Friday, April 25, 2025

ধর্ম-মৃত্যু-বাইনারি

যে কোনো সমস্যা, যে কোনো ভয় যতক্ষণ না নিজের সাথে রিলেট করা যায় সেই ভয়, সেই সমস্যা আসলে সমস্যা হয়না, সেই ভয় আসলে ভয় না, আনন্দদায়ক উত্তেজনা। যে কারণে মারামারি কাটাকাটি সিরিজ,  ভয়ের সিরিজ এত বিকোয়। ভয় দেখে আনন্দ পেতে, সে আনন্দ অবশ্য সে নিজেও স্বীকার করেনা, কিন্তু ভয়টাই সে উপভোগ করে। পেহেলগাঁও এর ইসলাম ধর্মালম্বী সন্ত্রাসবাদীদের হিন্দু ধর্মের লোক কিনা দেখে তার পর মেরেছে। যারা মারা গেছে তাদের উপর আক্রোশের কারণ কিছু হবারই না, এমনিই ইচ্ছে হল মেরে দিলাম। আবার অন্য দিক থেকে ভাবতে গেলে খুব কারণ আছে, কাশ্মীরে গত বছর দুই তিন ধরে ট্যুরিস্ট আনাগোনা বিপুল ভাবে বেড়েছে। একটা ডেটা দেখছিলাম, সম্ভবতঃ লাস্ট দুবছরের পর্যটক সর্বাধিক। মানুষ তো বিভিন্ন রকম হয়, কেউ মরা দেখলে মনে করে বাহ বাহ আজ একটা খাবারের পয়সা জুটে গেল, কেউ মরা দেখলে ভাবে এর সাথে গেলে পয়সা পাওয়া যাবে,  আবার কেউ মরা দেখলে ভাবে আহা কাদের বাড়ি খালি হয়ে গেল। বহুদিন আগে,  এক দাড়িওয়ালা বুড়ো মানুষ বলেছিলেন, 'পশ্চাতে রেখেছ যাকে সে তোমারে টানিছে পশ্চাতে'। কাশ্মীরের লোক ভালো না থাকলে, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভারতবর্ষকে নিজের বলে ভাববে কেন? কেউ ভাবে? যারা কাজ না পেয়ে বিদেশে থিতু হচ্ছে, ক্রমে সেই দেশের সিটিজেনশিপ নিচ্ছে, কেন? বিজেপি ভালো বিজেপি খারাপ, কংগ্রেস ভালো কংগ্রেস খারাপ এসব না ভেবে ডেটা দিয়ে যদি দেখি কাশ্মীরে এরকম স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ আগে দেখিনি। অর্থাৎ কাশ্মীর ভালো থাকছিল। তাই জন্যেই একটা বড় অংশ, তারা চায় শান্তি, স্বস্তি,  স্থিতিশীলতা।  তাহলে সে জায়গার স্থিতিশীলতা নাড়াতে চাইলে তাদের রোজগারের সোর্সে আঘাত করো, সোজা ট্যুরিস্টকে মারো। এবং অবশ্যই বাইনারি তৈরী করে দাও। ভারতের বহুত্ববাদে আঘাত করো। যে মুসলমান হিন্দু মারে, সে হিন্দু, ইহুদি, খ্রীশ্চান  ফুরোলে শিয়া/সুন্নি মারে, সেটা না পেলে পাঁচবারের জায়গায় চারবার নামাজ পড়ছে যে তাকে মারে, সেটা ফুরোলে পায়ের গোড়ালি দেখা গেলে মারে। কিন্তু সেসব তো পরে, আগে ঘৃনার চাষ বুনে দাও। লড়াই করে নিজেরা মরে যাক। এ কে ফর্টিসেভেনের খরচা কমুক। এবং তাই হয়েছে।

পেহেলগাঁও ম্যাসাকারের পরে আমি ফেসবুক, রেডিট, আশপাশের প্রতিবেশী, অফিস এরকম জায়গায় শুনছিলাম, দেখছিলাম। পার্স্পেক্টিভ থেকে বয়ান কেমন বদলে যায় তাও দেখা যাচ্ছিল। রেডিটে একটা পাকিস্তানের থ্রেড দেখছিলাম, দুরকম আছে, একদল একদম হুবহু আমাদের ভারতবাসীর মতোই, জাস্ট মিরর ইমেজ। "এসব ভারতের কাজ, ইচ্ছে করে করেছে যাতে পাকিস্তানকে আরো ছোট দেখানো যায়", " এসব ফলস রেড ফ্ল্যাগ",  " জল বন্ধ করবে,  ভারতকে ম্যাপ থেকে মুছে দেওয়া যাক", "টিট ফর ট্যাট আমরাও দেখিয়েছি", " কাশ্মীরিদের উপর অত্যাচারের ফল ইত্যাদি", আরেকদল   বলছে, "ভাই যুদ্ধ! সবাই কি পাগল হয়ে গেল!", " এসব কিছুই হবে না, দুদেশেই জানে অলআউট যুদ্ধ মানে কী পরিস্থিতি হতে পারে"।   বাংলাদেশ এর লোকজন, কিছু লোকের  বক্তব্য মুসলমানদের হেয় করতেই এসব করা হচ্ছে, নিজেদের লোককে বাঁচাতে পারেনা বাংলাদেশ নিয়ে বক্তব্য দেয়। কিছু লোকের বক্তব্য যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে।কমেন্ট গুলো চেনা চেনা লাগছে না? একটু দেশ আর ধর্ম রিপ্লেস মেরে দেখলে? 

ভারত বলেছে সিন্ধু চুক্তি বাতিল। রাতারাতি ওরকম নদীর জল বন্ধ করে দেওয়ার মতো ইনফ্রা ভারতের নেই। ওদিকে পাকিস্তান বলেছে শিমলা চুক্তি বাতিল, পাকিস্তানের আকাশ ব্যবহার করতে দেবেনা। এদিকে  পাকিস্তানের কোন এক মন্ত্রী বলেও ফেলেছে, ওরা আমেরিকা ব্রিটিশদের মদতে টেররিজম ফান্ডিং এন্ড সাপোর্ট করে এসেছে। ফলে বুঝতেই পারছেন,  আগামী কিছুদিন এরকম চলবে, তারপর যতদূর মনে হয় দুদেশই সমঝোতা করে নেবে। বা নিতে বাধ্য হবে। কাশ্মীর সমস্যা রয়েই যাবে। আর যে লোকগুলো এমনি এমনি,  স্রেফ বেড়াতে গিয়েছিল বলে মরে গেল, যে লোকটা তার ট্যুরিস্টকে মারতে দেবেনা বলে মরে গেল, যে লোকটা পাকিস্তানের সেনার সাথে লড়াই করতে গিয়ে মরে গেল তারা এমনিইই মরে গেল আর কি। আরও একটা কাজ অবশ্য করেছে। বেশ কিছু পোস্টে দেখছি লেখা, পাশের লোকটাকে দেখুন, মুসলমান হলে ডিল করবেন না। মানে তার থেকে কেনাবেচা করবেন না। কিছু ভিডিও বলছে, মুসলমান? তোকে মেরেই ফেলব। ঠিক এই কাজটাই কি করতে চায়নি? এদের যুক্তি নেই, ভালোবাসা নেই। এরা একদিক থেকে বলছে ভারতীয় সেনা আমাদের গর্বের, হিন্দু মুসলমান আনবেন না সেখানে। কিন্তু সে মুসলমান সেনার বাপ, মা, কাকা, ভাই, বোনও তো মুসলমান। তাহলে সেনাতে জয়েন করলে সে মুসলমানের আত্মীয়দের সাথে ডিল করা যাবে? 

একটা গল্প বলি। ইতিহাসের গল্প। এ গল্প ব্রিটিশদের, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। সে সময় লন্ডন শহরে বোমা পড়ছে যখন তখন। প্রায়ই কোনো বাড়ি নেই হয়ে যাচ্ছে, সাইরেন রোজকার সঙ্গী। এরকমই একটা সময় সাইরেন বেজেছে, সবাই শেল্টার নিয়েছে। আশেপাশের অনেক মানুষ। তা সেখানেই তারা বসে ঠাট্টা তামাশা করছে, গানবাজনা করছে। একজন সেদিন নতুন গেছে, বলছে একি! এরকম সিরিয়াস অবস্থায় এরকম করতে ইচ্ছে করছে! তাতে,  একজন বলছে তাকে, 'ওই যে মানুষটা দেখছ গান গাইছে ওর বাড়ি উড়ে গেছে কাল। কিন্তু জানোতো জার্মানি ঠিক এটাই চায়। আমাদের মরালিটি ভেঙে দিতে, আমাদের আনন্দ,  স্ফূর্তি, গান শেষ করে দিতে। আর আমরা সেটা কখনই হতে দেবনা।'
যুদ্ধ হবে কিনা জানা নেই, স্রেফ মগজধোলাই করা কিছু লোক যদি এত সহজে ঘেন্নার পার্থেনিয়াম বুনে দেয়, যুদ্ধ হলে কী করবেন?

Sunday, April 20, 2025

গান ভালোবেসে গান

কদিন আগের কথা। নববর্ষ উপলক্ষ্যে মেলা হচ্ছিলো। মেলা মানে ঠিক টিপিক্যাল মেলা না, বিভিন্ন কোম্পানি স্পনসর করেছিল, খাবারের দোকান, জামাকাপড়ের স্টল, দু চারটে হাতেরকাজের দোকান,  গাড়ি,  বাইক ইত্যাদি। আর হচ্ছিলো গান। আমরা যখন স্কুলের শেষের দিকে, কলেজ বা সদ্য চাকরিতে ঢুকেছি তখন বাংলা ব্যান্ড নিয়ে বিস্তর মাতামাতি হত। বন্ধুবান্ধব বা ভাইবোনদের আড্ডায় কোন ব্যান্ডের কী গান, কে কীভাবে গায় সেসব নিয়ে তুমুল আলোচনা হত।  স্কুলবয়সে ভালো ছেলের দল যখন এক্সট্রা কষতো, আমি হয়তো একলা ঘর শুনতাম এফেম এর চ্যানেলে। সলিটায়ার এর সুর বুঝতাম না, ভালোও লাগতো না, ভেক্টর মাথার উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে...রাতের বেলা এফেমে হাসনুহানা শুনছি। বাংলামিডিয়ম স্কুল, সেখানে বন্ধুদের কাছে 'এক ইংলিশ মিডিয়ম স্কুল..',  রিকশাওয়ালা গেয়ে খুব এলেমদার হচ্ছি। কলেজে সিনিয়দের আড়ালে গাইছি "দাদাদিদি হাত ধরে সিঁড়িতেই বসে পড়ে"। বারান্দায় রোদ্দুর এর প্রায় থিম সং হয়ে যাওয়া তো সবাই জানে। কিন্তু ভূমির কম পরিচিত কিছু গানও খুব পছন্দের ছিল আমার, যেমন জানলা খোলা সন্ধ্যেবেলা এলোমেলো শীত। হলুদ পাখি, বঁধুরে, আমি শুধু চেয়েছি তোমায় এরা সব আমাদের মুখে মুখে ঘুরতো। ভালোবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি শুনে মনে করতাম আমাদেরই গান। না সবাই ব্যান্ড ভক্ত ছিল না। সেসব ব্যান্ড ভার্সেস একক নিয়ে খুব তর্কও হত। কিন্তু যেটা বলার আমাদের কৈশোর এবং যৌবনের শুরুর সময়ে ব্যান্ড একটা বিশাল জায়গা নিয়ে আছে। প্রেমে পড়া, ধাক্কা খাওয়া, ফের প্রেমে পড়ার পুরো লুপ জুড়েই ফসিলস, চন্দ্রবিন্দু, ক্যাকটাস, পরশপাথর, ভূমি। কখনো "না হয় পকেটে খুচরো পাথর রাখতাম", কখনো " তোর হয়তো জানা নেই...তোকে ধ্বংস করতে আসছে নেমেসিস", কখনো "যেন উড়বোই..", কখনো,  " মনেতে খুশীর বান চোখেতে জল ঝরে"। 
তারপর যা হয়, ফসিলস ক্যাকটাস আর শোনাই হয়না।চন্দ্রবিন্দু প্লেলিস্ট জুড়ে থাকে। আরো বয়স বাড়লে হয়তো আরো কিছু পরিবর্তন হবে। ছোটবেলার উন্মাদনার সময়েও আমি একটা ব্যান্ডেরও পারফরম্যান্স দেখিনি। কলেজে একবার ফসিলস আসবার কথা ছিল, তারপর মারামারি ইত্যাদিতে পারফর্ম করেনি। অনেকের বিভিন্ন কলেজে বন্ধুবান্ধব থাকে, অবশ্য আমার সেসব কিচ্ছু ছিলনা, তাই কলেজে কলেজে ঘুরে ফেস্ট ইত্যাদি এসব হয়নি। তারপর পৃথিবী আরো একটু বুড়ো হল, ব্যান্ডগুলো ভাঙলো, ব্যান্ড নিয়ে উন্মাদনা কমল। মাঝে ভূমির একটা শো দেখেছিলাম, কিন্তু সুরজিৎ বেরিয়ে গেছে তখন, সেরকম আনন্দ হল কই আর! আরো কিছু বছর পার হতে যখন একসাথে খুব চন্দ্রবিন্দু শুনি কতবার ঠিক করেছি চন্দ্রবিন্দু শুনতে যাব, তা কিছুতেই আর চোরে কামারে দেখা হয় না। এই মেলায় এক বন্ধুর দৌলতে পাস মিলেছিল। এবার একটা ব্যপার আছে, যারা চন্দ্রবিন্দু শোনে কেবল, তারা অল্প নাঁকুচু মতো হয়, "এহ চন্দ্রবিন্দু উইটি, ফসিলস মানে চিৎকার খালি" এরকম ভাব। এদিকে একা একা ফসিলস শুনতে যেতে কেমন লাগে। কিন্তু, সাধু সন্ন্যাসীদের ইচ্ছে অপূর্ণ রাখে এমন সাধ্যি কই! গিয়ে দেখি আমাদের মতো বয়সী লোকজনও আছে এখনো বেশ। চারপাশে কচিকাঁচাদেরই ভীড় যদিও। মাথা ঝাঁকিয়ে গান গাইছে তারা ফসিলসের সাথে। একের পর এক, এতটা পথ পেরিয়ে, অ্যাসিড, এই একলা ঘর...শুনতে শুনতে আমি টুকটুক করে টাইমট্রাভেল করছিলাম। একাবোকা ছেলেটা নিজেকে যে খুব বড় হয়ে গেছি মনে করে তাকে নিয়ে এসে শোনাচ্ছিলাম, নিজে নির্লিপ্ত হয়ে দেখছিলাম। নাহ তার তুচ্ছ দু:খ দেখে হাসি পায়না মোটেও, আবার দু:খবোধও হয়না সেসব সময়ের জন্যে। গান, পারফর্ম্যান্স সবই তুমুল উপভোগ করছিলাম, আবার একই সাথে যেন আমি না অন্য কেউ উপভোগ করছে। ভালো বোঝাতে পারবোনা। খানিক স্কুবা করার মতো ব্যপার। জলের নীচেই আছি, কিন্তু জলের লোক নই। একটা জায়ান্ট স্ক্রীনে রূপমকে ভালো করে খুঁটিয়ে দেখছিলাম, আমার তো মনে হল না ভদ্রলোক গাঁজা, মদ খেয়ে আছেন, মানে যেমন রটনা হয় আর কি৷ তাছাড়া ধূমপায়ীদের অত দম থাকে? কী জানি, আমি টাকলা সাধু কিনা, গাঁজা খাইনা৷ 
পরের দিন ছিল চন্দ্রবিন্দুর, তবে আরেকবার যেতে হবে। অল্প সময় ছিল। পাশে একটা বাচ্ছা ছেলে খুব উত্তেজিত,  ওদিকে একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা গান শুনছে খুব ভালোবেসে। চন্দ্রবিন্দুর পর ছিল ক্যাকটাস। সিধুকে দেখে বুঝছি কত বয়স হয়েছে আমার! বাপরে বাপ কী ভয়ানক মোটা হয়েছে! গান গাইতে গাইতে জামা টেনে নামাতে হচ্ছে, ভুঁড়ি ঢাকতে। পটা ক্যাকটাসে ফিরে এসেছে আবার। মাঝে সিধু ভিআইপি জোন আর এমনি জোনের ব্যারিয়ার তুলে দিতে বলায় একটা ছেলে দৌড়ে দৌড়ে দৌড়ে এলো, চোখে চোখ পড়তেই একমুখ হাসি। হাসিটা যে কী ভালো কী বলব! মন ভালো হয়ে যায়। কত বয়স? কলেজে ঢুকেছে বা সদ্য কলেজ পাশ করেছে। এমন অনাবিল স্বচ্ছ হাসি স্রেফ এইটুকু পাওয়াতেই, যাই বলো কত্তা মন তাজা না থাকলে এ জিনিস হয়না। 
মেলার মাঠ থেকে রাস্তা পার হওয়া সহজ না। আমাদের রাজ্যে পুলিশ গার্ড রেল গার্ড রেল খেলতে ভালোবাসে।বাড়িতে হয়তো ভিডিও কল করেছে, ছেলে-মেয়ে হয়তো বায়না করেছে বাবা আজ অন্য জায়গায় গার্ড রেল বসাও প্লিজ, কাল অব্দি তো এখানেই দেখলাম। বা বৌ এর মান ভাঙায় হয়তো, "এই একটা মজা দেখবে? ব্রিজের ওঠার ঠিক মুখে একটা সরু জায়গা আছেনা? ওইখানটা দুটো গার্ড রেল বসাবো, কেমন গাড়িগুলোকে হুড়ুৎ করে ব্রেক কষে ছোটবেলার ভিডিও গেম খেলতে হয় দেখবে লাইভ"। তো এসব অসুবিধে গুলো সেদিন আর তেমন অত ছুঁতে পারছিলোনা। রিফ্লেক্স অ্যাকশনে ব্রেক, অ্যাকসিলেটর, ডান বাঁ, লুকিং গ্লাস...কিন্তু আমিটা তখনো সেই অস্থির, একা, মেলাংকলিক ছেলেটার পাশে পাশে হাঁটছে। যে মন খারাপ করতো, একা একা মাঠ জঙ্গলে ঘুরতো বা নদীর ধারে গিয়ে বসত সেই গান গুলো গাইতে গাইতে,  কিংবা আনন্দে বাথরুমে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গাইতো। সে জানেনা সেই গান সে সামনে থেকে শুনতে পাবে একদিন। জীবনের ওয়ার্মহোলটা বেশ মজার, কার সঙ্গে কখন দেখা হবে কেউ জানেনা, কিন্তু হওয়াটা অমোঘ।

Friday, April 11, 2025

গল্প নয় সত্যি

চারিদিকে নানান রকম খারাপ দেখতে দেখতে কতবার মনে হয়, ধুত্তোর, সবটাই পচে গেছে? পুরো পৃথিবীটাই গোল্লায় গেছে? প্রায়ই মনে হয় না? তবে আমার মনে হয় "এখনো প্রাণ আছে"।  এমনিতেও আমি মনে করি ভালোর সং্খ্যাটাই বেশী। তো ভালোর গল্পটা বলি। আগের বছর অক্টোবরের শেষের দিকে গিয়েছিলাম কল্পা কিন্নর। মানুষের এলাকার পর শুরু হয় দেবভূমি, কিন্নর। আমি একটু হাবা টাইপ হাঁ করা মতো আছি। তো হাঁ করা ছেলে হাঁ করে পাহাড় নদী দেখতে দেখতে কখন হারিয়ে ফেলেছি ফোন। কিংবা হারাইনি, ফোনটার ইচ্ছে হয়েছিল পাহাড়ে থাকার। আমার মতো ফুড়ুৎ করে ঘুরে চলে আসবো এমন ইচ্ছে হয়নি। ফোন বলে কি শখ সাধ নাই! তা সে না বলে ঘুরতে চলে গেল, আমিও নতুন কেনা ফোনের শোকে খানিক মুহ্যমান হয়ে রইলুম। ফোন যাওয়া মানে তো আর শুধু ফোন না, ডেটাও। পুলিশে রিপোর্ট করতে গিয়ে আরেক চিত্তির। তারা খালি বলে,  এখানে কেউ চুরি করেনা। তাদের অনেক কষ্টে বোঝাই কেউ চুরি করেছে বলে আমি সন্দেহ করিনা, আমিই কোথাও হারিয়েছি, কিন্তু যাতে আর কেউ ফোনটার খারাপ ব্যবহার না করে তাই জানাচ্ছি। পুলিশ স্টেশনটা ভারী মজার। যখন গেছি, কেউ কোথাও নেই, সব্বাই দল বেঁধে চা খেতে গেছে। থানার ল্যান্ডলাইনে ফোন করায়, ফোনের আওয়াজে ফিরলো তারা। একেবারে একটা অফিস ঘরের মতো দেখতে। অপরাধ যে হয় না তেমন এখানে,  থানার চেহারা, কাজকর্ম দেখলে মালুম পড়ে। তারপর একদিন হঠাৎ একটা ফোন আসে, " আপকা ফোন গুম হো গ্যয়া থা কেয়া?" আলাপ হয় ধীরাজের সাথে। গলার আওয়াজে অল্প বয়সী ছেলে বলেই মনে হয়। তার একটা ফোনের দোকান আছে। তার দোকানে একজন আমার ফোন এনে লক খুলে দিতে বলেছিল, ধীরাজকে। কিন্তু আমাদের ধীরাজ ১৪৫ কোটি ভারতবাসীর সেই সংখ্যাটায় পড়ে যারা বিশ্বাস করে "গলত কাম কিঁউ করে! মেরা ইনসানিয়াত কেহতা হে ইয়ে আপকা ফোন আপকো মিলনা চাহিয়ে। " সে মোবাইল অন করে আমার ফোন নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করে। খুব যত্ন করে স্পীডপোস্ট করে দেয় যাতে করে একটা আঁচড়ও না লাগে ফোনের। আর হ্যাঁ সামান্য ক্যুরিয়ার চার্জটুকু ছাড়া একটা কিচ্ছু নিতে সে অস্বীকার করে। ফোনটার ঘুরতে শখ হয়েছিল বলছিলাম না? তা তার হিমাচল ঘুরেই শান্তি হয়নি, ক্যুরিয়ারেও ম্যালা জায়গা ঘুরে তবে এসেছে। আর এই পুরো সময়টায় বারবার খোঁজ নিয়েছে উৎকন্ঠিত ধীরাজ, 'দাদা ফোন পেলে?'  
ধীরাজের দোকান সিমলায়, যাব যখন, দেখা হবে। ভালো থেকো ভাই। অবিশ্বাস, ঠক, জালিয়াতির দুনিয়ায় তোমার মতো মানুষগুলো আছে বলেই উল্কা এসে সব শেষ করে দেয়নি এখনো। হিমালয়ের এত কাছে থাকো বলেই হয়ত হৃদয়খানা এখনো এমন ঝকঝকে আছে। ভালো হোক।