেবে গুলি  করলেই চিত্তির। 'বাস গেলে  বাস পাবি রে পাগলা, প্রাণ গেলে প্রাণ পাওয়া যাবে না'। আরে একটা ক্যাব আসছে না?আমি পুরোপুরি কলকাতার কায়দায় হাত পা ছুড়ে তাকে থামালাম। যখন পৌছলাম তখন সাড়ে আটটা।  কিন্তু বাস আছে, ছেড়ে যায়নি, সবে পরিচয় মিলিয়ে টিকিট দিছে।

বাসে  এক দম্পতির সাথে আলাপ হলো , অস্ট্রেলিয়া থেকে এসে এসেছে। ভদ্রলোক ক্যাব চালায় আর ভদ্রমহিলা কি যেন করে ভুলে গেছি। তারা প্রচুর বকবক করলো আমিও করলাম। ভাবা যায় না মশাই, ট্যাক্সি চালিয়ে ইউএসএ  ঘুরতে এসেছে, আমরা চাকরি করেও সচরাচর ভাবতে পারিনা। যাকগে সে কথা।  ইউনিভার্সাল ষ্টুডিওটা  দারুন। যারা ঘুরেছেন তারা তো জানেননি,. যারা যাননি বা জানেন না তাদের জন্য বলি, বিভিন্ন সিনেমার থিম নিয়ে রাইড , 3D, বা 4D । একা ঘোরার একটা সুবিধে হলো খাওয়া  ইত্যাদির  পিছনে বাজে সময় কম নষ্ট হয়, ফলে আমি মোটামুটি সবই কভার করে বাস এ উঠে এসে বসলাম।









ফেরার সময় বলে নাকি, যেখান থেকে তুলেছিল সেখানে নামাবে না,  বাকিদের ওই ট্যুরিজমের  হোটেল গুলোয় নামিয়ে দেবে। আমার কাছে যাহা বাহান্ন তাহা তিপ্পান্ন, তাছাড়া ভোটে  আমি কূল  পেতাম না।
বাস যখন নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো তখনো বেশ আলো আছে। এদের দেশে গরমের দিনে বেশ ভালই দেরী হয় অন্ধকার নামতে। ভালো বলতে হবে একটা বাস স্ট্যান্ড  এর কাছেই নামিয়েছিল। কিন্তু কোন বাস যাবে, কতবার বদলাতে হবে! আবার সেই একই পদ্ধতি। আমার খেলনা হয়ে যাওয়া  মোবাইলটা দেখিয়ে একজনের থেকে জেনে নিলাম, এবং ওতেই ছবি তুলে রাখলাম রুটটার। রাতে ফিরে বুঝেছিলাম 'বসুধৈব কুটুম্বম'  কথাটা কত সত্যি।



একটা প্রজেক্ট শেষ হয়ে অন্য প্রজেক্ট এ যেতে কয়েকদিন সময় লাগে, বিভিন্ন process  শেষ হতে সময় লাগে, তা আমি বেশ কয়েক  দিন সময় পেয়ে কালিফোর্নিয়া  থেকে আসার আগে  কিছু জায়গা ঘুরে নিতে পেরেছিলাম। তো একদিন অতূলনীয় সুন্দর বিচ corona - del -mar  গিয়েছিলাম।সমুদ্রের কোল  ঘেঁষে পাহাড় , নীল  জল, দুরে কেউ কেউ সমুদ্র তে সার্ফিং করছে, কেউ স্নান। শান্ত উষ্ণ একটা দিন। সমুদ্রের ধারে বসে ডলফিন দেখে উত্তেজিত হয়েছিলাম যতটা ততটাই উত্তেজিত হয়েছিলাম একটা পাগলা শিল্পী কে দেখে যে  ওই পাহাড়ের উপর থেকে রোজ আসে আর ছবি আঁকে অনকে একই দৃশ্য না ভুল বললাম একই না একই জায়গা থেকে ভিন্ন দৃশ্য দেখে একে রাখে তার ইজেল এ, আর পরের দিন সেই ছবি ছিঁড়ে ফেলে।




এরা এত লিবারেল আমার বড্ড পছন্দের।  শুনেছি নাকি প্রেমিক প্রেমিকা ময়দানে সন্ধ্যেবেলা ঘুরলে পুলিশ টাকা চায়, চুমু খেতে গেলে মরাল পুলিশ হামলা করে, বিভিন্ন রং ধারীরা বলে আমাদের সংস্কৃতি গোল্লায় যাচ্ছে, অথচ প্রাচীন কালে ভারতীয়রা  ঢের বেশী আধুনিক ছিল তার প্রমান পাওয়া যায়। সমুদ্রের তীরে  এক যুবক চিত হয়ে খালি গায়ে শুয়ে , পাশে তার কাধে মাথা রেখে তার বউ বা প্রেমিকা, আর তার চওড়া  বুকে তার একরত্তি মেয়েটা বসে বসে থাবরাছে।  নীল  আকাশ পরিছন্ন সমুদ্র আর বেলাভূমি আর এমন একটা চিরকালীন দৃশ্য মনটা ভালো হয়ে যায়।
ওদের ফেলে এগিয়ে গেলাম দেখি এক মাছশিকারী  ধ্যানমগ্ন ভাবে ফাতনার দিকে তাকিয়ে। peer  ধরে এগিয়ে খানিকক্ষণ সেই নীল জল চোখ দিয়ে ছুঁয়ে নিয়ে ফেরার পথ ধরলাম।।

11 comments:

  1. Darun likhcho Pradipta, chaliye jaao...

    ReplyDelete
  2. Darun darun..joto din jache toto porinoto hochhe tor lekha r tar sathe manansoi chobi....ami lekhar valomondo technically khub akta bujhina..tobe j lekha porte porte pata furie gele mon kharap hoye jay,aro porte iche kore ebong kobe abar bakita porte pabo sei opekkha suru hoy, amarmote setai valo lekha...sedik theke bolle ,,khuub valo hochhe..likhe ja....porer paRt er jonno mukhie roilam..

    ReplyDelete
    Replies
    1. atto bhalo bhalo kotha sune monta boddo khushi hoye galo kintu :) , bhalo legeche jene khub bhalo laglo :)

      Delete
  3. Awesome ... Great detailing ...keep up the good work .... U r doing great .

    ReplyDelete
  4. This comment has been removed by a blog administrator.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ore baba ato bhalo bhalo kotha amar jonne beshi re, aar cha er adda gulo bhulbo ki, o gulo ei bandhobhin deshe koto anandodayok ta bolar opekkha rakhe naki :)

      Delete
  5. Khub bhalo likhchis
    Narration, detailing are really good
    Keep up the good work

    ReplyDelete
    Replies
    1. আরে রূপকদা , তোমার এই কমেন্টটা দেখিনি। থ্যাঙ্ক ইউ :)

      Delete
    2. আরে রূপকদা , তোমার এই কমেন্টটা দেখিনি। থ্যাঙ্ক ইউ :)

      Delete