Thursday, February 5, 2015

নানারকম ২..

আবার অনেকদিন  পর  লিখতে  বসা  হলো।  সময় পাইনা বলব না, প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই পাই, তাও আলসেমি কুড়েমি আমায় দিয়ে কিছুই  করায়  না.
শেষ লিখেছিলাম সেই অক্টোবর এ , পুজোর পর।  মাঝে কয়েকটা মাস কেটে গেছে।  এদের দেশের  বিভিন্ন ৎস শেষ. সত্যি বলতে কি এদের তো আমাদের  মত এত আনন্দ  করার জন্য সারা বছর উৎসব নেই, হাতে গোনা কয়েকটা নিয়েই কাজ চালাতে হয়. যেমন হ্যালুইন , থ্যাঙ্কস গিভিং , ক্রিস্টমাস ইত্যাদি। এই গুলোতেই যতটা আল্হাদ করার করতে চায় আর কি. আল্হাদ বলতে অবশ্য  পরিবার এর  সাথে সময় কাটানো, বিশেষ করে শীত এর  লং উইকেন্ড গুলোতে। এখানকার লোক বেশির ভাগ তো বাবা মার সাথে থাকে না , এই সব ৎস মানে ওরা পরিবারের সাথে সময় কাটে, বা খুব কাছের বন্ধুদের সাথে। আদ্যন্ত  মধ্যবিত্ত  পরিবারে বড় হওয়া আমি , ঘরকুনো বাঙালী  মাঝে মাঝে সত্যি বুঝি না এই ব্যাপারটা।  হয়ত আমাদের দেশেও কিছু বছর পর এটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখনো যেহেতু হয়নি এখনো যেহেতু ঘরে ফিরে মাযের  হাতের খাবার, বাবার সাথে রাজনীতি বা খেলা নিয়ে তর্ক, ভাই বোনদের সাথে খুনসুটি, ভাইপো  ভাগ্না ভাগ্নির আবদার মেটানো , হা  হা করে হাসি, দুম  দাম রাগ, ঠোট ফুলানো অভিমান আর অনর্থক ভালবাসা আমার শহরকে ছেড়ে যায়নি আমি তাই এদেশটা আমার আপন হতে পারবে না, আমার সেই থেমে যাওয়া পিছিয়ে পরা  শহরটায় ফিরে যেতে চাই আমি।
আমি বেড়াতে ভালোবাসি, আমি মানুষ দেখতে ভালোবাসি তাই নতুন দেশ নতুন রাস্তা আমায় সবসময় টানে। তবে আস্তানা বদলানোর জন্যে না। দুদেশের মধ্যে  আচার ব্যবহার, রীতি নিতে অনেক আলাদা, তা নিয়ে দুঃখ বিলাস করতে আমি বসিনি। আর একটা দেশের কি সব খারাপ তাহলে এমন তরতর করে সে এগোয়! এদেশের  ডিসিপ্লিন , ভদ্রতা বোধ , professionalism  আমায় মুগ্ধ করে. কিন্তু যখন রাস্তায় পথ ভুল হলে কাউকে জিগ্গেস করতে পারিনা  'দাদা এই রাস্তাটা কোনদিকে' বলে, কারণ রাস্তায় মানুষই নেই, থাকলেও তারা উত্তর দিতে আগ্রহী নয়, gps  থাকতে একই উৎপাত  , তখন মনটা কেমন করে বইকি।
মনে আছে আমি তখন কলেজে পড়ি ,আমার ভবঘুরে স্বভাবটা তখন থেকেই বোধহয়। একবার কলেজের হটাৎ  একটা ক্লাস হয়ে অফ হয়ে গেছিল, আমি হাঁটতে  হাঁটতে পাশের  গ্রাম এ চলে গেছিলাম। বাঁকুড়ার চাঁদি ফাটা রোদ মাথায় নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাক্লান্ত  হয়ে একজনের বাড়ির কাছকাছি পৌছে জানতে চেয়েছিলাম কত দূর  আমাদের কলেজ  আর. সে আমায় বাড়িতে বসিয়ে জল দিয়েছিল, বারবার করে বলেছিল যেন দুপুরে খেয়ে যাই. এইসব আন্তরিকতা, অযাচিত ভালবাসা একটা মানুষের জীবনে না থাকলে খালি পাব  bowling  , Superbowl , নাহ আমার  পোষাবে না।


হ্যালুইন এ বেশ ভালই ঠান্ডা  পড়ে , অন্তত ডেনভার এ।  অফিস এ একটা  উৎসব উৎসব ভাব সকাল থেকেই। এই কাজ পাগলরাও কাজে মন কম আর সাজানোয় বেশি। ভারি চমত্কার সাজিয়েছিল কিন্তু। আর  খুদেদের জন্যে প্রচুর  chocolate  আর ক্যান্ডি , ট্রিক  না সবাই ওদের ট্রিট  দিতে চায় , আর ইয়ে  সত্যের খাতিরে স্বীকার করছি ওতে আমিও থাবা বসিয়েছিলাম। দুপুর বাড়তেই সবাই বাড়ি থেকে তাদের ছেলে মেয়ে দের  নিয়ে আসতে লাগলো।  অফিসে জলদস্যু থেকে সুপারম্যান সব খুঁজে পাওয়া যেতে  লাগলো ।  কেউ spiderman  তো কেউ ড্রাকুলা। ড্রাকুলার রক্তের চেয়ে ক্যান্ডির  দিকেই মন বেশি। ক্যাপ্টেন আমেরিকা চকলেট  বাঁচাতে  বেশি ব্যস্ত দেখলাম। পাগলামি করতে এত ভালবাসে  একজন  দেখি তার দশ মাস বয়েসী মেয়েকেও  কিম্ভূত সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।কাফেটেরিয়া  তে কিছু গেমিং এর ব্যবস্থা ছিল বাছাদের জন্যে, আমার খুব ইচ্ছে করছিল খেলতে কিন্তু  শিং  ভেঙ্গে তো আর বাছুরের দলে ঢোকা যায় না অন্তত অফিসে!

আসতে আসতে বেলা পড়তে লাগলো ভিড় কমতে লাগলো। একটু তাড়াতাড়ি  অফিস ফাঁকা হয়ে গেল।
আমিও বেরিয়ে পড়লাম। লার্নার্স লাইসেন্স টা  নিতে হবে.

সন্ধ্যেবেলা ডাউনটাউন এ গেছিলাম। খুব ভিড়।  বিশেষ করে পাব  গুলোর সামনে। দলে দলে লোকজন বেরিয়ে পরেছে মুখোশ পরে বা অদ্ভূত সাজপোশাক পড়ে. খানিকক্ষণ ঘুরে বেড়ালাম।মন্দ লাগলো না , বেশ অন্যরকম।








বহুদিন  থেকেই শুনছিলাম থ্যাঙ্কস গিভিং। নাকি প্রচুর offer  থাকে, বেজায় লাইন পড়ে।  আমারঅবশ্য কেনার লিস্ট সবসময়েই কম. তাও আমি গেছিলাম দোকান গুলোয়। ভিড় দেখব বলে। ভিড় হয় বটে তবে ছোট শহর বলেই কিনা কে  জানে, তেমন না, লাইন আছে কিন্তু আমাদের সেক্টর ৫ এ করুনাময়ীর  অটোর  লাইন এর মতই হবে খুউব বেশি হলে। তবে যেই না door  buster  ওপেন হলো ৮টার  সময়, কি বলব সবার মধ্যে দেখি দারুন একটা উত্তেজনা , কয়েকটা জিনিস তো চোখের পলকেই শেষ।  আমি একটা পেনড্রাইভ , মেমরি কার্ড কিনলাম খালি। একটা ল্যাপটপ কিনলে হত কিন্তু deal  তা মিস করে গেছিলাম। থ্যাঙ্কস গিভিং এর পরের দুটো দিন বড্ড বোরিং কাটল। কোথাও  যাবার প্ল্যান  করিনি। গাড়ি চালাতে পারি না. ফলে অলমোস্ট বন্দী দশা। তারমধ্যে  সেদিন পান্ডা তে খেয়ে আর সারারাত অফিস  এর কাজ করে পরেদিন পেট খারাপ!
আমার রুমমেট একটা প্রজেক্টর কিনেছিল থ্যাঙ্কস  গিভিং এ. কয়েকদিন রাতে বেশ কয়েকটা না দেখা ভালো মুভি দেখে নিলাম। আইস  এইজ  এর  সবকটা সিরিজ , ব্যাটম্যান  এইসব আর কি।





এদিকে দেখতে দেখতে পারদ নামছে।  প্রথম বার যখন ঘুম থেকে উঠে চারদিক ধপধপে সাদা চাদরে মুড়ে  গেছে  দেখলাম বাড়ি অবাক লেগেছিল। এমন দৃশ্য কখনো দেখিনি। রাস্তা, গাড়ি পাতাঝরা গাছ কথাও একটুও ফাকা নেই. জানলা দিয়ে snowfall  দেখেছি কিন্তু ককেক দিন আগে কিন্তু  তা যে এমন ভাবে ঢেকে দিতে পারে সবকিছু তা বুঝিনি তখন. সিনেমা তে লোকজন এসব দেখে অতি অভ্যস্ত তাই  আমার লেখা পরে মুচকি হাসছেন হয়ত , কিন্তু আমি তেমন আপডেটেড না ভাগ্গিস তাই বিস্য়য়  বোধটা মরে যায়নি।


ঠিক করে রেখেছিলাম এরপর যেদিন snowfall  হবে যতই ঠান্ডা লাগুক বাইরে যাব হেঁটে।  কয়েকদিন পরেই সুযোগ এলো. এক বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম আড্ডা মারতে। চা খেয়ে গল্প করতে করতে কখন দেখি চারদিক সাদা আর বেশ জোরেই স্নোফল  হচ্ছে। . ওদের নিষেধ উড়িয়ে বেরিয়ে পরলাম। হেঁটে ২ মিনিট। এইসব স্বাদ না থাকলে এদেশে জীবনটা বড্ড আলুনি হয়ে যেত....(ক্রমশ)


20 comments:

  1. Asadharan, Pradipta tumi likhe jaao, themo na, tomar chokh diye US ta dekhte darun lagche.

    ReplyDelete
  2. feeling gulo sundor express korechis. overall lekhar flow ta valo legeche amar...sudhu ekta kotha na bole parchi na...blog e deoar age banan gulor byapare ar ektu sotorko hole bhalo hoto...উত্সব, আদদ্যন্ত,মাদ্যাবিত্ত,মের,নির্ধিধায় etc boddo besi kore chokhe porlo....honest feedback dilam..karon lekha ta tor hobe mone holo

    ReplyDelete
  3. Darun laglo .. waiting for the next part .. :)

    ReplyDelete
  4. Tui boktar chaite lekhok onek better....ei kathagulo ageo sunechi tor mukhe..chobi gulo o dekhechi fb te.....aj feel korte parlam toke..missing u.....joddin na firchis evabei likhte thak plzzzz

    ReplyDelete
  5. Khub sundor hoyechhe Pradipta...amar kono idea chhilo na j tui eto sundor express korte paris..darun byapar kintu..chaliye jas :-)

    ReplyDelete
  6. খুব ভাল লাগল... আরও বেশী বেশী করে লেখ...

    ReplyDelete
  7. aro lekh, abhigyota gulo porle mone hoi k'din age amar songeo to emon hoyeche. Ekhon Denvar e kemon obosta?

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thank you Arnab Da , majhe majhe snowfall hochhe :( , tobe rod beroy motamuti beshirbhag dini :)

      Delete