চারিদিকে নানান রকম খারাপ দেখতে দেখতে কতবার মনে হয়, ধুত্তোর, সবটাই পচে গেছে? পুরো পৃথিবীটাই গোল্লায় গেছে? প্রায়ই মনে হয় না? তবে আমার মনে হয় "এখনো প্রাণ আছে"। এমনিতেও আমি মনে করি ভালোর সং্খ্যাটাই বেশী। তো ভালোর গল্পটা বলি। আগের বছর অক্টোবরের শেষের দিকে গিয়েছিলাম কল্পা কিন্নর। মানুষের এলাকার পর শুরু হয় দেবভূমি, কিন্নর। আমি একটু হাবা টাইপ হাঁ করা মতো আছি। তো হাঁ করা ছেলে হাঁ করে পাহাড় নদী দেখতে দেখতে কখন হারিয়ে ফেলেছি ফোন। কিংবা হারাইনি, ফোনটার ইচ্ছে হয়েছিল পাহাড়ে থাকার। আমার মতো ফুড়ুৎ করে ঘুরে চলে আসবো এমন ইচ্ছে হয়নি। ফোন বলে কি শখ সাধ নাই! তা সে না বলে ঘুরতে চলে গেল, আমিও নতুন কেনা ফোনের শোকে খানিক মুহ্যমান হয়ে রইলুম। ফোন যাওয়া মানে তো আর শুধু ফোন না, ডেটাও। পুলিশে রিপোর্ট করতে গিয়ে আরেক চিত্তির। তারা খালি বলে, এখানে কেউ চুরি করেনা। তাদের অনেক কষ্টে বোঝাই কেউ চুরি করেছে বলে আমি সন্দেহ করিনা, আমিই কোথাও হারিয়েছি, কিন্তু যাতে আর কেউ ফোনটার খারাপ ব্যবহার না করে তাই জানাচ্ছি। পুলিশ স্টেশনটা ভারী মজার। যখন গেছি, কেউ কোথাও নেই, সব্বাই দল বেঁধে চা খেতে গেছে। থানার ল্যান্ডলাইনে ফোন করায়, ফোনের আওয়াজে ফিরলো তারা। একেবারে একটা অফিস ঘরের মতো দেখতে। অপরাধ যে হয় না তেমন এখানে, থানার চেহারা, কাজকর্ম দেখলে মালুম পড়ে। তারপর একদিন হঠাৎ একটা ফোন আসে, " আপকা ফোন গুম হো গ্যয়া থা কেয়া?" আলাপ হয় ধীরাজের সাথে। গলার আওয়াজে অল্প বয়সী ছেলে বলেই মনে হয়। তার একটা ফোনের দোকান আছে। তার দোকানে একজন আমার ফোন এনে লক খুলে দিতে বলেছিল, ধীরাজকে। কিন্তু আমাদের ধীরাজ ১৪৫ কোটি ভারতবাসীর সেই সংখ্যাটায় পড়ে যারা বিশ্বাস করে "গলত কাম কিঁউ করে! মেরা ইনসানিয়াত কেহতা হে ইয়ে আপকা ফোন আপকো মিলনা চাহিয়ে। " সে মোবাইল অন করে আমার ফোন নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করে। খুব যত্ন করে স্পীডপোস্ট করে দেয় যাতে করে একটা আঁচড়ও না লাগে ফোনের। আর হ্যাঁ সামান্য ক্যুরিয়ার চার্জটুকু ছাড়া একটা কিচ্ছু নিতে সে অস্বীকার করে। ফোনটার ঘুরতে শখ হয়েছিল বলছিলাম না? তা তার হিমাচল ঘুরেই শান্তি হয়নি, ক্যুরিয়ারেও ম্যালা জায়গা ঘুরে তবে এসেছে। আর এই পুরো সময়টায় বারবার খোঁজ নিয়েছে উৎকন্ঠিত ধীরাজ, 'দাদা ফোন পেলে?'
ধীরাজের দোকান সিমলায়, যাব যখন, দেখা হবে। ভালো থেকো ভাই। অবিশ্বাস, ঠক, জালিয়াতির দুনিয়ায় তোমার মতো মানুষগুলো আছে বলেই উল্কা এসে সব শেষ করে দেয়নি এখনো। হিমালয়ের এত কাছে থাকো বলেই হয়ত হৃদয়খানা এখনো এমন ঝকঝকে আছে। ভালো হোক।