যাই বলো দোল দুর্গোৎসব এসব হলো উৎসব, আর উৎসব করতে লাগে জন। জন না থাকলে সে উৎসব ফাঁকা ফাঁকা। আমরা হলুম জাত অসামাজিক, পাড়ায়, অফিসে, কোত্থাও আমাদের বন্ধুর সংখ্যা বেশী ছিল না কোনোদিন। ফলে নিজেদের গালে রঙ মাখিয়ে আমোদ করি, তাইতে যে ফূর্তি হয়না তা নয়। কিন্তু যেন মন খুঁতখুঁত করে, খুব হুটপাট হুল্লোড় করতে পেলে ভালো হত। সে যেমন বন্ধুরা মিলে এক দুবার দৌড়ঝাঁপ করে রঙ খেলা হয়েছিল অমন করে৷ এখন মনে হয় জোর করে রঙ মাখানোটা অভদ্রতা কর্মসূচীতে পড়ে। তা জোর করে কিছু করাটাই খারাপ বটে কিন্তু ওই যে হুটোপুটি করে মাখানোর আনন্দটাও তো অস্বীকার করা যায়না, অন্তত বন্ধুদের ক্ষেত্রে।
আজ আশ্চর্য এক জিনিস দেখলাম, আজকাল সকালে বেশ চড়া রোদই হয়। সে রোদে জনা কুড়ি হলুদ শাড়ি,আবিরের থালা হাতে মহিলা বসন্তোৎসব করতে বেরিয়েছে। একটা টোটোতে একটা মাইক আর জনা দুচার পাঞ্জাবী পরিহিত পুরুষও আছে অবশ্য। সে যা হোক আশ্চর্য সেটা না, আশ্চর্য হল, আজকাল যেমন কথায় কথায় রিল বানাতে লোকে নেচে বেড়ায় বা ভ্লগ বানায় যত্রতত্র তেমনই একজন মহিলা ওই চড়া রোদে, একটা পুরো গান রাস্তায় নাচলেন। কারোর হাততালি না, রাস্তার কোনো পথচলতি মানুষের এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে দেখা না তাও তার উৎসাহের কম নেই! ওহ আচ্ছা ভিডিও চলছিল। তাই বলো!
এই শুরু হল, টিপটিপ বরসা পানি, উফ হোলি হায় হোলি গান, পাশেই ক্লাব! এই জোর করে গান শোনানোটা কেন এখনো অভদ্রতা কর্মসূচীর পার্ট হল না?
মফস্বলেরর বসন্তোৎসব আসে পাতায় পাতায়। বসন্তের যে নির্জন উদাসীন গাম্ভীর্য, তা যে আমাদের দু কামরার ঘরটায় বসে থেকে অফিস করতে করতে আরো টের পাই। সমস্ত জায়গাটা শান্ত হয়ে যায়, কোনো কোনোদিন হয়ত কলেজের ছেলেপুলেদের গিটারের আওয়াজ ভেসে আসে, বা কোনো কোনোদিন তাদের বসন্তোৎসবের উল্লাস। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালে দেখি ভীরু কানাইকে তাড়া করেছে তার রাধা, হাওয়ায় গোলাপি আবির উড়িয়ে, যেমন হয়ে এসেছে, যেমন হয়ে থাকে।
এসব যখন থাকেনা তখন দুপুরের দিকে হুট করে চোখ তুলে দেখি কচি কচি সবুজ পাতায় হলুদ রঙা বসন্তবৌরি এসে বসেছে, তাকে কন্ট্রাস্ট দিতেই যেন, একটা ফিঙে বসে থাকে পাশের শিমূল গাছের ডালে। শিমূল ফুল ফুটলো তারপর লাল কার্পেট বিছিয়ে ঝরেও গেল। এখন পাতাঝরার মরশুম আর পাতা গজানোর মরশুম একসাথেই চলছে। রোদের তেজ এর মধ্যেই বেশ চড়া হয়ে এসেছে, এখানকার রোদ বুকের ভেতরটা শুকিয়ে দেয়, কোনো ফালতু আর্দ্রতা থাকলে এসব অঞ্চলে এলে শুকিয়ে নেওয়া যায়। অবশ্য অভ্যেস না থাকলে নাক টাক জ্বালা করতে পারে। ঝরা পাতা পরে নীচটা ভরে থাকে, আর দুপুরের দিকে দমকা হাওয়া এসে সাফ করে মাটি বের করে। মাটির রঙ, ঝরা পাতার হলুদ রঙ, কিছু থেকে যাওয়া লাল শিমূল, আর নতুন হওয়া সবুজ পাতার দারুন এক রঙীন ছবি হয়ে যায় যেন। আমি অ্যালার্জির ভয় ভুলে হাঁ করে দেখি, রঙের উদাসীনতার এই ঘূর্ণিটা ঢুকে যায় মনের মধ্যে। আর তারপর বসন্তৎসবের বাকিটুকু সারতে জ্বরের ঘোর হয় যখন, চোখ বুজে হলুজ সবুজ লালের ওই পাকটাই দেখি।
রঙীন হোক সবার জীবন।
কেয়া বাত কেয়া বাত! প্রতিদিন হোক আরো রঙিন। দোলের শুভেচ্ছা
ReplyDeleteসরি সৌগতদা তোমার কমেন্টের রিপ্লাই অনেকদিন পর দেওয়া হচ্ছে। কোনোভাবে নোটিফিকেশন মিস করে গিয়েছিলাম।নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানালাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
Delete