Friday, September 13, 2019

ফিরতি পথে

কাল সকাল নটায় আপিস গেছি আর ফিরেছি ভোর চারটেয়। ভোর রাতের কোলকাতা যে কীইই মায়াবী কি আর বলব। রাস্তাঘাট কোনো সময়েই একদম ফাঁকা হয়না, কিছু গাড়ি কিছু বাইক থাকেই ঠিক, কিন্তু জেগে থাকা লোক প্রায় নেই হয়ে যায়, কুকুরগুলো অবদি মরার মত ঘুমোয়।

  আমার কাজ মিটে গেল পৌনে তিনটের দিকে, এমন রাতজাগা রাত তো খুব বেশী আসে না। তাই বাকিরা বেরিয়ে গেল, আমি হাঁটা লাগালাম খানিক, রাতে প্রজেক্টের পহায় ম্যালা খাওয়া হয়ে গেছে।খেতে গিয়ে দেখি কিই ভীড় কিই ভীড়। বুধবারের রাতে এত লোক সেক্টর ফাইভের রেস্তোরাঁয় ভাবা যায় না। হরেক কিসিমের লোক,  দল বাঁধা ছেলে, হুইস্কি আর তন্দুরি নিয়ে, বিয়ারের বোতল সামনে দুই কপোত কপোতি। তো সেই সব খাওয়া হজমও হবে।ওইদিকে এক একটা পাতলা অন্ধকার, মেঘ দেখা যায় আকাশে, কলসেন্টারের সামনে খালি এক মেয়ে সিগারেট ফুঁকছে। এ পাড়ায় নেড়ির প্রকোপ নেই, দু তিনটে যা আছে তারা রাতের বেলা বাঘ হয়ে যায় না। হাঁটতে হাঁটতে গোদরেজ বিল্ডিং এর পাশ দিয়ে ভেড়ির দিকে আগিয়েছি। 

এদিকে আলো কম, ঘুটঘুটে না হলেও বেশ ভালোই অন্ধকার। ইচ্ছে করছিল খুব, পাশের আলের রাস্তা ধরে যাই। সাধক মানুষ হলেও অঘোরী তো না,  মানুষের ইয়েতে অন্ধকারে পা পড়লে আনন্দ হবে না ভেবে এ যাত্রা ক্ষান্ত দেওয়া গেল। 

ঘুম চটকে গেছে, আচ্ছা এমনিই কোলকাতা পাক খেলে কেমন হয়? বাহন যখন আছেই? শুনশান রাস্তায় জলের পাইপ সারানোর কাজ হচ্ছে, কোথাও কোথাও রাস্তা সারাবার কাজও। সিগন্যাল গুলোও রাতের বেলা বেশ এক্টিভ হয়ে গেছে, সেই বিচ্ছু বাচ্ছা গুলো হয়না? দিনে ঘুমায় রাতে এনার্জেটিক হয়ে যায়? অমনি। সারাদিন তিন মিনিট লাগে যে কাজ করতে এখন দেখি দশ সেকেন্ডে হচ্ছে। 

কোলকাতায় বড় আলো মশাই। এত আলোয় খালি দেখা যায়,  মশারী টাঙিয়ে ফুটপাথে আরামে ঘুমোচ্ছে কেউ, এই তিনটেতেই রাস্তায় রিকশা বিয়ে বেরিয়েছে কেউ কেউ৷ ভিক্টোরিয়ার পরীটাকে দেখে আসলেও হয়, একা একা কেমন দাঁড়িয়ে আছে? নাকি ঘুরছে? নাকি সুযোগ পেয়ে মাঝরাত্তিরে  উড়ে গেছে, বন্ধুরা তো জ্যোৎস্না ছাড়া আসেওনা, গল্প করার খেলা করার লোক নেই। জ্যোৎস্না ছাড়া পরীদের পৃথিবীতে আসা বারন, কিন্তু কোলকাতার কালো পরী একদিন বেভুলে চলে এসেছিল। ঠিক বেভুলে না,  ভালোবেসেই, কাকে সেইই জানে,  কেন ভালোবেসেছিল সেটা অবশ্য সেও জানে না সবাইয়েএ মতই। না তাদের মেলেনি অবশ্য, কিন্তু তার আর ফেরার রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছিল। নিজেরও খানিক অভিমান ছিল, আর ছিল অনেকটা গোপন ভালোবাসা,  নিজেও জানত না সে কথা। ভালোবাসা অভিমান হয়ে জমাট বেঁধে নিজেকে ভিক্টোরিয়ার পাথরে আটকে দিল। যাব নাকি তাকেই দেখতে এই অন্ধকারে? কালো পরীর চোখ দিয়ে জল পড়ে হয়ত এমন রাতে....থাকগে যে জল মোছাতে পারিনা সে জলের সাক্ষী না থাকাই ভালো।

কাঁকুরগাছি, ধর্মতলা হয়ে গিরীশপার্ক দিয়ে ফিরে ফের রাজারহাট নিউটাউন এসেছি। এলোমেলো পাক খাচ্ছি খালি, আমার তো কোথাও যাবার নেই....

No comments:

Post a Comment