Wednesday, October 11, 2017

হাসপাতালে হরেকরকম

বাজারে এখন বসন্ত। মানে মুকুল,চুমু ইত্যাদি যেভাবে "ইনন',  ডেঙ্গুর বদলে চিকেন পক্স হলেই 'বসন্ত এসে গেছে' গেয়ে দেওয়া যেত।
যাকগে আমি তো সাধু মানুষ বসন্ত হোক কি বর্ষা কি ওনার কিই বা আসে যায়।
তো সেবার হাসপাতালে যেতে হয়েছিলো, সন্ন্যাসীদের তো অমন কত জায়গায়তেই যেতে হয়, হ্যাঁ চাইলে যোগবলে ব্যাপারটা মেটানো যেত কিন্তু অবতারদের মানুষদের মতো করেই কাজ কম্মো করতে হয়। তা সুন্দরী নার্স হাতে হাতকড়া থুড়ি শিরায় (ধমনীতেও হতে পারে মশাই আমি ডাক্তারদের পড়াশোনার ভার নিজ মাথায় গ্রহনে আগ্রহী না) ইঞ্জেকশন দেবে বলে ইজাজত চাইলো। আহাহা আমি আবার ভারী নরম মনের মানুষ, চ্যানেল মানে ইংলিশ চ্যানেল, সুন্দরী নার্স পার করতে চায়? হ্যাঁ বাছা পিন পেরেক যা প্রাণে চায় মারো, তা প্রায় যীশুর মতোই দু ডানায় পাটাতন লাগিয়ে.... প্যাঁক।
জ্ঞান ফিরলো কার ডাকে জানিনা কিন্তু কনফার্ম আমি মর্গে এসে পড়েছি, এত ঠান্ডা যখন। যাহ শালা স্বর্গে যাবোনা জানাই ছিলো তাই বলে নরকেও না হ্যাঁ মর্গে!!  মানে সিয়াইডি আর বাইশে শ্রাবনে আমায় দেখাবে টেনে টেনে!! মনের দুঃখে কাঁপছি, মরে গেছি যখন কান্নাকাটি করা মানায় না, চেঁচামেচি করাও না। হঠাৎ, আরে ওহাহ কত্তা বেশ গরম গরম আরাম হচ্ছে তো! বেশ বেশ, ভূতেদের আর যাই হোক অতিথি আপ্যায়নটা খারাপ না। সবে ভাবছি একটু কি সেবা করবো সে ফরমাশ দেবো, দেখি বেশ স্পীড নিচ্ছি! মানে কি হে? অন্যস্তরে যাচ্ছি বুঝি? বেশ বেশ,  'মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকালও মাঝে' টা ঝালিয়ে নিলুম একবার, এলিয়েন দের শুনিয়ে চমকে দেওয়া যাবে। 'তাহার পর কোথা হইতে কী হইয়া গেলো, ঋকানন্দ দেখিলেন তিনি একটি দুগ্ধফেননিভ শয্যায় শয়ান'। 
জেলের লপসী বলে একটা খাবারের কথা শুনেছি, হাসপাতালের খিচুড়ি হওয়া উচিত ছিলো। ও খেলে যা হবার কথা তাইই হলো, আমার তন্দুরী খাওয়া পেট ওই দুরাচারী সেদ্ধকে ঠাঁই দিলো না, তদ্বন্ডে বমি করে তাদের দূর হয়ে যা লক্ষ্মীছাড়ি বিড়ালিনী থুড়ি খিচুড়ি বলে বের করা গেলো।
ঝিমঝিম ভাব কমতে বুঝলাম,এটা একটা থ্রি শেয়ারিং কেবিন, পাশের পর্দা ঘেরা বাসস্থানটি একটি বৃদ্ধ ও তার দুই ভাইপো, স্ত্রী, ও আরো জনা তিনেক লোকেদের আস্তানা। এতো লোক কেন এ প্রশ্নের উত্তর পরে পেয়েছিলাম, ক্রিটিকাল কোনো কেস। তা এই ক্রিটিকাল ব্যাপারে আমার তো অবস্থা টাইট সে পরে আসছি। রিমোটে বেডটা বেশ নাড়াচাড়া করে খানিক সময় কাটলো, ঘুম আসা মাত্র একজন এসে এসে খালি প্রেশারকুকার মানে প্রেশার চেক, আরো খানিক ইঞ্জেকশন ইত্যাদি করে যাচ্ছে। হঠাৎ ঘড়ঘড়মড়মিড় শব্দে যেটুকু তন্দ্রা ভাব ছিলো তাও গেলো। কী হয়েছে! পাশের কক্ষ থেকেই আসছে কিন্তু মানে ওরে বাবা সে এক ভয়ানক আওয়াজ, কোনো মেশিন বসানো হয়েছে ওনার শরীরে তার আওয়াজের সাথে না কি জানিনা তবে আমিও ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে আছি মনে করছি। ও ব্বাবা সে আওয়াজ থামতেই দেখি বুড়োর পাঞ্জাবী গান শোনার সাধ হয়েছে। ক্রমে দিন এগোয়, পাশের ঘরের নানান জিনিস জানা যায়, চাচুর ওই সর্দির ধাতেই, কলা খাওয়া হয়, তারপর চা বিস্কুট, আদ্রক কা আচার ইত্যাদি প্রভৃতি।

ভাষা আরেক চিত্তির,পরের দিন ডাক্তার এর কাছে গেছি, বলে আরে ম্যায় তো উসদিন হয়রান হো গিয়া জনাব, এক ফোন করকে বোলা, আপকা দাদা কল কর রাহা হ্যায়। আপকা দাদা ভি আ গ্যয়া!! সাবাশি দুঁ ইয়া একবার চেকাপ করলুঁ! ফির পাতা চলা আপকা ভাইয়া থা।
ওদিকে মা রুম সার্ভিস কে গতকাল যা করেছিলো ওইটাই করতে বলছে, 'কাল যো আপ করেগা ওহি আজ করনা'। সে তো ঘাবড়ে নিজের আলজিব খেয়ে ফেলে প্রায়! বলে কি!! কাল যা করবো আজ থেকেই জানি! নেহাত মা মহিলা নাহলে নির্ঘাত কুরুক্ষেত্রের কৃষ্ণ ঠাওরাতো।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই রকম বাক্য বিন্যাসেও মা আপেল দর করে কিনেছে!

5 comments:

  1. কী সাংঘাতিক, একেবারে ডেঙ্গু! এখন শরীর ঠিক আছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাই দ্য ওয়ে, ডেঙ্গির বদলে ডেঙ্গু লিখেছ দেখে ভীষণ ভীষণ খুশি হলাম, প্রদীপ্ত।

      Delete
    2. ইয়ে না না ডেঙ্গু না,সার্জারি ছিলো। ডেঙ্গুর জন্য দিল্লী আসাটা বাড়াবাড়ি হয়ে যেত। 😊
      ভালো আছি। 😊

      Delete
    3. অ্যাঁ! দিল্লি এসেছিলে নাকি? কোন হাসপাতাল? কবে?

      Delete
    4. এখনো দিল্লীতেই, ষোলো অব্দি আছি। 😊 গঙ্গারাম হসপিটালে ছিলো,ছতারিখ।

      Delete